উত্তর কলকাতার যৌনকর্মীরা এখন যথেষ্ট সচেতন নিজেদের ভোটাধিকার নিয়ে; ভোটাধিকারের মাধ্যমে নিজেদের দাবিদাওয়া আদায় না হলে যৌনকর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে ‘নোটা’তে এই ঘোষণা করেছে কলকাতার যৌনকর্মীরা।
ভোটের সময় সব রাজনৈতিক নেতারা ভোট চাইতে আসেন যৌনকর্মীদের কাছে; তবু কোনো দলই প্রতিশ্রুতি পালন করে না; তাদের চিন্তাভাবনায় জায়গা হয় না যৌনকর্মীদের ভালোমন্দের; তাও ভোট দেন ওরা বছর বছর; কিন্তু এবার তারা নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সচেতন।
তারা বুঝে গেছেন; নিজেদের কথা তুলে ধরতে হবে নিজেদেরই; না হলে সব দলই তাদের ভোট নিয়ে শুধু ফায়দা তুলে যাবে; সোনাগাছি চত্বরের কোহিনূর বেগম এখন জোর গলায় বলতে পারেন; শ্রমিকের সম্মান চান তাঁরা। আর অসম্মানের জীবন কাটাতে চাননা তাদের কেউই।
আরও পড়ুনঃ জয় শ্রী রাম বলায় গলার নলি কাটার হুমকি দিলেন তৃণমূল নেতা
গত ছাব্বিশ বছর ধরে কোহিনূর রয়েছেন এই পেশায়; তাদের জন্য যে দল কাজ করবে; ওঁরা তাদেরই পাশে দাঁড়াবেন। আর প্রতিশ্রুতি নয়; এবার নিজেদের দাবি ছিনিয়ে আনতে তৎপর ডলি সাহা; অবেদা বিবিরাও; তাঁদের চাই সামাজিক সম্মান; আর সে জন্য বেশ লড়ছেন ওঁরা; কিন্তু বাকি শহর এগোলেও তাঁদের ছবি কিছুই পাল্টায় না।
তারা জানেন যে তারা অপরাধী নয়; কারও ক্ষতিও করছে না তারা; ডাক্তার নার্স ইঞ্জিনিয়ার আইনজীবীরা যেমন নিজেদের রকমের পরিষেবা দেন; ঠিক তেমনই দিয়ে থাকেন যৌনকর্মীরা; শ্রমের বিনিময়ে উপার্জন করার পরেও যৌনকর্মীদের কেন অপরাধী বলা হবে এই প্রশ্নের মুখে সমাজকে দাঁড় করিয়েছেন তারা।
এবার তাই রুখে দাঁড়াবার পালা; রাজনৈতিক নেতারা এ ভাবে চলতে থাকলে তা আর মেনে নেওয়া হবে না; যৌনকর্মীরা আর অসম্মানের ভয়ে মুখ বুজে থাকতে রাজি নন; তাতে যে কোনো লাভ হয় না; তা তারা দেখে নিয়েছেন; বহু বছর ধরে সমাজের রক্ষক থেকে সমাজবিরোধী; নানা তরফের অত্যাচার সয়ে চলেছেন ওঁরা।
আরও পড়ুনঃ নিজের লোকসভা ভোটের দিন বেলা অব্দি ঘুমিয়ে মানুষের সেবা করার উদ্যোগ
যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সম্পাদক কাজল বসু বলেছেন; তাঁদের সাত দফা দাবি রয়েছে; শ্রমিকের অধিকার চাই যৌনকর্মীদের; কেন আলাদা করে আইটিপিএ আইনের আওতায় ফেলা হবে যৌনকর্মীদের? বাকি কোনো পেশার মানুষের ওপরে তো আলাদা আইন চাপানো হয় না; যৌনকর্মীদের এইসব দাবি নিয়ে ভোটের আগে সোচ্চার দুর্বার কমিটি।
আইনে আছে; যৌনকর্মীদের রোজগারের টাকা নিতে পারবেন না কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ; তাহলে তাঁদের কলেজে পড়া ছেলেমেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব কে নেবে যদি তাঁদের টাকা সামাজিক ভাবে অবৈধ হয়! কীসের জন্য তাঁরা দিনরাত খেটে কাজ করছেন; যদি ছেলেমেয়ে; বাবা-মায়ের দেখাশোনাও না করতে পারেন নিজেদের রোজগারের টাকায়! যৌনকর্মীরা এই বার্তা স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিতে চান রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কাছে।