প্রকৃতি নিজেই সম্পদের বিপুল ভান্ডার। এই প্রকৃতির বুকে যেমন পাওয়া যায় সোনা, ব্রোঞ্জ কিংবা তেলের খনি তেমনি নাম না জানা অনেক বহুমূল্যবান উদ্ভিদও পাওয়া যায় এই প্রকৃতিতেই যার খবর আমরা আজও পুরোপুরি জানি না। সম্প্রতি তেমনি প্রকৃতি সৃষ্ট এক ছত্রাকের খবর পাওয়া গেছে। বন্ধ্যাত্ব এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে জুরি নেই ইয়ারসাগুমবা নামের এই ছত্রাকের।
ছত্রাকটি প্রকৃতি সৃষ্ট হলেও পৃথিবীর সর্বত্র এটি জন্মায় না। একমাত্র হিমালয়ের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই এটি জন্মায়। নেপালে এই ছত্রাকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হিমালয়ের ভায়াগ্রা’। স্থানিয়রা এই ছত্রাকটিকে কমোউদ্দীপক ওষুধ বা যৌনক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে। হিমালয়ের এই ভায়াগ্রার চাহিদা নেপালে যত তারচেয়েও বেশি চিনে। প্রতিবছর প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার ব্যবসা হয় এই ইয়ারসাগুমবা থেকে।
তবে গবেষকদের দাবি, এই ছত্রাকের কারণে প্রায়শই বন্ধ্যাত্ব দূর হচ্ছে এবং এতে কামোত্তেজনাও অনেক বাড়ে, কিন্তু শরীরের অভ্যন্তরে এই ছত্রাকটি আর কি কি প্রভাব ফেলে তা এখনও অজানা।
হিমালয়ের সিওয়াং পাহাড় থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার পথ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার উপরের একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই মাত্র এই ছত্রাকটি জন্মায়। স্থানীয়রা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ছত্রাক সংগ্রহ করতে যায়। তবে প্রকৃতির খামখেয়ালিতে সৃষ্ট এই ছত্রাকটিকে যে সব সময়ই পাওয়া যায় তা নয়। এমনও সময় যায় যখন দিনের পর দিন এই ছত্রাকগুলোকে হাজার খুঁজেও পাওয়া যায় না। আবার এমনও সময় যায় যখন এক একজন অনেকগুলো ছত্রাক একদিনেই সংগ্রহ করে।
হিমালয়ের হ্যামলেট গ্রামের বাসিন্দা গনেশ পুন জানান, ‘আমি আমার স্ত্রী, ভাই এবং সন্তানকে নিয়ে যাই। বাচ্চারাই মূলত ইয়ারসাগুমবা ভালো দেখতে পায়। কারণ তারা আকৃতিতে ছোটো হওয়ায় খুব সহজেই ছত্রাকগুলোকে দেখতে পায়’।
গনেশের মতো হ্যামলেট গ্রামের আরও অনেক বসিন্দা প্রায় চার হাজার মিটার উচ্চতার পথ পাড়ি দেয় এই ছত্রাকের সন্ধানে। আর হিমালয়ের এই গ্রামটি ভারত, ভূটান এবং তিব্বতের সীমান্তে অবস্থিত। তাই মূল্যবান এই ছত্রাক খুব সহজেই সীমান্ত পাড় হয়ে বর্হিবিশ্বে চলে যায়। ইয়ারসাগুমবা ছাড়াও আরও অনেক মূল্যবান উদ্ভিদের তীর্থক্ষেত্র এই হিমালয়।
ত্রিভূবন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক জিত নারাজন শাঁহ এই ছত্রাক সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘ইয়ারসাগুমবার বৈজ্ঞানিক নাম হলো অফিওকরডাইসেপস সিনেনসিস। এই ছত্রাক সেবনে মানব শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করে। যদিও নেপালে এবং বিভিন্ন জায়গায় এই ছত্রাকটিকে পুরুষের স্পার্ম বৃদ্ধির কাজে এবং ঘাড়ের ব্যাথা উপশমে ব্যবহৃত হয়।’
মৌসুমী জলবায়ু শুরু হওয়ার কিছু আগে অর্থাৎ মে এবং জুনের মাঝামাঝি সময়ে এই ছত্রাকটি জন্মায়। এই সময়ে নেপালের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকেই ছত্রাক সংগ্রহের জন্য আসে। অনেকে আবার দিনের পর দিন ওই অঞ্চলে থেকে যায় ছত্রাক চাষ করার জন্য। প্রায় ৬০ হাজার কৃষকের পরিশ্রমে নেপাল তার প্রয়োজনীয় ৪০ শতাংশ ইয়ারসাগুমবা সংগ্রহ করে থাকে।
সিওয়াং গ্রাম থেকে মধ্যস্ততাকারীরা প্রতি কেজি ছত্রাক প্রায় ১৮ হাজার ডলার মূল্যে চাষীদের কাছ থেকে কিনে নেয়। এরপর সেই ছত্রাকই তারা প্রায় ৩১ হাজার ডলারে বিক্রি করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। আর যখন এই ইয়ারসাগুমবা সাংহাই পর্যন্ত পৌছায় তখন এর দাম হয় প্রতি গ্রাম প্রায় ১০০ ডলার।