নিজস্ব সংবাদদাতা: হত্যা করা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। এক লাইনের এই হুমকি ইমেল পেলেন দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়েক। তাঁর সরকারি ইমেল আইডিতেই এই হুমকি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।
২০১৯ এর শুরুর দিকেই লোকসভা নির্বাচন। সেই হিসাবে নির্বাচনের ছ’মাসও আর বাকি নেই। এমন সময়ে প্রাণনাশের হুমকি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। সরাসরি হুমকি পেয়েছেন দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়েক। তাঁকে পাঠানো ই-মেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। একলাইনের হুমকিতে ২০১৯-এর একটি তারিখের উল্লেখ করা রয়েছে বলে জানা গেছে। অন্য একটা সূত্রে আবার, নভেম্বরেই নাকি হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
হুমকি চিঠি পাওয়ার পরই সর্বোচ্চ স্থরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী ও নিরাপত্তা কর্মীদের বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বছরের শেষেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তাই নভেম্বরে দেশজুড়ে একাধিক জনসভা ও মিছিল করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। সেই কারণেই নভেম্বর মাসটিকে টার্গেট করছে জঙ্গিরা, হুমকি চিঠি পাবার পর এমনটাই অনুমান গোয়েন্দাদের।
ইমেল পাওয়ার পরই দেশজুড়ে সক্রিয় গোয়েন্দাদের নেটওয়ার্ক। কারা মোদীকে খুন করার ষড়যন্ত্র করছে, তা এখনও জানা যায়নি। যদিও হুমকি ইমেলটি যে সার্ভার থেকে পাঠানো হয়েছে, সেই সার্ভারটি উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমে অবস্থিত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
প্রধানমন্ত্রীকে খুনের হুমকি অবশ্য এই প্রথম নয়। এই বছরের জুনেই একটি গোপন চিঠি উদ্ধার করার কথা জানিয়েছিল পুণে পুলিশ। সেই চিঠিতে মোদীকে খুন করার কথা লেখা ছিল, এমনটাই জানানো হয়েছিল পুলিশের তরফে। সেক্ষেত্রে অবশ্য সন্দেহের তীর ছিল মাওবাদীদের দিকেই।
জানা গিয়েছিল, রাজীব গান্ধীকে যে ভাবে মারা হয়েছিল সেভাবেই মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে ভিমা-কোরেগাঁও দাঙ্গার তদন্ত করতে গিয়েই এই চিঠিটি হাতে এসেছিল গোয়েন্দাদের। ১৮ এপ্রিল, ২০১৭ সালে লেখা এই চিঠিটি পাওয়া গিয়েছিল রোনা উইলসন নামের এক সমাজকর্মীর দিল্লির বাড়ি থেকে। অন্তত পুণে পুলিশের দাবি এরকমই ছিল।
ভিমা কোরেগাঁও কাণ্ডে রোনা উইলসন-সহ আরও পাঁচ সমাজকর্মীকে জুনেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখনই মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা প্রথম সামনে আসে। সেই চিঠিটি লিখেছিল ‘আর’ নামের এক ব্যক্তি। তা লেখা হয়েছিল কমরেড প্রকাশ নামের কোনও একজনকে।
চিঠিতে রোড-শো চলাকালীন নরেন্দ্র মোদীকে রাজীব গান্ধী স্টাইলে হত্যা করার কথা বলা হয়েছিল। পুণে পুলিশ এই দাবি করলেও অনেকেই অবশ্য এই দাবীর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ভিমা কোরেগাঁও কাণ্ড থেকে মুখ ঘুরিয়ে দিতেই প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের গল্প সামনে আনছে পুণে পুলিশ, এই অভিযোগও করেন বিরোধীরা।
আগেও, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেই মোদীকে খুন করা হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ঈ-মহম্মদ বা জেইএম। জেইম-এর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মৌলনা মাসুদ আজহার অন লাইন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন আল-কালাম-এ মোদীর নামে ফতোয়া ঘোষণা করেছিলেন।
তদন্তকারী সংস্থাগুলির অনুসন্ধান অনুযায়ী, ইমেলটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য অসম থেকে এসেছে বলেই সন্দেহ। যদিও এক্ষেত্রে প্রেরকের পরিচয় জানা যায়নি। ইমেল প্রেরককে শনাক্তকরণের চেষ্টা করছে দিল্লি পুলিশ। ওই হুমকি ইমেল আসার পর প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। কারণ, আগামী মাসগুলিতে মোদী বেশ কয়েকটি সমাবেশে যোগ দেবেন। দেশ জুড়ে উৎসবপর্ব মিটলেই, বিধানসভা ভোট হতে চলা রাজ্যগুলোতে মোদীর জনসভা করার কথা।
তবে এই বছরের নভেম্বরে না ২০১৯ সালের একটি নির্দিষ্ট দিনে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুনের চক্রান্ত করা হয়েছে, সেই নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে, লোকসভা ভোটের আগেই খুনের চক্রান্ত করা হয়েছে বলেই জানিয়েছে দিল্লী পুলিশ।
যার ফলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলে। জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা। এর আগেও বেশ কয়েকবার নানা গোষ্ঠী মোদীকে খুনের হুমকি দিয়েছে। তবে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নয় পুলিশ ও গোয়েন্দারা।
তবে, এটিকে স্রেফ ‘গিমিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেসের তরফ থেকে এটিকে ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের স্টান্ট বলে অভিহিত করা হয়েছে। ‘দেশের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি চিঠি দেওয়া হচ্ছে, আর তাতেও রাজনীতি আনছে কংগ্রেস’, সমালোচনা বিজেপির। তবে, রাজনৈতিক বিতর্ক যাই হোক, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি চিঠিতে তোলপাড় গোটা দেশ।