The News বাংলা: সারা বিশ্বেই বড়ো বড়ো ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্প হয় ভারতেও। সম্প্রতি এধরনের ভূমিকম্পের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। ভূমিকম্প হলে তার পরপরই এনিয়ে নানান ধরনের কথাবার্তা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক এই ঘটনা সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়বে সল্টলেক নিউটাউনের বাড়িঘর
ভূমিকম্প নিয়ে ১২টি বিস্ময়কর তথ্য:
আরও পড়ুন: হাজার হাজার রুটি নষ্ট করে কৃষক আন্দোলনে ইতিহাস বাংলার বামেদের
১. সারা পৃথিবীতে বছরে লাখ লাখ ভূমিকম্প হয়:
যুক্তরাষ্ট্রে ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জিওলজিক্যাল সার্ভে বলছে, প্রত্যেক বছর গড়ে ১৭টি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় রিখটার স্কেলে যার মাত্রা সাতের উপরে। এবং আট মাত্রার ভূমিকম্প হয় একবার।
আরও পড়ুন: ভিড়ে ঠাসা কলকাতা মেট্রোতে আগুন ও ধোঁয়া, অসুস্থ বহু
তবে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে লাখ লাখ ভূমিকম্প হয়। এর অনেকগুলো হয়তো বোঝাই যায় না। বোঝা যায় না কারণ খুব প্রত্যন্ত এলাকায় এসব হয় অথবা সেগুলোর মাত্রা থাকে খুবই কম।
২. ভূমিকম্পের কারণে দিনের দৈর্ঘ্য কমবেশি হতে পারে:
জাপানের উত্তর-পূবে ২০০৯ সালের ১১ই মার্চ একটি বড়ো ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার মাত্রা ছিলো ৮ দশমিক ৯। এর ফলে পরিবর্তন ঘটে পৃথিবীর ভরের বণ্টনে। এবং তার প্রভাবে পৃথিবী ঘুরতে থাকে সামান্য দ্রুতগতিতে আর তখন দিনের দৈর্ঘ্য কমে যায়। ১১ মার্চে দিন ১.৮ মাইক্রো সেকেন্ড ছোট ছিলো।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: ৫৫ নম্বরের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীকে ৫৯ দিয়ে এসএসসি-র নতুন কীর্তি
৩. সান ফ্রান্সিসকো সরে যাচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলসের দিকে:
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহর প্রত্যেক বছর গড়ে দুই ইঞ্চি করে লস অ্যাঞ্জেলসের দিকে সরে যাচ্ছে। এই একই গতিতে বাড়ে আমাদের আঙ্গুলের নখ। শহরের এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে সান অ্যানড্রেয়াস ফল্টের দুটো দিক ক্রমশ একটি অপরটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই গতিতে চলতে থাকলে এই দুটো শহর কয়েক লাখ বছর পর একত্রিত হয়ে পড়বে। ভূমিকম্পকে সামাল দিতে সান ফ্রান্সিসকোর একটি সেতুতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: EXCLUSIVE: ভোটের আগে বাংলার বিখ্যাত সাংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ‘সরকারি’ সন্ধি মমতার
৪. ভূমিকম্পের আগে স্থির জল থেকে গন্ধ বের হয়ঃ
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পের আগে পুকুর, খাল-বিল, হ্রদ, জলাশয়ের স্থির জল থেকে দুর্গন্ধ আসতে পারে। এমনকি সেই জল সামান্য উষ্ণও হয়ে পড়তে পারে। প্লেট সরে যাওয়ার কারণে মাটির নিচ থেকে যে গ্যাস নির্গত হয় তার কারণে এটা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ফের ভাঙছে হিমবাহ, ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পৃথিবী
এর ফলে ওই এলাকার বন্যপ্রাণীর আচরণেও পরিবর্তন ঘটতে পারে। ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগ বলছে, ২০০৯ সালে ইটালিতে এক ভূমিকম্পের সময় এক ধরনের ব্যাঙ সেখান থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলো এবং ফিরে এসেছিলো ভূমিকম্পের পরে। বলা হয়, এই ব্যাঙ পানির রাসায়নিক পরিবর্তন খুব দ্রুত শনাক্ত করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: কলকাতা থেকে পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের টাকা যাচ্ছে জঙ্গিদের হাতে
৫. ভূমিকম্পের পরেও জলে ঢেউ উঠতে পারে:
ভূমিকম্পের পরেও পুকুরে কিম্বা সুইমিং পুলের জলেতে আপনি কখনো কখনো ঢেউ দেখতে পারেন। একে বলা হায় শ্যাস। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্প হয়তো শেষ হয়ে গেছে কিন্তু তারপরেও কয়েক ঘণ্টা ধরে অভ্যন্তরীণ এই জলেতে তরঙ্গ অব্যহত থাকতে পারে।
মেক্সিকোতে ১৯৮৫ সালে একবার ভূমিকম্প হয়েছিলো। মেক্সিকো থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলের জল ছিটকে পড়তে পড়তে শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
আরও পড়ুনঃ নেতাদের গুন্ডা পোষা না গুন্ডাদের নেতা হওয়া, প্রকাশ্যে বন্দুকবাজির কারন কি
৬. ভূমিকম্পের কথা মনে রেখেই ইনকা সভ্যতা ও জাপানি বাড়িঘর তৈরি:
ভূমিকম্পের কারণে যাতে বাড়িঘর ধসে না যায় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই ইনকা আমলের স্থাপত্য ভবন ও জাপানি প্যাগোডা নির্মিত হয়েছিলো। ৫০০ বছর আগে ইনকার স্থাপত্য কর্মীরা যখন মাচু পিচু শহর নির্মাণ করে তারা বাড়িঘর নির্মাণের ব্যাপারে একটি আদিকালের জ্ঞান কাজে লাগিয়েছিলো যাতে ঘন ঘন হওয়া ভূমিকম্পের হাত থেকে তাদের বাড়িঘর বেঁচে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ‘রাজনীতিতে টিকে থাকতে গেলে তেল দিতেই হবে’ বিস্ফোরক তৃণমূল সাংসদ
৭. বেশিরভাগ ভূমিকম্পেরই উৎস প্রশান্ত মহাসাগর:
পৃথিবীতে যতো ভূমিকম্প হয় তার অধিকাংশ, ৯০ শতাংশই হয় রিং অফ ফায়ার এলাকাজুড়ে। এই এলাকাটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।
৮. ভূমিকম্পের কারণে চিলির একটি শহর ১০ ফুট পশ্চিমে সরে যায়:
২০১০ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি বড়ো ধরনের এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিলো চিলির কনসেপসিওন শহরে। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৮.৮। এর ফলে পৃথিবীর শক্ত উপরিভাগে ফাটল ধরে এবং শহরটি ১০ ফুট পশ্চিমে সরে যায়।
আরও পড়ুন: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ‘আজাদ লড়াই’কে সম্মান নরেন্দ্র মোদীর
৯. ভূমিকম্পে খাটো হয়ে যায় এভারেস্ট:
নেপালে ২০১৫ সালের ২৫শে এপ্রিল আঘাত হানে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কমে আসে হিমালয়ের অনেক পর্বতের উচ্চতাও। মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা কমে গিয়েছিলো এক ইঞ্চির মতো।
১০. জাপানি পৌরাণিক কাহিনীতে ভূমিকম্প হয়েছিলো বড়ো আকারের এক ক্যাটফিশের কারণে:
ইতিহাসে দেখা যায় জাপানি এক দ্বীপে মাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিলো নামাজু নামের বিশাল এক ক্যাটফিশ। পৌরাণিক কল্প কাহিনীতে বলা হয়, অনেক ভূমিকম্প হয়েছিলো এই মাছটির কারণে। প্রাচীন গ্রিকরা বিশ্বাস করতেন সমুদ্রের দেবতা পজিডন রেগে গিয়ে পৃথিবীর ওপর আঘাত করলে ভূমিকম্প হতো।
আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যা ও তারপরের গণহত্যার না জানা সত্যি
হিন্দু পুরাণে আছে এই পৃথিবীকে ধরে রেখেছে আটটি হাতি। এই হাতিগুলো দাঁড়িয়ে আছে একটি কচ্ছপের পিঠের ওপর। আর ওই কচ্ছপটি ছিলো কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা একটি সাপের উপরে। এই প্রাণীগুলোর যে কোনো একটি যখন নড়ে উঠতো তখনই ভূমিকম্প হতো।
১১. ভূমিকম্পের আগে প্রাণীর আচরণে পরিবর্তন ঘটে:
ভূমিকম্পের ফলে যে শুধু ব্যাঙের আচরণেই পরিবর্তন ঘটে তা নয়। ইন্দোনেশিয়া এবং ২০০৪ সালে সুনামির আগে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে তারা অনেক পশু পাখিকে দেখেছেন উঁচু এলাকার দিকে ছুটে যেতে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট কম্পন পশুপাখিরা টের পেয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ লোকঠকানির লোন মাপ, রাহুলকে লজ্জায় ফেলে আত্মঘাতী কৃষক
১২. ব্রিটিশ একজন বিজ্ঞানী ভূমিকম্পের কারণ চিহ্নিত করেছেন:
ব্রিটেনের একজন ইঞ্জিনিয়ার জন মাইকেল ভূমিকম্পের কারণ উদঘাটন করেছেন। এই আবিষ্কার হয়েছে ১৮শ শতাব্দীর শুরুর দিকে। তাঁকে দেখা হয় ভূকম্পন বিদ্যার একজন জনক হিসেবে। তিনিই প্রথম বলেন, ভূ-পৃষ্ঠের বহু নিচে শিলা-খণ্ডের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।