The News বাংলা, শিলিগুড়িঃ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশের পরও শিলিগুড়িতে বহাল তবিয়তে চলছে তৃণমূলের সিন্ডিকেট রাজ। ছোট থেকে বড় কিংবা মাঝারি প্রতিটি শিল্পের ক্ষেত্রেই এই সিন্ডিকেট রাজের দাদাগিরিতে ময়দান ছেড়ে পালাচ্ছে শিল্পপতিরা। তারপরেও শীতঘুমে রাজ্য প্রশাসন। শিল্প করতে এসে সিন্ডিকেটের বাধা পেয়ে এবার শিলিগুড়ির ফুড পার্ক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইছেন শিল্পপতি কমল মুন্দ্রা।
আরও পড়ুনঃ অনুপ্রবেশকারীদের সরকারী সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে বাংলায় এনআরসি-র দাবি
একদিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে শিল্প টানতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন, অন্যদিকে তাঁর দলেরই রাঘব বোয়ালদের সিন্ডিকেট রাজ বাধ সাধছে শিল্প করতে। আর উত্তরবঙ্গে শিল্প করতে এসে প্রথমিক পর্যায়েই বাধার মুখে পড়ে হতাশ শিল্পপতিরা। অভিযোগ, উত্তরবঙ্গে শিল্প আসতে শুরু হতেই শাসক দলের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট রাজ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। ফলে ময়দান ছেড়ে পালাচ্ছে শিল্পমহল।
আরও পড়ুন: রথযাত্রা উপলক্ষে বাংলায় মোদীর জনসভায় লোকসভার দামামা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপরতায় শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির উদ্যোগে, ফাঁসিদেওয়া ব্লকের লিউসিপাকুরিতে শিলিগুড়ি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফুড পার্ক গড়ে উঠতে চলেছে। এখানে প্রায় ২৫ টি শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে বিস্ক ফার্ম, গনেশ আটা ও ইভা এক্সোটিকার মত কারখানা গড়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন: পাপ ঢাকতে শিশু বলিদান, জন্মেই অনাথ শিশুরা অসহায়
আরও অনেক শিল্পপতি এখানে তাদের কারখানা গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। কিন্তু মহানন্দা ফুড প্রাইভেট লিমিটেডের উদ্যোগে ২৫ কোটি টাকা খরচ করে মিল্ক প্রডাক্ট ও ফ্রুট জুসের কারখানা তৈরী করতে এসে সিন্ডিকেটের রাজের দাপটে নাজেহাল শিল্পপতি কমল মুন্দ্রা।
অভিযোগ, এই ফুড পার্কে বেআইনিভাবে একটি অফিস খোলা হয়েছে। তার নাম রোহামু মহম্মদ বক্স ফুড পার্ক মেটেরিয়াল্স সাপ্লায়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশান। তাদের রিজিস্ট্রেশান নাম্বারও রয়েছে।
আরও পড়ুন: সাংসদ আলুওয়ালিয়াকে পাহাড়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ বিনয় তামাংয়ের
অভিযোগ, কারখানা গড়ে তোলার জন্য তাদের সংগঠন থেকেই যাবতীয় মালপত্র থেকে শুরু করে শ্রমিক নিতে বাধ্য করতে চাইছে এই রোহামু মহম্মদ বক্স ফুড পার্ক মেটেরিয়াল্স সাপ্লায়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশান। শুধু তাই নয় বাজার মুল্য থেকে ৪০ শতাংশ বেশী মুল্যে তারা তা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
নিরূপায় হয়ে শিল্পপতি কমল মুন্দ্রা, নর্থ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশনের দারস্থ হন। সংগঠনের সাধারন সম্পাদক সুরজিৎ পাল জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তারা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজনের সাথে বসে আলোচনা করেন। তারা পার্কের মেটেরিয়াল্স সাপ্লায়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশানকে মালপত্রের দামের কোটেশান জমা দিতে বলেন ও নিয়ম অনুযায়ী যারা কম দামে মাল দেবে তাদের থেকে মালপত্র নেবে বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: ‘সফল’ কৃষক মিছিলে শুরু ব্রিগেড ও লোকসভার প্রস্তুতি
কিন্তু ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশান তা মানতে নারাজ। অভিযোগ, বাজারের থেকে বেশি মুল্য হলেও তাদের কাছ থেকেই মালপত্র থেকে শুরু করে শ্রমিক সবটাই নিতে হবে বলে তারা হুমকি দেয়। তা না হলে কারখানা গড়তে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দিয়েছে তারা। সুরজিৎবাবু আরও জানান, গতকাল তারা বাধা দিতে এলে ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ এসে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: পার্লামেন্টে বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ান যায় শপিং মলে নিষেধাজ্ঞা
পরে তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়৷ এরপরও সেখানে বাইরে থেকে মালপত্র গেলে আটকে দেওয়া হয় ও লরির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকি তাদের প্রাণে মেরে ফোলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সংগঠনের পক্ষ থেকে এসজেডিওর সিইওর সাথে দেখা করে কথা বললে সিইও বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
আরও পড়ুন: কোর্স করলেই চাকরি! ভুয়ো বিজ্ঞাপনের আড়ালে প্রতারনার ফাঁদ
সংগঠনের পক্ষ থেকে এসজেডিএর সিইও এবং চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী, পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব, রাজ্য সরকারের এমএসএমই দপ্তরের মুখ্যসচিব সহ ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি জানান, আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি সমস্যার সমাধান করা না হয় তাহলে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে।
আরও পড়ুন: অসুস্থ শিল্পীকে ‘বঙ্গরত্ন’ দেওয়ার দাবী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ ছাত্রছাত্রীরা
নর্থ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গে শিল্প গড়ে তোলার ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহি। কিন্তু এভাবে সিন্ডিকেট রাজ চললে শিল্প গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। এরপর, ফুডপার্কে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে শুরু করে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামতে বাধ্য হবেন তাঁরা।
শিল্পপতি কমল মুন্দ্রা বলেন, ‘আমি বিহার, বহরমপুর, ত্রিপুরাতেও কারখানা গড়ে তুলেছি। কিন্তু কোথাও এমন বাধার মুখে পড়তে হয় নি। এরকম চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত ফুডপার্কে কারখানা গড়ে তুলব না। এখানেই কাজ বন্ধ করে দেব’।
এ বিষয়ে ফাঁসিদেওয়ার ব্লক সভাপতি আইনুল হক জানান, এখানে কোনো সিন্ডিকেট রাজ চলছে, না যারা কম দামে মালপত্র দেবে তাদের থেকেই মাল নেওয়া হবে। কিন্তু তাতে সিন্ডিকেট রাজ এর বিরুদ্ধে মুখ খোলা থামাচ্ছেন না শিল্পপতিরা।