The News বাংলা: চাকরিই ছেড়ে দিলেন আইপিএস অলোক বর্মা। সিবিআই প্রধান থেকে অপসারণ করে দমকল দফতরের ডিজি পদে বদলি করে দেওয়ার পরেই প্রতিবাদে চাকরি ছাড়লেন এই আইপিএস। আর এই নিয়েই মোদী সরকারের দিকে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেন্টার ভিজিল্যান্স কমিশনের রিপোর্ট দেখে, বৃহস্পতিবারই দুর্নীতির অভিযোগে অলোক বর্মাকে সিবিআই প্ৰধান থেকে অপসারণ করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের সিলেক্ট কমিটি। সিবিআই প্রধান থেকে অপসারণ করে শুক্রবারই তাঁকে দমকল দফতরের ডিজির দায়িত্ব দিয়ে পাঠান হয়।
তারপরই অলোক বর্মা সংবাদমাধ্যমে নিজের মতামত জানিয়ে বলেন, ‘সিবিআই এর মত তদন্তকারী সংস্থার স্বাধীনতাকে রক্ষা করা উচিত। এই সংস্থার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা হয়েছিল। আমি তা বাঁচানোর চেষ্টা করেছি’। তাঁকে অপসারণ ও বদলির নির্দেশকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যা দেন অলোক বর্মা। এরপর চাকরি থেকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ
ঘুষ নেবার দায়ে সিবিআই হাতে গ্রেফতার হবেন সিবিআই এরই স্পেশ্যাল ডিরেক্টর
নরেন্দ্র মোদী সরকারের ইচ্ছে বহাল, ফের অপসারিত সিবিআই প্রধান
সিবিআই প্ৰধান থেকে সরিয়ে ১৯৭৯ সালের ব্যাচের আইপিএস অফিসার অলোক বর্মাকে দমকলের ডিজি পদে বদলি করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাঁর হাতে সিভিল ডিফেন্স ও হোম গার্ডের দফতরও দেওয়া হয়। তবে এর কোনওটাতেই যোগ না দিয়ে আইপিএস পদ থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার তাঁকে ফের সিবিআই প্রধানের পদে বসিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার কাজে যোগও দিয়েছিলেন অলোক বর্মা। কিন্তু মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার ফের সিলেক্ট কমিটি তাঁকে সরিয়ে দেয় সিবিআই প্রধানের পদ থেকে। করা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে দমকলের ডিরেক্টর জেনারেল। শুক্রবার কাজে যোগ না দিয়েই সেই পদ থেকে পদত্যাগ করলেন অলোক বর্মা।
অলোক বর্মা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সিবিআই প্রধানের দায়িত্ব সামলাবেন কিনা তা নিয়ে আলোচনার জন্য যে সিলেক্ট কমিটি ছিল, তার মাথায় ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি ছাড়া ওই কমিটিতে থাকার কথা বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
আরও পড়ুনঃ
ভারতের কৃষকের মেয়ে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ‘ভাবনার বিপ্লব’ ভাবনা কস্তুরীর হাত ধরে
তবে প্রধানমন্ত্রী থাকলেও বিরোধী দল কংগ্রেসের তরফে ছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং প্রধান বিচারপতির তরফে ছিলেন বিচারপতি একে সিকরি। সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চ অলোক বর্মাকে সিবিআই ডিরেক্টর পদে ফিরিয়ে দিয়েছিল, তার সদস্য ছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তাই তিনি নিজে আর উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে থাকেননি। প্রতিনিধি রেখেছিলেন সিকরিকে।
সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনের অভিযোগের ভিত্তিতে এই সিলেক্ট কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, বর্মাকে সিবিআই প্রধান থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও নরেন্দ্র মোদী ও বিচারপতি সিকরি অপসারণ এর পক্ষে ভোট দেন।
গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই দুই আইপিএস অফিসার অলোক বর্মা ও রাকেশ আস্থানার ঝগড়ায় ও তাতে মোদী সরকারের হস্তক্ষেপে প্রায় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশের এক নম্বর তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের অন্দর মহলে। অক্টোবরের ২৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সিদ্ধান্ত নেয় ছুটিতে পাঠানো হবে বিবাদমান দুই কর্তাকেই। সেই অনুযায়ী মোদীর নির্দেশে ২৩ অক্টোবর রাত প্রায় দুটোর সময়ে সিবিআই প্রধানের দায়িত্ব নেন নাগেশ্বর রাও।
আরও পড়ুনঃ
অশ্লীল গালাগাল দেবার জন্যই যুবককে নিজেদের ব্যক্তিগত গ্রুপে যোগ করেন নন্দিনী
প্রকাশ্যে গ্রুপ চ্যাট রেকর্ডিং, জেলাশাসকের স্ত্রীর ভাষাও সমান অশ্লীল
এই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। রাহুল গান্ধী সোজাসাপটা অভিযোগ করেন, রাফায়েল নিয়ে তদন্ত করতে চাইছিলেন বলেই অলোক বর্মাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান অলোক বর্মাও।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে জিতে ফের সিবিআই প্রধান হলেও বুধবার ফের তাঁকে সরিয়ে দেয় সিলেক্ট কমিটি। আর শুক্রবার কোন নতুন দায়িত্ব না নিয়ে একেবারে আইপিএস এর চাকরিই ছেড়ে দিলেন অলোক বর্মা।
৩১ জানুয়ারি অবসর নেওয়ার কথা ছিল অলোক বর্মার। তার ২০দিন আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। ইস্তফা দেওয়ার আগে মুখ খোলেন অলোক বর্মা। সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে জানান, ‘মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে সরানো হয়েছে। তাঁকে সরানোর মধ্যে দিয়ে সংস্থার স্বাধীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বলে দাবি করেন ক্ষমতাচ্যুত সিবিআই অধিকর্তা অলোক বর্মা’।
আরও পড়ুনঃ
একদিনে বহিষ্কৃত দুই তৃণমূল সাংসদ, দিদিকে ছেড়ে মোদীর দলে আর কে কে
মমতার বাছাইয়ে কারা হবেন বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী
সিবিআইয়ের প্রাক্তন ডিরেক্টর জানান, ‘দেশের বড়বড় দুর্নীতির তদন্ত করে থাকে সিবিআই। ফলে এই সংস্থার স্বাধীনতা থাকা উচিত। আমি সংস্থার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে চেয়েছিলাম। সেটা বজায় রাখতে চেয়েছিলাম। অভিযোগকারীর একার মিথ্যে বয়ানেই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল’।
অলোক বর্মার জায়গায় পুর্নবহাল করা হয়েছে নাগেশ্বর রাওকে৷ ১৯৮৬ সালের ওড়িশা ক্যাডারের এই আইপিএস অফিসার সিবিআই অধিকর্তার দায়িত্ব নিয়েই অলোক বর্মার নেওয়া সব ট্রান্সফার অর্ডার বাতিল করে দেন। এদিকে সিবিআই অধিকর্তা হিসাবে নাগেশ্বর রাওয়ের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।
অলোক বর্মার এই অপসারণ ও পদত্যাগ নিয়ে আসরে নেমেছেন বিরোধীরা। আইপিএস এর চাকরি ছেড়ে অলোক বর্মা, লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের হাতে সরকারের বিরুদ্ধে শাণিত অস্ত্র তুলে দিলেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুনঃ
সুপ্রিম রথ জেতার অপেক্ষায় কলকাতায় নরেন্দ্র মোদী, শিলিগুড়িতে অমিত শাহ
ঐতিহাসিক কুম্ভমেলা সম্পর্কে একনজরে সব কিছু জেনে নিন
কুম্ভমেলায় বিশ্বরেকর্ড গড়ল যোগীর রাজ্য, তৈরি হল আস্ত একটা শহর
মোদীর প্রকল্পে আর টাকা দেবেন না মমতা, কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক তলানিতে
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।