শান্তনু সরস্বতী, কলকাতা: ক্লাব নির্বাচনে জয় নিশ্চিত জেনেও, সোনি নোর্দি ইসুতে একরকম আবেগের কাছে নতি স্বীকার করলেন মোহনবাগান ক্লাব কর্তৃপক্ষ। গতকাল রাতেই মোহনবাগান ক্লাবের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে তা ক্লাব কর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে হাইতির তারকা মিডফিল্ডার। তবে জানা গিয়েছে, কোচ শংকরলাল চক্রবর্তীর কথা মেনে সোনিকে মেডিক্যাল পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে।
মিশরের ওমর নবিল রাশাদ এলহুসেইনিকে পাকা কথা দেওয়ার পর হঠাৎ কী এমন হল যে তড়িঘড়ি মায়ামিতে ছুটি কাটাতে যাওয়া সোনি নোর্দিকে চুক্তিপত্র পাঠাতে গেলেন মোহনবাগান ক্লাব কর্তারা? মিশরের তারকা ফুটবলার যে পজিশনে খেলে, সোনি নোর্দিও ঠিক ওই একই পজিশনের ফুটবলার।
কোচ শংকরলাল চক্রবর্তী ঠিক করেই নিয়েছিলেন, ষষ্ঠ বিদেশির জায়গায় একজন ভাল মানের বিদেশি ডিফেন্ডার নেবেন। সেই মতো কথাবার্তাও চলছিল বেশ কয়েকজন বিদেশির সঙ্গে। হঠাৎই তাল কাটে সোনির করা ফেসবুকের একটি পোস্টে। সেখানে আবেগমথিত সোনি দাবি করে, মোহনবাগান কর্তৃপক্ষ তাকে এই মরসুমের জন্য আগে আশ্বাস দিলেও আর যোগাযোগ করেননি। আর এতেই উদ্বেল হয়ে ওঠে মোহনজনতা।
আর ঠিক এখানেই আবেগের কাছে হার মানেন সদ্য নির্বাচিত সচিব স্বপনসাধন (টুটু) বসু । নিজেই দায়িত্ব নিয়ে রাজি করান কোচ শংকরলাল চক্রবর্তীকে। আর সোনিও রাজি হয়ে যায় মেডিক্যাল পরীক্ষা দিতে। তবে যতোই মেডিক্যাল পরীক্ষার কথা বলা হোক না কেনও, সেটা যে একরকম আই-ওয়াশ, তা ভালোই জানে মোহনবাগান সমর্থক থেকে শুরু করে সোনি নোর্দি নিজেও।
বেশ কয়েক বছর কলকাতা ময়দানে খেলে চতুর হাইতিয়ান বুঝে গিয়েছে, এখানে সমর্থকদের আবেগের কাছে বহু ক্ষেত্রেই আত্মসমর্পণ করেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তাই মায়ামিতে ছুটি কাটাতে গেলেও, সে যে অপারেশনের পর শারীরিক দিক দিয়ে একশো শতাংশ ফিট তা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগে যায় নিয়মিত নিজের শারীরিক কসরতের ভিডিও পোস্ট করে।
মেসির দেশে অপারেশন করে হাইতিয়ান যে সম্পূর্ণরূপে চোটমুক্ত তা প্রমাণিত করার চেষ্টা করতে থাকে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে যখন দেখে, ক্লাব কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা একরকম বন্ধই করে দিয়েছে।
এখন দেখা যাক, চিকিৎসাশাস্ত্র কী বলছে সোনির এই চোটের বিষয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অস্থিবিশারদ The News বাংলাকে জানিয়েছেন, “সোনির বাঁ গোড়ালিতে চোটের কারণে অস্ত্রপ্রচার করেছেন আর্জেন্টিনার এক শল্যচিকিৎসক। আর্জেন্টিনার চিকিৎসা বিজ্ঞান যে ভারতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার চেয়ে অনেক উন্নত তা মেনে নেওয়ার কোনও কারণ নেই”।
“ক্রিকেট হলে বলতে দ্বিধা করতাম না, সোনি আবার নিজস্ব ফর্ম ফিরে পাবে। কিন্তু যেহেতু খেলার নাম ফুটবল, যেখানে একজন মাঝমাঠের ফুটবলারকে একই গতিতে খুব কম করে দশ থেকে বারো মাইল দৌঁড়তে হয়, সেই কারণেই বলছি, ওর পক্ষে আগের ফর্মে ফিরে আসা একরকম অসম্ভব’। জানিয়েছেন ওই অস্থি বিশারদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাক্তন এক মোহনবাগান ফুটবলার বলেন, “এটা কলকাতা বলেই সোনির পাতা ফাঁদে পা দিলেন টুটুবাবু। এবং নিতান্তই আবেগের বশবর্তী হয়ে। শুনলাম সাত মাসের জন্য রেকর্ড অর্থে সই করানো হচ্ছে এই ফুটবলারকে। টাকাটা জলে ফেলা হল বলেই আমার বিশ্বাস।”
মোহনবাগান কোচ, কর্তারাও জানে ওর চোটের জন্য ওকে নেওয়া ভুল হবে যার জন্য এত টালবাহানা করছিল এতদিন। মেডিক্যাল না দিয়ে দলে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েও দেওয়া হয় ওকে। কিন্তু মোহনজনতার মাধ্যমে সোনির দেওয়া মাইন্ডগেমে শেষে হার মানতে হল গঙ্গাপাড়ের শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবটিকে। তাই সোনি আবার কলকাতায় আসছে কিছু সমর্থকের আবেগ কাজে লাগিয়ে। যে-কোনও টাফ ট্যাকলারের সামনে সোনি যে গুটিয়ে রাখবে নিজেকে, তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আই লিগে বিদেশি ফুটবলারদের যে তালিকা এখনও অবধি The News বাংলার হাতে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, শুধু ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার বোরখা গোমেজ পেরেজই নন, ওর মতোই বিধ্বংসী ডিফেন্ডার নিয়েছে এই বছর মিনার্ভা পঞ্জাব, চেন্নাই এফসি, কেরলের গোকুলাম এফসির মতো দলগুলি।
ইস্টবেঙ্গলের বোরখা, মিনার্ভার রোয়ান্ডান ডিফেন্ডার এইমব্লে নাবিমানা, চার্চিল ব্রাদার্সের ব্রাজিলিও ম্যাথাউস কাম্বুসি জাগেইরো ও নেরোকা এফসির প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গলী ব্রাজিলিয়ান এদুয়ার্দোদের সামনে পড়লে হাইতিয়ান তারকা মিডফিল্ডার কী করেন, এখন সেটাই দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে ফুটবলপ্রেমী মানুষ। আশঙ্কার দোলাচলে বাগান সমর্থকরাও।