শিলিগুড়িঃ শীতকালিন পর্যটন মরসুম শুরু হতে না হতেই শিলিগুড়ির সাফারি পার্কে ঘটে গেল এক দুঃখজনক ঘটনা। মৃত্যু হলো এক ব্যাঘ্র শাবকের। মৃত শাবকটির নাম ইকা। শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে মৃত্যু হলো শিলার ছোট সন্তান ইকার। সাফারি পার্ক সুত্রে খবর, গত কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিল ওই শাবকটি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতার নামকরণ করা বাঘের মেয়ের অকালমৃত্যু হওয়ায় নড়ে চড়ে বসেছে সব মহল।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের জনবহুল স্টেশনেও কি লুকিয়ে আছে বিপদ
সাফারি পার্ক সুত্রে জানা গিয়েছে, পার্কে থাকা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শীলা চলতি বছরের গোড়ার দিকে তিনটি কন্যা শাবক প্রসব করেছিল। সেই তিন শাবকের কিকা, রিকা, ইকার মধ্যে, শীলার তৃতীয় সন্তান অর্থাৎ ইকার মৃত্যু হয় মঙ্গলবার সকালে। সুত্রের খবর, গত কয়েক দিন আগে তিনটি শাবক খেলা করছিল ক্রলের মধ্যে। সেইসময় পেছনের পায়ে চোট লাগে ইকার।
সেইসময় থেকেই একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছিল সে। এরপর বিষয়টি লক্ষ করে পার্ক কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গেই ইকার চিকিৎসা শুরু করে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ক্রলে এসে বনকর্মীরা দেখেন যে, মৃত্যু হয়েছে ইকার। এই ঘটনা চাউর হতেই সাফারি পার্কে কিছুটা শোকের আবহ তৈরী হয়। অন্যদিকে শীতকালিন পর্যটন মরসুমে একসাথে তিন, তিনটি ব্যাঘ্র শাবক দেখতে না পাওয়ায় একটা চাপা হতাশার সৃষ্টি হয় পর্যটকদের মধ্যেও।
আরও পড়ুন: বাজপেয়ীর হাতে শুরু চীনা ব্যবসা বাংলায় শেষ মোদীর আমলে
এদিকে বেঙ্গল সাফারি পার্কের গভেষক ও বায়োলজিস্ট আদিত্য মিত্র জানান, কিকা, রিকা, ইকা তিনটি শাবক একসাথে খেলতে গিয়ে ইকা পিছনের পায়ে চোট পায়। পার্কে কর্তব্যরত ডাক্তারের পাশাপাশি দার্জিলিং থেকে আরও দুজন পশু চিকিৎসককে এনেও ইকার চিকিৎসা চলে, দেওয়া হয় ব্যথা নিবারনকারী ওষুধও।
কিন্তু মঙ্গলবার আর ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ব্যাঘ্র শাবক ইকা মারা যায়। আদিত্য মিত্র আরও জানান, সাধারণত পশুদের ক্ষেত্রে সব শেষে জন্মানো সন্তানের ইমিউন পাওয়ার অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রকৃতির সাথে লড়াই করার ক্ষমতা একটু কমই থাকে। এক্ষেত্রেও তৃতীয় শাবকটির ইমিউন পাওয়ার কম ছিল, সেই কারনেই চোটের আঘাত সহ্য করতে না পেরে তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবারই তার ময়নাতদন্ত করে দাহ করা হবে। যেহেতু বেঙ্গল সাফারি, সিডিউল ওয়ান থ্রিসিস অ্যাক্টের মধ্যে পড়ে, সেই কারনেই তিনজন ডাক্তারের উপস্থিতে পার্কের ল্যাবরেটরিতেই ময়নাতদন্ত করা হয়। এই অ্যাক্টের তালিকাভুক্তদের পুড়িয়ে নষ্ট করার নিয়ম নেই, তাই কবর না দিয়ে ইকাকে দাহ করা হবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতীয় ক্রিকেটারদের দাবি ‘কলা আর বউ’
অন্যদিকে, বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ জানান, কখনও তিনটি বাঘ্রশাবক একসাথে জন্মালে বাঁচে না। বিভিন্ন বাঘ বিশেষজ্ঞরা এমনটাই বলে থাকেন। তবু তিনটিকেই বাঁচানো কে আমরা একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। মাঝখানে একটি বাচ্চা মরনাপন্য অবস্থায় ছিল। তাকে স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করা হয়। সাফারি পার্কের কর্মীরা ২৪ ঘন্টা তাদের নজরে রাখে। এমনকি পার্কে সার্জেনও রয়েছে। মাঝে আর একটি বাচ্চারও অবস্থা ভাল ছিল না। তাকেও চিকিৎসা করে সুস্থ করা হয়। কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হল না।
প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই চ্যালেঞ্জে কাজ হল না, বলে আক্ষেপ করেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের স্নেহ ও ভালবাসার ব্যাঘ্র শাবকের মৃত্যুর খবর ইতিমধ্যেই তাঁর কাছে পৌঁছালেও, সে ব্যাপারে এখনও কোনো কথা হয় নি বনমন্ত্রীর, বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: রহস্যভেদ করতে সূর্যের সবচেয়ে কাছে ‘পার্কার সোলার প্রোব’
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের পর্যটনকে চাঙ্গা করতে বেঙ্গল সাফারি পার্ক তৈরি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেইমত হাতি, চিতা, কুমির সহ অন্যান্য বন্য প্রানীর পাশাপাশি দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার এই পার্কে এনে ঢেলে সাজানো হয়। তাদের মধ্যে স্ত্রী বাঘটিরই এই তিনটি কন্যা সন্তান হয়।
আর এই তিন ব্যাঘ্র কন্যার নাম রেখেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ মত তিন জনের নামকরন হয় কিকা, রিকা ও ইকা। চলতি বছরের মে মাস নাগাদ সাফারি পার্কে এই তিন সন্তান প্রসব করেছিল শিলা নামে বাঘিনী। গত আগষ্ট মাসেই নামকরন করেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ট কন্যার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘিরে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পার্ক সহ গোটা বনবিভাগে।