The News বাংলা, হাওড়া: এলাকা প্লাস্টিক-পলিপ্যাক-থার্মোকল দূষণ থেকে মুক্ত করতেই হবে। আর তার জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি তাঁদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে, কি করা উচিত। আর সেটাই করে দেখাচ্ছে হাওড়ার শ্যামপুর ১ নং ব্লক।
আরও পড়ুনঃ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ‘আজাদ লড়াই’কে সম্মান নরেন্দ্র মোদীর
এবছর নভেম্বর মাসে শ্যামপুর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি যৌথভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে শ্যামপুর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি এলাকাকে প্লাস্টিক-পলিপ্যাক-থার্মোকল মুক্ত করতে হবে। এর জন্য ৩০শে নভেম্বর শ্যামপুর-১ ব্লকে এই ব্লকের সকল গ্রাম পঞ্চায়েত, ক্লাব ও বাজার কমিটিগুলিকে নিয়ে একটি সভা করা হয়।
আরও পড়ুনঃ জিএসটি কমাল মোদী সরকার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমছে
সেই সভায় সমগ্র শ্যামপুর-১ ব্লককে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের দূষণ থেকে মুক্ত করার অঙ্গীকার নেওয়া হয়। এর পরেই বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রা ও স্ট্রীট কর্ণার মিটিং করে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। লিফলেট বিতরণ করা হয়, গাছের চারা বিলি করা হয়। প্লাস্টিক-পলিপ্যাক-থার্মোকল বর্জনের আহ্বান করা হয়।
শীতের মরসুমে বহু মানুষ শ্যামপুর-১ ব্লকে আসেন বাইরে থেকে পিকনিক করার জন্যে এবং ট্যুরিস্ট হিসেবে। কারণ হাওড়া জেলার দুই বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট গাদিয়াড়া এবং গড়চুমুক এই ব্লকের মধ্যেই অবস্থিত। এছাড়াও শিবগঞ্জ, নবগ্রাম ইত্যাদি আরও বেশ কিছু জায়গা আছে।
২৫শে ডিসেম্বর থেকে ২৬শে জানুয়ারি পিকনিক আর পর্যটনের পিক সময়। এছাড়াও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিটি শনি-রবিবারেই বহু মানুষ আসেন। তাই এই বিশেষ দিনগুলোতে প্লাস্টিক-পলিপ্যাক-থার্মোকল মুক্ত রাখার জন্য বিশেষ সচেতনতা প্রচার শুরু করেছে প্রশাসন।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: ভোটের আগে বাংলার বিখ্যাত সাংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ‘সরকারি’ সন্ধি মমতার
২৫শে ডিসেম্বর, ৫৮ গেট, গাদিয়াড়া আর শিবগঞ্জে যারা পিকনিক করতে এসেছিলেন, তারা অন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলেন। সব জায়গাতেই শ্যামপুর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, সদস্য, কর্মচারীবৃন্দ, ভি.আর.পি ও স্বনির্ভর সংঘের সদস্য সদস্যাদের সঙ্গে নিয়ে এক যোগে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের থালা গ্লাস ব্যবহার বর্জন করার জন্য বিশেষ সচেতনতা অভিযান করল।
আরও পড়ুনঃ কলকাতা হাইকোর্টের অন্দরেই আটকে রইল বিজেপির রথ যাত্রা
সেখানে পিকনিকে আসা মানুষদের বোঝানো হয়েছে। রীতিমত শালপাতার থালা বাটি গ্লাসের স্টল করে পিকনিক পার্টিদের তা দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকেই থার্মোকল ব্যবহার না করে শালপাতা কিনেছেন। শুধু একদিনেই সংঘের সদস্যরা প্রায় ১১০০ শালপাতার থালা বিক্রি করেছেন। শ্যামপুর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির প্লাস্টিক-পলিপ্যাক-থার্মোকলের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ ঘোষণা জয়ী না হওয়া পর্যন্ত থামবে না বলেই জানিয়েছেন ব্লক কর্মীরা।
শ্যামপুর-১ ব্লক প্রকৃত অর্থেই নদীমাতৃক। হুগলী নদী এবং রূপনারায়ণ ও দামোদর নদ এই ব্লকের মাটিকে সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা করে রেখেছে অবিরত জলধারার মাধ্যমে। একই সাথে এই তিন নদ-নদী তাদের তীরবর্তী এলাকার সৌন্দর্যকে এক অসামান্য রূপ দিয়েছে যার টানে বাংলার তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন পর্যটন ও চড়ুইভাতির উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুনঃ দার্জিলিং টয় ট্রেনের সান্ধ্যকালিন যাত্রায় ট্যুর প্যাকেজ
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে বাইরে থেকে যারা এখানে আসেন পর্যটক হিসাবে এবং চড়ুইভাতি করতে তাঁরা চলে যাওয়ার সময় উচ্ছিষ্ট হিসাবে ফেলে যান অজস্র পলিব্যাগ, প্লাস্টিকের কাপ, থার্মোকলের থালা, বাটি ইত্যাদি নানান ধরণের অজৈব এবং অপচনশীল বস্তু যেগুলি শ্যামপুর-১ ব্লকের মাটি-জল-বাতাস-প্রকৃতিকে দূষিত ও বিষাক্ত করে তুলছে।
আরও পড়ুনঃ ৫ দিন বন্ধ ব্যাঙ্ক, উৎসবের সময় চরম সমস্যায় আমজনতা
সেই বিষে হারিয়ে যাচ্ছে মাছ সহ নানান জলজ প্রাণী, পাখি, গাছ-গাছালির মত প্রাকৃতিক সম্পদ যা আমাদের পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করছে, আর যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে মানব জীবনে। শুধু বাইরে থেকে আসা মানুষরাই নন, শ্যামপুর-১ ব্লকের অধিবাসীরাও জেনে বা না জেনে প্রতিদিন ওই সব অজৈব এবং অপচনশীল বস্তু ব্যবহার করছেন আর নিজেরাই নিজেদের চরম সর্বনাশ ডেকে আনছেন।
আরও পড়ুনঃ নেতার নামে তোলাবাজির অভিযোগে পাহাড়ে গ্রেফতার দুই
প্লাস্টিক-পলিব্যাগ-থার্মোকলে বুজে যাচ্ছে ছোট-বড় নিকাশী নালা, জমে থাকছে জল, সেখানে জন্ম নিচ্ছে মশা ও অন্যান্য বিষাক্ত পোকা-মাকড় আর তারা মারণ রোগের বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে মানুষের শরীরে।
আরও পড়ুনঃ লোকঠকানির লোন মাপ, রাহুলকে লজ্জায় ফেলে আত্মঘাতী কৃষক
এই পরিস্থিতিতে শ্যামপুর-১ ব্লকের পরিবেশকে, প্রাকৃতিক সম্পদকে, অধিবাসীদের বাঁচাতে শ্যামপুর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে সমগ্র শ্যামপুর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি এলাকাকে প্লাস্টিক, পলিব্যাগ, থার্মোকল ইত্যাদি অজৈব এবং অপচনশীল বস্তুজাত বিষ মুক্ত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তাই শ্যামপুর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের কাছে বিনীত অনুরোধ করা হয়, ‘এখন থেকে আমরা প্লাস্টিক, পলিব্যাগ, থার্মোকলকে বর্জন করতে শুরু করি । নিজেও ব্যবহার করবেন না, কাউকে করতেও দেবেন না’।
আরও পড়ুনঃ ‘মুসলিম’ নাম বদলে ‘রামরাজ্য’ আনতে উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
পিকনিক পার্টিদের শালপাতার থালা বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে ব্লক অফিসের তরফ থেকে। শালপাতার থালা গ্লাস বাটির স্টল খুলেছে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী। চলছে মানুষকে সচেতন করার কাজ। শ্যামপুর-১ ব্লক এর বিডিও সঞ্চয়ন পান বলেছেন, ‘প্রশাসনের উদ্যোগে সাড়া দিচ্ছেন স্থানীয় মানুষ ও আগত পর্যটক ও পিকনিক পার্টির সদস্যরা।
এই অভিযান চলবে পুরো পিকনিক সিজনেই। শ্যামপুর-১ ব্লক থেকে শিক্ষা নিক গোটা বাংলা, আশা পরিবেশকর্মীদের।