নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটে আর পড়াবেন না ‘দেশদ্রোহী’ প্রফেসর’

642
Image Source: Google

আহমেদাবাদ: ‘গেরুয়া সংগঠন’ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ তাঁকে Anti National বা দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে এবং তাকে রাজ্যছাড়া করার দাবি তুলেছে। আর তাই গুজরাটের আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেন না শিক্ষাবিদ, প্রফেসর রামচন্দ্র গুহ।

অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ তাঁকে Anti National বা দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে এবং তাকে রাজ্যছাড়া করার দাবি তুলেছে। তাতে প্রতিবাদ করে নি কোন রাজনৈতিক সংগঠন বা প্রশাসন বা বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকার। তাঁকে নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি পরিচালিত ছাত্র সংগঠন।

Image Source: Google

আর তাই প্রফেসর হিসাবে আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসাবে যোগ দিলেন না ঐতিহাসিবিদ রামচন্দ্র গুহ। শুধু তাই নয়, বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ টুইট করে সেই খবর জানিয়েছেন। এবং ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘একদিন মহাত্মা গান্ধীর গুজরাটে তাঁর আদর্শ আবার নিশ্চয়ই ফিরে আসবে’।

আরও পড়ুনঃ মোদীর ভারতে সর্দার প্যাটেলের রেকর্ড ভাঙবে ছত্রপতি শিবাজীর মূর্তি

রামচন্দ্র গুহের টুইটের পর হইচই পরে গেছে দেশ জুড়ে। ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ থেকে আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরাও।

Image Source: Google

দেশজুড়ে যখন বুদ্ধিজীবীদের ধরপাকড় চলছে তখন এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। তিনি বলেন, এই সময় যদি মহাত্মা গান্ধী বেঁচে থাকতেন, তবে তাকেও গ্রেফতার করত নরেন্দ্র মোদী সরকার।

আরও পড়ুনঃ জম্মু কাশ্মীরে উগ্রপন্থীদের টার্গেট বিজেপি নেতারা

সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজকে গৃহবন্দী করে রাখার ঘটনারও তীব্র নিন্দা করেন রামচন্দ্র গুহ। তখন তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধীকেও ছাড়ত না বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। তাকেও সমাজকর্মী ও মাওবাদী ঘনিষ্ঠ বলে আদালতে নিয়ে যাওয়া হত বলেই অভিমত ছিল তাঁর।

Image Source: Google

মহাত্মা গান্ধীর জীবনীকার রামচন্দ্র গুহ তখন বলেন, সুধা ভরদ্বাজের এই পরিস্থিতি দেখলে ফের আইনজীবীর পোশাক পড়তেন মহাত্মা গান্ধী। আদালতে দাঁড়িয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। দেশে ভয়াবহ অচলাবস্থা চলছে বলে এই পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন এই প্রবীণ ইতিহাসবিদ।

আরও পড়ুনঃ অসমে উগ্রপন্থী সংগঠনের গণহত্যা

তার পরেই বিজেপি সংগঠনগুলি এই প্রবীণ শিক্ষাবিদকে দেশদ্রোহী বলে ঘোষণা করে দেয়। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ তাঁকে Anti National বা দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে এবং তাকে গুজরাট ছাড়া করার দাবি তুলেছে। বিজেপি পরিচালিত সবকটি সংগঠন তাঁর গুজরাটের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেবার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে।

Image Source: Google

আর এই ঘটনার পরই গুজরাটের আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর পদে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত বাতিল করলেন রামচন্দ্র গুহ। এবং লিখলেন, ‘একদিন মহাত্মা গান্ধীর গুজরাটে তাঁর আদর্শ আবার নিশ্চয়ই ফিরে আসবে’।

আরও পড়ুনঃ তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে তৃণমূল নেতাদেরই শাস্তির দাবীতে পোস্টার

অক্টোবরের ১৬ তারিখে, আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় রামচন্দ্র গুহকে শেরেনিক লালভাই চেয়ার প্রফেসর অফ হিউম্যানেটিস পদে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গান্ধী উইন্টার স্কুলের ডিরেক্টর পদে নিয়োগপত্র দেয়। ১৯ তারিখে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ রামচন্দ্র গুহের এই নিয়োগ নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় ও প্রতিবাদপত্র জমা দেয়।

Image Source: Google

তারপরেই, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রবীণ শিক্ষাবিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে এখনই যোগ না দিয়ে ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে যোগ দিতে বলে। তাতেই ক্ষুব্ধ হন রামচন্দ্র গুহ। তারপরেই তিনি টুইট করে গুজরাটে শিক্ষকতা করব না বলে জানিয়ে দেন।

তবে, আহমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর সঞ্জয় লালভাই এই নিয়ে মুখ খুলতে চান নি। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফ থেকেও এই নিয়ে মুখ খোলেন নি কেউই। তবে বিশিষ্ট এই ইতিহাসবিদকে নিয়ে ভারতের ইতিহাসে যে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় লেখা হল, তা বলাই যায়।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন