মঙ্গলবার দুপুরে কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাসভবনে হতে চলেছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির বৈঠক। এই বৈঠক শেষেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো আগামী ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের ৪২টি আসনের ৪২টিতেই জয়লাভ করবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী, বলেছেন মমতা। এদিকে মমতার প্রার্থী তালিকা জানতে দেশ জুড়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। কারা থাকছেন, কারা থাকছেন না। শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে বর্তমান সাংসদের যে অনেকেই আর তৃণমূলের সাংসদ হয়ে লোকসভায় প্রবেশ করবেন না সেটা পরিস্কার।
আরও পড়ুনঃ জঙ্গি মাসুদ আজহারকে ‘মাসুদ আজহার জী’ বলে সম্বোধন করে বিতর্কে রাহুল
আগেই দল ছেড়ে বিজেপিতে গেছেন বাঁকুড়ার বিষ্ণপুর কেন্দ্রের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ও বীরভূমের বোলপুরের অধ্যাপক সাংসদ অনুপম হাজরা। বাকি কয়েকজন সাংসদকে নিয়েও এবার প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৪ সালে কয়েকজনকে সাংসদ করে বিড়াম্বনার মধ্যে পরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার আর সেই ভুল মমতা করবেন না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সূত্রের খবর, প্রায় ৮-১০ জন সাংসদ নানাকারণে টিকিট নাও পেতে পারেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যজনিত কারণ যেমন রয়েছে, তেমন কোনও কোনও সাংসদের পাঁচ বছরের রিপোর্ট কার্ড না-পসন্দ মমতার। ২০১৯-এর লোকসভায় টিকিট অনিশ্চিত তৃণমূলের ৮ বর্তমান সাংসদের। দেখে নিন, তালিকা।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্থান চিনকে ভয় দেখিয়ে বালাশোরে পিনাক রকেট ছুঁড়ল ভারত
১। চৌধুরী মোহন জাটুয়া
দক্ষিণ ২৪ পরগণার মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রে গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন প্রবীণ নেতা চৌধুরী মোহন জাটুয়া। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন। সূত্রের খবর, জাটুয়া এবার টিকিট নাও পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, বয়সের কারণেই তাঁকে সরতে হবে। কারণ তিনি খুব একটা ছোটাছুটি করতে পারছেন না বলেই দলের ধারনা। গেরুয়া শিবির যেভাবে রাজ্যের নানা অংশে কর্মসূচি নিচ্ছে, তাতে দৌড়ঝাঁপ করার মত নেতার প্রয়োজন দলের। এই আসনে নতুন প্রার্থী দেবে দল।
আরও পড়ুনঃ মমতাকে মুকুলের ভয় দেখিয়ে কি রাজ্যে মন্ত্রী হচ্ছেন অর্জুন
২। তাপস পাল
নদীয়ার কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল এবার আর টিকিট পাবেন না বলে মনে করছে দলের একাংশ। তাঁর কুখ্যাত ‘বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে দেব’ থেকে শুরু করে রোজভ্যালি কাণ্ডে গ্রেপ্তার, পারিবারিক বিবাদ সহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই সাংসদের বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, ‘দাদার কীর্তি’-র নায়কের কার্যকলাপ নিয়ে অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়েছে দলকে। জেল ও সিবিআই হেফাজতে থাকায় গত সাড়ে তিন বছরে তাঁর এলাকার সাংগঠনিক কাজে এই নায়ক সাংসদকে কোনও কাজে পায়নি। উন্নয়নের কাজে পাশে থাকা দূর অস্ত। তাই অনেক আগেই তিনি বাদের তালিকায় চলে গিয়েছেন। তবে তাপস পান আশাবাদী, নদীয়া থেকে না হলেও রাজ্যের যেকোন লোকসভা আসন থেকেই দাঁড়াতে পারেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ রমজান মাসে নির্বাচনে কোনও সমস্যা নেই, ববিকে পাল্টা দিলেন ওয়েসি
৩। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রার্থী তালিকায় হাওড়া লোকসভার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। সূত্রের খবর, প্রাক্তন এই ফুটবলারের টিকিট পাওয়া নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। নারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত বলে টিকিট পাবেন না এমন কিন্তু নয়। দলীয় সূত্রে খবর, সাংসদ হিসাবে তাঁর কাজে দল একেবারেই খুশি নয়। সাংগঠনিক কাজেও দল ক্ষুব্ধ। দলে রটনা রয়েছে, সেখানে প্রভাবশালী প্রার্থীর নাম আলোচনায় উঠে আসছে। তবে শেষ মুহূর্তে মমতার ছাড়পত্র পেতেই পারেন প্রসুন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ সুব্রত বক্সির বদলে কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
৪। অপরূপা পোদ্দার
সূত্রের খবর, টিকিট না পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দারও। এই সাংসদও নারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত। কিন্তু দলের মনে করছে, অপরূপা সাংসদ হিসাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকী সাংগঠনিক কাজও ঠিক ভাবে করতে পারেন নি বলে দল মনে করছে। তাই এবারে তাঁর টিকিট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলার কোন লোকসভা আসনে কবে ভোট দেখে নিন
৫। সন্ধ্যা রায়
সূত্রের খবর, টিকিট না পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায়ও। শারীরিক অসুস্থতার জন্য এবার অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ও টিকিট না পেতে পারেন। কারণ, তাঁর পক্ষে দৌড়ঝাঁপ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া নামে কাটলেও দলের সংগঠনের কোন কাজেই তাকে পাওয়া যায়নি। তাঁকে সাংসদ করেও বিড়াম্বনার মধ্যে পরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা বিতর্কে নিজেকে সামিল করা তো দূর, সন্ধ্যা দেবী সাংসদে মৌনতাকেই সর্বাধিকার দিয়েছেন।
৬। মমতাজ সংঘমিত্রা রায়
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে ২০১৪ সালে জয় পেয়েছিলেন মমতাজ সংঘমিত্রা রায়। আদ্যোপান্ত কমিউনিস্ট পরিবারের মেয়ে হলেও তাঁকে গতবার টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, তাঁর কাজেও দল তেমন একটা খুশি নয়। এই কেন্দ্রে একেবারে নতুন মুখ দেখা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ লোকসভা ভোটের আগে পাকিস্তানে ফের একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হবে
৭। মুনমুন সেন
টিকিট না পাবার দলে আছেন বাঁকুড়ার সাংসদ মুনমুন সেনও। সাংসদ হবার পর একবারও নিজের এলাকায় পা রাখেননি তিনি, এমনটাই অভিযোগ। সেখানেও এবার নতুন মুখ আসাটা প্রায় পাকা। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া থেকে হেভিওয়েট সিপিআই(এম) সাসংদ বাসুদেব আচারিয়া-কে হারিয়ে লোকসভায় পা রেখেছিলেন এই তারকা। তাঁর পারফরম্যান্সও তেমন আশানুরূপ নয়। দলের একাংশ মনে করছে, এবার আর ‘দুষ্টুমি’ করে ছাড় পাবেন না মুনমুন। তাঁর টিকিটও সম্ভবত বাতিল।
আরও পড়ুনঃ লোকসভা ভোটে বিজেপির একমাত্র ভরসা সেই নরেন্দ্র মোদীই
৮। উমা সোরেন
টিকিট পাবেন না বলেই নিশ্চিত ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সোরেন। এই আসনেও নতুন মুখ নিচ্ছেন মমতা। সূত্রের খবর, তাঁর কাজেও দল তেমন একটা খুশি নয়। এই কেন্দ্রে একেবারে নতুন মুখ দেখা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের মনে করছে, সাংসদ হিসাবে উমা সোরেন কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকী সাংগঠনিক কাজও ঠিক ভাবে করতে পারেন নি বলে দল মনে করছে। তাই এবারে তাঁর টিকিট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
জানা যাচ্ছে, ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ অভিনেতা দেবও এবার আর ভোটে দাঁড়াতে চান না। তবে মমতা তাঁকে ছাড়বেন না বলেই মনে করছে দল। তবে অনুব্রত মণ্ডল না চাইলেও এবার টিকে গেলেন শতাব্দী রায়। দল এও খতিয়ে দেখছে, কোন সাংসদরা গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সূত্রের খবর, সম্প্রতি তৃণমূল ভবনে এক বৈঠকে দলের ৮-৯ জন সদস্য বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেহের তালিকা ক্রমশ বাড়ছে ঘাসফুল শিবিরে।
আরও পড়ুনঃ পশ্চিমবঙ্গে নজিরবিহীন ৭ দফা ভোটে সুবিধা বিজেপির
তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ২০১৯-এর পর ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন আরও হাড্ডাহাড্ডি হবে। সেক্ষেত্রে মমতা নিজের টিমকে আরও সুসজ্জিত করতে চাইবেন। তাই লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার অনেক সতর্ক থাকবেন তিনি।
কালীঘাটে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, এবার নেত্রী না কি সর্বাধিকার দিচ্ছেন পারফরম্যান্সকেই আর রাজনৈতিক পরিচয়কেই। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারা জন্য রাজনৈতিক প্রার্থীর খোঁজই করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংসদ হয়ে কোনও কাজই সেভাবে করেননি, দলকেও সময় দেননি, সংসদেও পারফরম্যান্স খারাপ এমন নেতারা এবার টিকিট পাচ্ছেন না। ঘাসফুলে থেকে যাদের ‘পদ্মে লোভ’ তাদেরকেও চিহ্নিত করে ছেঁটে ফেলা হবে। নজরে রয়েছে মুকুল রায় যোগও।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।