বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে পরপর দুবারের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। এবার তৃতীয়বারের জন্যও এই লোকসভায় প্রার্থী হিসাবে দীনেশের নাম চূড়ান্ত করেছে তৃণমূল। আর এর পরেই রীতিমত বিদ্রোহ শুরু করেন তৃণমূল নেতা ও ভাটপারার বিধায়ক অর্জুন সিং। গুঞ্জন চলছিল অনেকদিন ধরেই। যে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করা না হলে মুকুল রায়ের হাত ধরে অর্জুন সিং চলে যেতে পারেন বিজেপিতে। সেই অর্জুন সিংকেই সোমবার নবান্নে ডেকে পাঠালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দীনেশ ত্রিবেদীও।
আরও পড়ুনঃ রমজান মাসে নির্বাচনে কোনও সমস্যা নেই, ববিকে পাল্টা দিলেন ওয়েসি
সূত্রের খবর, বারাকপুর কেন্দ্রে দীনেশ ত্রিবেদীকে ফের সাংসদ করতে চলেছে তৃণমূল। কিন্তু ওই কেন্দ্রে সাংসদ হতে চান বর্তমানে ভাটপারার বিধায়ক অর্জুন সিং। নিজের ইচ্ছের কথা দলকে বারবার জানিয়েছেন অর্জুন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দীনেশ ত্রিবেদীকেই টিকিট দেবার সিদ্ধান্ত নেন মমতা। আর এরপরেই ক্ষেপে যান অর্জুন।
আরও পড়ুনঃ সুব্রত বক্সির বদলে কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
জল্পনা আগেই ছিল, যে বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী না করা হলে বিজেপির টিকিটে দাঁড়াতে পারেন অর্জুন সিং। বিজেপি সূত্রের খবর ছিল, মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগও রেখে চলেছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। আর এই ক্ষোভ সামাল দিতেই অর্জুন সিংকে নবান্নে ডেকে পাঠান মমতা নিজেই।
আরও পড়ুনঃ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে চোখে সর্ষে ফুল রাজ্য বিজেপির, প্রার্থীর খোঁজে বৈঠক দিল্লিতে
সোমবার দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে অর্জুন সিং ও দীনেশ ত্রিবেদীকে দুজনকেই নবান্নে ডেকে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জট কাটাতে দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে কথা বলেন তৃণমূল নেত্রী। দুজনকেই তিনি জানান, দীনেশ ত্রিবেদীকেই বারাকপুর কেন্দ্রের প্রার্থী করতে চান তৃণমূল নেত্রী। একইসঙ্গে অর্জুনকেও দলে ধরে রাখতে চান।
আরও পড়ুনঃ বাংলার কোন লোকসভা আসনে কবে ভোট দেখে নিন
তৃণমূল এবং বিজেপি– দুই শিবির সূত্রেরই খবর, দীনেশ ফের প্রার্থী হলে তৃণমূল ছাড়তে পারেন ভাটপাড়ার বিধায়ক তথা উত্তর চব্বিশ পরগনায় শাসক দলের নেতা অর্জুন সিং। এও শোনা যাচ্ছিল, আগামীকাল মঙ্গলবারই দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন তিনি। আর এটা জেনেই মাঠে নামলেন মমতা নিজেই।
আরও পড়ুনঃ লোকসভা ভোটে বিজেপির একমাত্র ভরসা সেই নরেন্দ্র মোদীই
জানা গেছে, দলে অর্জুন সিং এর ক্ষমতা বাড়ানর কথা জানিয়েছেন, মমতা নিজেই। নবান্ন সূত্রে খবর, লোকসভা ভোট মিটলে অর্জুন সিংকে মন্ত্রী করা হবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহল বলছে, মুকুল ও বিজেপির ভয় দেখিয়েই মমতার কাছ থেকে মন্ত্রিত্বের আশ্বাস ছিনিয়ে নিয়েছেন অর্জুন সিং। তবে অর্জুন সিং জানিয়েছেন, “দলের ভিতরের কথা আপনাদের বলব না”। তবে অর্জুন সিংকে মন্ত্রী করা নিয়ে দল বা সরকারের তরফ থেকে কিছুই বলা হয়নি।
আরও পড়ুনঃ পশ্চিমবঙ্গে নজিরবিহীন ৭ দফা ভোটে সুবিধা বিজেপির
এর আগে ১৯৯৯ সালে ও ২০০৪ সালে বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের তড়িৎবরণ তোপদারের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন অর্জুন সিং। দুবারই বেশ ভাল ব্যবধানে তিনি হেরেছিলেন ঠিকই কিন্তু তৃণমূল-বিজেপি জোটের প্রার্থী হয়ে সিপিএমের তৎকালীন ওই প্রভাবশালী নেতাকে যথেষ্ট চাপে ফেলে দিয়েছিলেন অর্জুন। তারপর থেকেই গত কুড়ি বছরে বারাকপুর শিল্পাঞ্চল তথা উত্তর চব্বিশ পরগনার রাজনীতিতে অর্জুন সিং এর প্রভাব ও ক্ষমতা দুই অনেক বেড়েছে।
আরও পড়ুনঃ রায়গঞ্জ মুর্শিদাবাদ সিপিএম কে ছেড়ে বাংলায় আসন রফা কংগ্রেসের
আর অর্জুন সিং এর মত নেতাকে হারাতে চান না স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাই নবান্নে ডেকে অর্জুনের রাগ ভাঙালেন মমতাই। আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন দলে অর্জুন সিং এর গুরুত্ব কতটা। বিজেপিকে এখন বারাকপুরের জন্য আবার নতুন করে প্রার্থী খুঁজতে হবে।