The News বাংলা, কার্শিয়াং: শীত পরলেও ফের গরম হচ্ছে বাংলার পাহাড়। ভোটের ঢাক বাজতেই যুদ্ধের প্রস্তুতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠলো পাহাড়। সমতলের বাক-বিতন্ডার আঁচ পড়লো এবার পাহাড়েও। মুকুল-বিনয় বাকযুদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার মুকুলের বিরুদ্ধে ‘মুর্দাবাদ’ এর পোস্টার পড়ল পাহাড়ে। সেইসঙ্গে রোশন, বিমলের নাম করেও বিরোধিতায় পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ হলো কার্শিয়াং-এর একাধিক জায়গায়।
আরও পড়ুনঃ লোকসভা ভোটের আগে ফের গুরুংকে নিয়ে লড়াই বিজেপি- তৃণমূলে
ভোট বড় বালাই। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের আগেই যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরুর উত্তেজনায় উত্তপ্ত হতে শুরু হলো পাহাড়। বিজেপি-র রথযাত্রার প্রস্তুতি ও সেইসঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করতে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে শিলিগুড়িতে আসেন বিজেপি-র নির্বাচনী কমিটির রাজ্য চেয়ারম্যান মুকুল রায়।
ওইদিনই দলীয় বৈঠক শেষে বিমল গুরুং ও পাহাড় প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুকুল রায় বলেন, ‘একই অপরাধে বিনয় তামাং ও বিমল গুরুং দুজনেই অভিযুক্ত হলেও বিনয় তামাং বহাল তবিয়তে ঘুরে বেরাচ্ছে আর বিমল গুরুংকে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
সেইসঙ্গে জিটিএ প্রসঙ্গেও মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকারের সমালোচনা করে মুকুলবাবু বলেন, বিনয় তামাং এর পরামর্শে পাহাড় দখলের জন্য সরকার পাহাড়ের বোর্ডগুলি ভেঙে দেবার পরিকল্পনা করছে। সেইসঙ্গে পাহাড়ে বিভাজনের রাজনীতি করছে বলে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে আক্রমন করেন মুকুল রায়।
আরও পড়ুনঃ রয়েল বেঙ্গলের মৃত্যুর পর মমতার বেঙ্গল সাফারিতে ফের ‘অসুখ’
এরপরই বৃহস্পতিবার সমতলের শিলিগুড়িতে এক অনুষ্ঠানে এসে মুকুল রায়কে পালটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন বিনয় তামাং। তার বক্তব্য, তাঁর বিরুদ্ধে যতগুলি মামলা রয়েছে তার জন্য আদালত যতবার তাকে তলব করে ততবারই তিনি হাজিরা দিয়েছেন আদালতে।
কিন্তু বিমল গুরুং ও রোশন গিরি পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সেইসঙ্গে পাহাড়ের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি মুকুল রায়কে আরটিআই করার জন্য পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন।
এরপর থেকেই শুক্রবার পাহাড়ের বাতাবরণ উষ্ণ হতে শুরু করে। এদিন সকালে কার্শিয়াং-এর একাধিক জায়গায় জনতার নাম করে মুকুল, বিমলকে হুশিয়ারি দিয়ে নেপালি ভাষায় পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে যায়।
তাতে মুকুল রায় মুর্দাবাদ জানিয়ে একপ্রকার হুমকি দিয়েই বেশ কয়েকটি পয়েন্ট করে বক্তব্য রাখা হয়েছে যে, ‘মুকুল রায় তুমি পাহাড়ে উঠে দেখাও’। ‘রাস্তায় নামিয়ে পালিয়ে যাওয়া বিমল গুরুং, রোশন গিরি মুর্দাবাদ’।
হুমকি পোস্টারে লেখা আছে, ‘পাহাড়ে ওঠার আগে বিমল গুরুং ও রোশন গিরিকে নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরকেই করে আসতে হবে’। সেই পোস্টারে মুকুল রায়কে ‘চোর’ বলে ও বিমল গুরুং, রোশন গিরিকে মুকুলের ‘চামচা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। পাশাপাশি মদন তামাং খুনে বিমল গুরুং এবং রোশন গিরিকেই মূল অভিযুক্ত করে তাদের শাস্তির দাবিতে পোস্টারে বক্তব্য রাখা হয়।
আরও পড়ুনঃ অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জমায়েতে অশান্তির আশঙ্কায় সংখ্যালঘুরা
আর এই পোস্টারকে ঘিরেই উত্তপ্তের পারদ চড়ছে পাহাড়ে। এই পোস্টারকে কেন্দ্র করেই ফের পাহাড়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, একদিকে বিনয় তামাংকে নিয়ে দার্জিলিং লোকসভা আসনটি এবার নিজেদের দখলে নিতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
অন্যদিকে বিমল গুরুং, রোশন গিরিকে ফের পাহাড়ের নেতৃত্বে দেখতে চায় বিজেপিও। কারণ, ফের তাদের সাহায্য নিয়েই পাহাড়ের এই আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাবে বিজেপিও।
হুমকি পোস্টার তৃণমূলই মেরেছে অভিযোগ বিজেপির। সাধারণ মানুষ যারা আর পাহাড়ে আর অশান্তি চান না, তাঁরাই এই পোস্টার লাগিয়েছে দাবি তৃণমূলের। এরই জেরে, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের চাপানউতোরে একটু একটু করে উত্তপ্ত হচ্ছে গোটা পার্বত্য অঞ্চল। আর তার শুরু, এই পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করেই হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
ফের, আশঙ্কার কালো মেঘ দেখছে পর্যটন মহলও। ফের কি অশান্তির আগুনে জ্বলবে বাংলার পাহাড়? আবার বন্ধ হবে পাহাড়? ভোটের আগেই সেই প্রশ্ন সবার।