The News বাংলা, কলকাতা: ২৪ তম কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হবে ‘অসুখওয়ালা’। পরিচালক পলাশ দে-র ‘অসুখওয়ালা’ সুযোগ পেয়েছে এবারের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। মানুষের বহু পুরোনো একটা স্বভাবকে নিয়েই ফিল্মটি। আগামী কয়েকদিনে কলকাতার সিনেমাপ্রেমী মানুষ সেটা দেখতে পাবেন।
এখন অল্পবিস্তর ডাক্তারি অভিজ্ঞতা বোধ হয় সকলেরই আছে। এমনটাই ধারণা সিংহভাগ মানুষের। তাই সামান্য জ্বর হলে আর ডাক্তারের কাছে না গিয়ে সোজা চলে যায় ওষুধের দোকানে। গ্যাস, অম্বল, মাথা ব্যাথাতে ভরসা তখন সামনের ওষুধ দোকান। নেট দেখে ডাক্তারিতে এখন সবাই অভ্যস্ত।
অনেকসময় এর ফল হয় ভয়ংকর। তবে, কেউ টাকার অভাবে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ওষুধ দোকানের ওপর ভরসা করে থাকেন, কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত টাকার অপচয় করে নিজের পান্ডিত্য ফলানোর চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন: ভয়ংকর বিপদের মধ্যেই বিয়ে করতে গেলেন রণবীর দীপিকা
কখনও কখনও নিজের কেনা ওষুধ খেয়ে অসুখ সেরে যাচ্ছে, কখনও বা হিতে-বিপরীত। তবে হিতে-বিপরীত হলে কিন্তু রেহাই নেই ওই ওষুধ দোকানদারের। এবার এমনই এক অভিজ্ঞতাকে সামনে নিয়ে এল পরিচালক পলাশ দে-র ছবি ‘অসুখওয়ালা’।
হুগলির সিঙ্গুরের এক বহু পুরনো ওষুধের দোকানের মালিক রুদ্র। সমস্যা হল তার দোকানে প্রেস্ক্রিপশন হাতে নিয়ে আসার থেকেও বেশি আগমন ঘটে সেই সব রোগীদের যারা হাঁচলে, কাশলে, মাথা-বুকের যন্ত্রণা এবং আরও নানাবিধ রোগ দেখা দিলে দোকানে এসে দোকানিকেই ওষুধ চায়। যেটা শুধু বাংলার নয় আজ গোটা দেশের সমস্যা।
কেউ চায় আই পিল, কেউ বা আবার ভ্রূণ নষ্ট করার ওষুধও চায় এসে। এরা সহজে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পাত্র নন। রোগ নির্ণয় খরচ সাপেক্ষ। তাছাড়া ডাক্তারকে বলা মানে লজ্জা। তাই পাড়ার দোকানই মোক্ষম জায়গা। আর দোকানি রুদ্রর কী অবস্থা বলুন তো? ব্যবসার তাগিদে তাকে দিতেও হয় সেই ওষুধ। সেই যেন ডাক্তার। সবার সব রোগের চিকিৎসা তাকেই করতে হয়।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সেরা একশোয় সত্যজিতের পথের পাঁচালি
কোন রোগের জন্য কী ওষুধ দেওয়া যেতে পারে তা জানা থাকলেও ভিতরে ভিতরে সেই ব্যক্তি কী রোগ চেপে বসে আছে তা তো জানাও সম্ভব না তার। এরপর তার দেওয়া ওষুধে কাজ না হলেই এসে চড়াও হয় ক্রেতা-মহল। ওষুধে কোন কাজ হয় নি অতএব দোষ দোকানদের। মূলতঃ এই গল্পকে কেন্দ্র করেই ‘অসুখওয়ালা’ বানিয়েছেন পরিচালক পলাশ দে। তাই ‘অসুখওয়ালা : দ্য পেইন হকার’।
সিঙ্গুরের মফস্বল এলাকার ওষুধ বিক্রেতা রুদ্র ওষুধগুলির সংগে কথাও বলে। ওষুধগুলিকে সে রক্ত মাংসে গড়া মানুষই ভাবে। যারা মানুষের দুঃখ দূর করতে পারে। রুদ্রর অভিব্যক্তিতেই বোঝা যাবে ওষুধগুলি তাকে কী বলছে, এমনটাই জানালেন পরিচালক।
অ্যানিমেশনের কোনও জায়গা নেই এখানে। ওষুধ এখানে এক বড় চরিত্র। প্রোটাগনিস্ট বললেও ভুল বলা হয় না। রুদ্রর জীবনের বড় ক্রাইসিস হ্যালুসিনেশনস। তা ছাড়া, বিয়ের অনেক বছর কেটে গেলেও সন্তান আসেনি তার স্ত্রী মিষ্টির কোলে। সেটা একটা অবসাদের কারণ রুদ্রর পরিবারে। কিন্তু রুদ্রর স্ত্রী আশাবাদী। রুদ্রকে সব দিক থেকে সামলায় সে। একেবারে মায়ের মতো।
রুদ্রর চরিত্রে সায়ন ঘোষ। সায়ন মানেই কমেডি। সায়ন মানেই মজা। কিন্তু এখানে সায়ন একেবারে অন্যরকম এই প্রথম বার। আর রুদ্রর স্ত্রীর চরিত্রে স্নেহা চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়াও আছেন অমিত সাহা। সিনেমাটগ্রাফি করেছেন অমর দত্ত। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক স্কোর করেছেন ময়ূখ- মৈনাক।
আরও পড়ুন: ‘দঙ্গল’ ও ‘বাহুবলী ২’ কে টেক্কা দেবে ‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’
সম্পাদনায় সংলাপ ভৌমিক। উৎপল পাল প্রযোজিত ‘অসুখওয়ালা : দ্য পেইন হকার’- দেখা যাবে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। বেশ কিছু ফেস্টিভ্যালে ঘোরার পর মুক্তি পাবে এই ছবি। জানান পরিচালক।
রুদ্রর চরিত্রে সায়নই কেন? পরিচালক পলাশ দে জানান, “এক রিয়ালিটি শো তে ওর সাবলীল মুভমেন্ট আমাকে মুগ্ধ করে। ভীষণ ক্যামেরা ফ্রি সায়ন। রুদ্রর চরিত্র সায়ন ছাড়া হতেই পারে না। ও যে অভিনয় করছে সেটা বোঝা দায় এখানে। শুধু সায়ন কেন স্নেহাও খুব সাবলীল। বাকি পার্শ্বচরিত্র গুলিতেও অসাধারণ অভিনয় করেছেন অভিনেতারা। এখানে কাউকেই মনে হবে না যে সে অভিনয় করছে। এতটাই ন্যাচরাল সকলে।
ময়ূখ-মৈণাক করেছেন মিউজিক। থিম মিউজিক বাঁশির সুরে তৈরি। বাঁশিটি বাজিয়েছেন জাতীয় স্তরে বিখ্যাত বাঁশি বাদক নির্মাল্য হাম্পতু দে। পথের পাঁচালির বাঁশি বাদকের নাতি তিনি। সেই পুরনো বাঁশিটি বেজেছে এই ছবিতে।
সায়ন জানান, “আমি এক্সপেরিমেন্টে বিশ্বাসী। কেউ কখনও আমাকে রুদ্রর মতো চরিত্রে ভাবতে পারেন না। ভেবেছেন পলাশ দে। খুব আনন্দ পেয়েছি কাজটা করে। এই প্রথম সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে ভাবলাম অনস্ক্রিনে”।
“দর্শক আমাকে একদম অন্য ভাবে পাবেন। আমিও অবশ্য পাব আমাকে। তা ছাড়া আমি নিজের কমফরট জোনের বাইরে গিয়ে সবসময় কাজ করতে চেয়েছি। পারিনি। সুযোগও পাইনি। এবার পেলাম। খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল তাই রুদ্রর চরিত্রটা”, বলেছেন সায়ন।
আরও পড়ুন: নিক প্রিয়াঙ্কার নতুন বিলাসবহুল বাড়ির অন্দরমহলে
সারাদিন অসুখ আর ওষুধের মধ্যে কখন যেন ওষুধগুলোই তাঁর কাছে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। নিজের মনে সে ওষুধগুলোর সঙ্গে বাক্যালাপ করতে থাকে সায়ন বা রুদ্র। ওষুধ নিজেই জীবন্ত হয়ে তার ব্যর্থতা, সফলতা জানায় রুদ্রকে। এরইমধ্যে ঘটে যায় আর একটি দুর্ঘটনা।
ভুল ওষুধের কারণে একজন খদ্দেরের মৃত্যু হয়। যথারীতি তার দায় এসে পড়ে দোকানদার তথা রুদ্রের ওপর। এরপর পারস্পরিক চাপে রুদ্রের দোকান বন্ধ হতে বসে। পড়ে অবশ্য জানা যায় ওই খদ্দেরের নিজের ভুলেই এমন ঘটনা।
এতকিছুর মধ্যে রুদ্র আরও ওষুধের হ্যালুসিনেশনে চলে যায়। এই অবস্থা থেকে কীভাবে বেরোবে রুদ্র? মিষ্টি কী পারবে রুদ্রকে এই হ্যালুসিনেশন থেকে বের করতে। কীভাবে কাটবে রুদ্র-মিষ্টির দাম্পত্যের জট? এসব জানতে হলে অবশ্যই দেখতে হবে পলাশ দে-এর ছবি ‘অসুখওয়ালা’। ২৪ তম কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘অসুখওয়ালা’ দর্শকদের কতটা মুগ্ধ করতে পারে এখন সেটাই দেখার।