কিশোরকুমার লতা মঙ্গেশকরের কত গল্প যে আছে; তা বলে শেষ করা যাবে না। চিরকাল কিশোরকুমারের জেদের কাছে হার মেনেছেন লতা। খুব পছন্দ করতেন যে হাসির রাজা কিশোরকে; সিরিয়াস লতাকেও হাসিয়ে ছাড়তেন কিশোর। তবে একবার লতার জেদে হার মেনেছিলেন কিশোরকুমার; সেই গল্প এখন ইতিহাস হয়ে আছে।
তৎকালীন প্রখ্যাত প্রায় সব সুরকারের সুরেই গান গাওয়া হয়ে গেছে লতার। হঠাৎ তাঁর ইচ্ছে করল একটু স্বাদ বদলের। ভাবলেন, তাঁর অন্যতম পছন্দের কিশোরকুমারের সুরে গান গাইবেন। কিন্তু কিশোরকুমার তখনকার ব্যস্ততম সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম। অভিনয়ও করছেন, একের পর এক স্টেজ শো; তাঁর সময় কোথায়?
তবে গানের ক্ষেত্রে সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে লতার জুড়ি মেলা ভার। তলব করলেন কিশোরকুমারকে। এদিকে চরম ব্যস্ততায় নিমজ্জিত কিশোরও একটু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন ডাক শুনে। অবস্থা বেগতিক দেখে নিজের চূড়ান্ত ব্যস্ততা সরিয়ে লতা স্বয়ং গেলেন কিশোরকুমারের কাছে।
কিশোরকুমারের বাড়িতে আড্ডার ছলে প্রস্তাবটা করেই ফেললেন লতা। শুনে তো কিশোর থ! এমনিতে সুর-টুর করার ব্যাপারে বেজায় অস্বস্তি তাঁর। কিন্তু সারা বিশ্বে যাঁর এমন সমাদর; তাঁর আবদার উপেক্ষা তিনি করেন কিভাবে! শুধু তাই নয়, দুজনেই একে অপরের খুব ভালো বন্ধুও। সেই বন্ধুত্বের খাতিরেই রাজি হলেন কিশোরকুমার। কিন্তু রাখলেন একটা শর্ত; লতার সুরেও তিনি একটা গান গাইবেন এবং সেটাও ওই বছরই রিলিজ করতে হবে।
এবার গায়িকা পড়লেন ফ্যাসাদে। এইরকম শর্তের জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। শেষে দুজনেই রাজি হলেন। সবকিছু তো হলো, কিন্তু গানের কথা লিখবেন কে? এই ধরনের পরিস্থিতিতে অর্থাৎ কোন প্রতিযোগিতা বা গায়ক-গায়িকাদের খামখেয়ালিপনার সময় একজন গীতিকারের কথাই সবার মাথায় আসত; তিনি মুকুল দত্ত। বহুবার এইরূপ পরিস্থিতিতে গায়ক-গায়িকাদের সফলতার সঙ্গে উতরে দিয়েছেন তিনি। শ্যামল মিত্র আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত প্রতিযোগিতাও সামাল দিয়েছিলেন এই মুকুল দত্তই। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলনা।
গান লিখলেন মুকুল দত্ত, সুর দিলেন কিশোরকুমার। গাইলেন লতা মঙ্গেশকর; ভালোবাসার আগুন জ্বেলে কেন চলে যায়। অন্যদিকে কিশোরের শর্তানুযায়ী সুর দিলেন লতা; গাইলেন কিশোরকুমার। আর লিখলেন সেই মুকুল দত্ত; তারে আমি চোখে দেখিনি, তার অনেক গল্প শুনেছি। তৈরি হল আরও একটা ইতিহাস।