ঠিক যেন শোলের জয় আর বীরু, ৪০ জনকে বাঁচিয়ে হিরো রাম ও বিনু। মালের হড়পা বানে ৪০ জনকে বাঁচিয়ে হিরো রাম ও বিনু। দুই বন্ধু, রাম মানকি মুণ্ডা ও বিনু গঞ্জু। মালবাজারের হাজার-হাজার মানুষের মধ্যে, এই দুই বন্ধুও এসেছিল, দুর্গা প্রতিমা ভাসান দেখতে, জলপাইগুড়ির মাল নদীর তীরে। তারমধ্যেই সেই বিপদ। হঠাৎ করে হড়পা বান, পাহাড়ি মাল নদীতে। ভেসে যাচ্ছিলেন অসংখ্য মানুষ। সেটা দেখেই নদীপাড়ের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে, পাহাড়ি নদীতে ঝাঁপ দেন রাম। আর বন্ধুকে পাগলা হয়ে ওঠা নদীতে ঝাঁপাতে দেখে, ঝাঁপিয়ে পড়ে বিনুও।
“এই দুই বন্ধু না থাকলে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা, আরও অনেক বাড়তে পারত”, বলছেন মাল নদীর কাছে হাজির থাকা মালবাজারের স্থানীয়রা। দুই বন্ধু, ‘পাগলা বান’ থেকে প্রাণ বাঁচালেন, নয়-নয় করেও ৪০ জন মানুষের। ডুয়ার্সের মালবাজার শহর ছাড়াও, চা বাগান এলাকার একাধিক পুজো উদ্যোক্তা, সব মিলিয়ে প্রায় ছয়-আট হাজার মানুষ মাল নদীর বিসর্জন ঘাটে জড়ো হয়েছিলেন। ওই ভিড়ে ছিলেন, রাম মানকি মুণ্ডা, বিনু গঞ্জুও।
দুই বন্ধু মিলে হড়পা বান থেকে উদ্ধার করেন, একের পর এক ব্যক্তিকে। তাঁদের দাবি, পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য সময় মতো পেলে, আরও কয়েক-জনকে প্রাণে বাঁচাতে পারতেন। মালবাজারের একটি চা-বাগানের বাসিন্দা, রাম এবং বিনু। নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের কাজে, সাহায্যও করছিলেন দুই বন্ধু। মাল নদীতে হঠাৎ করেই, জল বাড়তে দেখেন রাম। তখনই প্রশাসনকে সজাগ করেন দুই বন্ধু।
তাঁদের দাবি, ওই সময় প্রশাসনের তরফে মাইকিং শুরু হয়। বারবার সবাইকে, নদী থেকে উঠে আসার আবেদন করা হচ্ছিল। কিন্তু কেউই কান দেননি। তার কিছুক্ষণ পরেই, হঠাৎ করেই জল বেড়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। “ছোটবেলা থেকে এই নদীকে দেখছি। বহু-বার হড়পা বান দেখেছি এখানে। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে, উদ্ধার করতে নেমে পড়ি”, জানান রাম।
রামকে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখে, আর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি ছোটবেলার বন্ধু বিনুও। দুজনে মিলে কমপক্ষে ৪০ জনকে পাড়ে তুলে বাঁচান। বিনু বলেন, “সেই সময় যদি পুলিশ বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী যদি সাহায্য করত, তা হলে বাকিদেরও বাঁচানো সম্ভব হত। কিন্তু ওরা রাত ১০টার পর কাজে নামল”।