বাংলার ডাক, ৫ই সেপ্টেম্বর নয়, ২৬শে সেপ্টেম্বর পালন করুন জাতীয় শিক্ষক দিবস। সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিবসটি শিক্ষক দিবস হিসেবে সারা দেশে পালিত হয়। কিন্তু আমাদের একটি ঘটনার কথা জেনে রাখা উচিত। যে দুই খণ্ডের ‘ইন্ডিয়ান ফিলজফি’ গ্রন্থের জন্য রাধাকৃষ্ণণের এত প্রসিদ্ধি, অভিযোগ উঠেছিল যে, সেটি আদপেই তাঁর লেখা নয়। সেটি নাকি লিখেছিলেন যদুনাথ সিংহ। সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের বিরুদ্ধে উঠেছিল, গবেষণা চুরির অভিযোগ।
১৯১৭ সালে এমএ পাশ করার পর, যদুনাথ সিংহ তাঁর গবেষণাপত্রের প্রথম খণ্ড ১৯২২ সালে এবং দ্বিতীয় খণ্ড ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রেমচন্দ-রায়চন্দ স্কলারশিপের আবেদনের সঙ্গে জমা দিয়েছিলেন। অভিযোগ, এই গবেষণাপত্রের দ্বিতীয় খণ্ড থেকেই অনেকটাই নকল করে, রাধাকৃষ্ণণ গ্রন্থাকারে ১৯২৭ সালে লন্ডন থেকে স্বনামে প্রকাশ করেন নিজের বই ‘ইন্ডিয়ান ফিলজফি’।
ওই সময়ে রাধাকৃষ্ণণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। যদুনাথ তাঁর অসাধারণ মেধা ও পাণ্ডিত্যের জন্য, ১৯২৩ সালে গ্রিফিথ পুরস্কার, ১৯২৪ সালে মোয়াট মেডেল ও তার আগে ১৯১৫-১৬ সালে ক্লিন্ট মেমোরিয়াল ও ফিলিপ স্মিথ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। পরাধীন ভারতবর্ষে শিক্ষা জগতের এই পুরস্কারগুলি ইংরেজদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনতে, কতটা প্রতিভাশালী হতে হত, তা অনেকেই জানেন।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষক দিবস, টাকা দিয়ে কেনা পেশায় শ্রদ্ধা থাকে না, লজ্জার অন্ধকারে বাংলার শিক্ষা
রাধাকৃষ্ণণ ‘ইন্ডিয়ান ফিলজফি’ গ্রন্থটি লন্ডন থেকে প্রকাশ করার বেশ কিছুদিন পর, তা যদুনাথের নজরে আসে। তাঁর মতে, বইটির অনেকটা অংশই তাঁর গবেষণাপত্রের হুবহু নকল। ১৯২৯ সালের ২২ অগস্ট, কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি। যদুনাথকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন, ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। মামলা অনেকদিন চলে।
অনেকদিন মামলা চলার পর, একটা ‘আউট অব কোর্ট সেটলমেন্ট’ করা হয়। অনেকে অভিযোগ করেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র যদুনাথ সিংহর উপর চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে তিনি মামলা প্রত্যাহার করে নেন। কারণ সেই সময় সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ একজন বিখ্যাত ব্যক্তি, নাম করা শিক্ষাবিদ, পরবর্তীকালে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি।
গোটা বাংলা জুড়ে, আজকের দিনে একটাই ডাক, ৫ই সেপ্টেম্বর নয়, ২৬শে সেপ্টেম্বর পালন করুন জাতীয় শিক্ষক দিবস। কারণ ২৬শে সেপ্টেম্বর, জন্মগ্রহণ করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।