The News বাংলা: সোমবার সকালে ছত্তিসগড় বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই পর্বে রাজ্যের ৮টি মাওবাদী অধ্যুষিত জেলার মোট ১৮টি আসনে ভোট নেওয়া হচ্ছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হয়েছে।
৯০ আসনের ছত্তিসগড় বিধানসভার এই নির্বাচনে মোট ১,২৯১জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের আগের দিন ও সোমবার সকালেও ফের মাওবাদীদের বিস্ফোরণ ঘটে রাজ্যে।
মাও আতঙ্ক মাথায় নিয়েই, সোমবার সকাল থেকে প্রথম দফায় বিধানসভা ভোট শুরু হল ছত্তিশগড়ে। মাওবাদী প্রভাবিত আটটি রাজ্য দিয়েই শুরু ভোটগ্রহণ। ভোটের আগেও একমাসে তিনবার মাওবাদী হামলা ঘটায়, ভোটের আগে কড়া নিরাপত্তার মোড়কে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজ্য।
আরও পড়ুনঃ সমালোচনার মধ্যেই রেকর্ড আয়ের লক্ষ্যে মোদীর ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’
প্রথম দফাতেই মাওবাদী প্রভাবিত আট জেলার ১৮টি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। বস্তার, কাঁকের, সুকমা, বিজাপুর, দান্তেওয়াড়া, নারায়ণপুর, কোন্দাগাঁও, রাজনন্দগাঁও— এই আট জেলায়ই মাওবাদীদের প্রভাব ব্যাপক হারে বিস্তৃত। সেই আট জেলাতেই সোমবার চলছে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া।
আট জেলায় কমপক্ষে এক লক্ষ নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে আধাসেনা, রাজ্য পুলিশ, সিআরপিএফ, বিএসএফ, ইন্দো তিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ ফোর্স।
সেই নিরাপত্তার ফাঁক গলেই ভোটের আগের দিন ও সোমবার সকালেও ফের বিস্ফোরণ ঘটালো মাওবাদীরা। সোমবার দান্তেওয়ারায় একটি ভোটকেন্দ্রের খুব কাছেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে মাওবাদীরা।
আরও পড়ুন: সুলতানকে নিয়ে বিজেপির বিরোধীতার মধ্যেই টানাপোড়েন কংগ্রেস-জেডিএসের
বি জে পি-কংগ্রেসের পাখির চোখ ছত্তিশগড়ে এই বিধানসভা নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বি জে পি চতুর্থবারও এই রাজ্য দখলে রাখতে বদ্ধপরিকর, আর কংগ্রেস পনেরো বছর পর ফের ফিরতে চাইছে ক্ষমতায়। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই বারবার আক্রমণ হানছে মাওবাদীরা। আগেই ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছে তারা।
মাওবাদীরা ছত্তিশগড়ে ভোট বয়কট করার হুমকি দিলেও ভোট প্রক্রিয়া থেমে থাকেনি। তারপরই গত দুসপ্তাহে এ নিয়ে চারটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটালো মাওবাদীরা। প্রাণহানি হয়েছে ১৩ জনের। রবিবারও আইডি বিস্ফোরনে এক বিএসএফ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: দলকে লজ্জায় ফেলে ঘুষ কান্ডে জেলে বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী
আই জি পি (রায়পুর রেঞ্জ) রবিবার জানিয়েছে, রবিবার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বি এস এফ)-র জওয়ানরা ভোটের আগে কাঁকের জঙ্গলে অভিযানে বেরন। মাওবাদীরা জঙ্গলের ভিতরেই বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল। আচমকা তা ফেটে বিস্ফোরণ ঘটলে গুরুতর জখম হন মহেন্দ্র সিং নামে ওই জওয়ান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয় তাঁর।
রাজ্যে ভোট সংক্রান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এই নোডাল অফিসার জানান, বিস্ফোরণের পরই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়েছে। মাওবাদীদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হলেও রবিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আরও পড়ুন: Exclusive: বিজেপি কর্মীদের খুনে বিজেপি সমর্থকরাই গ্রেফতার
অন্যদিকে, বিজাপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে এক মাওবাদীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, বেদরের জঙ্গলে এসটিএফ ফোর্স, মাওবাদী বিরোধী অভিযানে গেলে শুরু হয় গুলির লড়াই।
বেশ কিছুক্ষণের এই গুলির লড়াইয়ে প্রাণ হারান এক মাওবাদী। ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি রাইফেল উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এই ঘটনায় আরেক মাওবাদীর মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছে। তবে এদের পরিচয় জানা যায়নি রবিবার রাত পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: টি ২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হেলায় হারাল ভারত
ভোটের দিন গুলিতে আরও বড় নাশকতার আশঙ্কা করছে নিরাপত্তা বাহিনী। পুলিশ জানিয়েছে, এসকর্ট করে ভোটকর্মীদের সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। শনিবার কমপক্ষে সাড়ে ছ’শোজন ভোটকর্মী প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছেছেন। রবিবার পাঠানো হয়ে আরও এক দলকে। মাওবাদীদের আক্রমণ প্রতিহত করতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আকাশপথে নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছে বায়ু সেনা এবং বি এস এফ-এর হেলিকপ্টার। জওয়ানদের পায়ে হেঁটে টহলদারি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, গত দশ দিনে বস্তার ও রাজনন্দগাঁও থেকে ৩০০ বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
আরও পড়ুন: ভারতে আরও বড় ‘প্রাণঘাতী’ ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা
গত বৃহস্পতিবার দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদীদের বিস্ফোরণে প্রাণ হারান এক সিআইএসএফ জওয়ান সহ পাঁচজন। জওয়ানরা বাজার করে আকাশনগরে তাঁদের ছাউনিতে ফিরছিলেন। পাহাড়ি রাস্তার এক বাঁকে জওয়ানদের বাস লক্ষ্য করে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা।
বেসরকারি ওই বাস জওয়ানদের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনের জন্য বাইলাডিলা খনি এলাকায় নিয়োগ হয়েছিলেন এই জওয়ানরা। তাঁদের মধ্যেই একজনের বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়। বাসচালক, খালাসি, সাফাইকর্মী এবং আরও এক ব্যক্তিও প্রাণ হারান।
আরও পড়ুন: ‘মুসলিম’ নাম বদলে ‘রামরাজ্য’ আনতে উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
তার আগে গত ৩০শে অক্টোবর এই দান্তেওয়াড়াতেই ভোটের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মাওবাদীদের গুলিতে প্রাণ হারান দূরদর্শনের চিত্র সাংবাদিক অচ্যুতানন্দ সাউ। আরানপুরে এই ঘটনায় মৃত্যু হয় তিন পুলিশ কর্মীরও।
তার তিনদিন আগে বিজাপুরে মাওবাদীরা সি আর পি এফ-এর বুলেট প্রতিরোধক গাড়ি বাঙ্কার বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়। প্রাণ হারান চারজন জওয়ান। সেই বিস্ফোরণে জখম হন আরও দুজন।
বি জে পি শাসিত ছত্তিশগড়ে ৯০ আসনের বিধানসভা নির্বাচন হবে দুদফায়। প্রথম দফায় সোমবার ১৮ টি আসনে ভোট নেওয়া হচ্ছে। বাকি ৭২টি আসনের ভোট নেওয়া হবে দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামী ২০শে নভেম্বর। ভোট গণনা ও ফল প্রকাশ হবে আগামী ১১ই ডিসেম্বর।
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটে আর পড়াবেন না ‘দেশদ্রোহী’ প্রফেসর’
এদিকে, ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচন দিয়েই পাঁচ রাজ্যে ভোট প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। মধ্য প্রদেশ ও মিজোরামে আগামী ২৮শে নভেম্বর এবং রাজস্থান ও তেলেঙ্গানায় ৭ই ডিসেম্বর ভোট হবে। ৫ রাজ্যের এই ভোটকে আগামী লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল বলেই দেখা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।