কি কান্ড! পুরো ভোলবদল! জামাই আদর পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রিগেড থেকে ফিরেই ফের উল্টো সুর দিদির ভরসার দুই ভাইয়ের। মহাজোটে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার অনেক। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ে নামার জন্য ঠিক হয়েছে ভোটের পর মহাজোটের প্রধানমন্ত্রী ঠিক হবে। মমতার ব্রিগেডেও এমনটাই জানিয়েছিলেন সব দলের নেতারাই। কিন্তু নিজের নিজের রাজ্যে ফিরেই বেমালুম সুরবদল নেতাদের। আবার রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী করার কথা বলে পাল্টি মহাজোটের দুই নেতার।
আরও পড়তে পারেনঃ বিহারী ভোট ধরতে বাংলায় বাবুলের বিরুদ্ধে বিহারীবাবু
দেশের পরবর্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুল গান্ধীকেই দেখতে চায় তামিলনাড়ু। ব্রিগেড থেকে ফিরেই আরও একবার নিজের মত স্পষ্ট করে দিলেন ডিএমকে সুপ্রিমো এমকে স্টালিন। অন্যদিকে বাড়ি ফিরেই ব্রিগেড কাঁপানো আর এক নেতা লালুপুত্র তেজস্বীর দাবি, মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকারকে হারানোর ক্ষমতা রাহুল গান্ধীর রয়েছে। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ডিএমকে নেতা এম কে স্টালিন ও মমতার ভরসার ভাই তেজস্বীর ডিগবাজিতে বেশ ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতারাও।
মমতার ব্রিগেড মঞ্চে একবারও কেউ বলেন নি, মহাজোটের কাউকে প্রধানমন্ত্রী করার কথা। রব উঠেছিল, প্রধানমন্ত্রী এখন নয় ভোটের পর ঠিক হবে। কিন্তু মমতা বা মায়াবতী নয়, ব্রিগেড থেকে ফিরেই ডিএমকের স্ট্যালিন ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তেজস্বী দুজনেই বলে দিলেন, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে সরকার গড়ার কথা। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে মমতার মনোভাব জেনেই ব্রিগেড মঞ্চে বিষয়টি এড়িয়ে যান স্ট্যালিন-তেজস্বীরা। আর এখানেই মহাজোটের দিকে সমালোচনার তীর বিজেপির তরফ থেকে।
আরও পড়তে পারেনঃ মার্চেই শুরুতেই ভারতে লোকসভা ভোটের ঘোষণা
শনিবারের মোদী বিরোধী ব্রিগেড সমাবেশে মহাজোটের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর নাম নেয়নি কোনও নেতাই। মমতার ব্রিগেডে অন্য কারোর নাম নেওয়াটাই অস্বস্তির ছিল। তাই রেখে ঢেকেই জোট নিয়ে কথা বলেছিলেন নেতারা। কিন্তু ব্রিগেড ছেড়ে বাড়ি ফিরতে আবার স্বমূর্তী নেতাদের।
ব্রিগেডের মঞ্চে মহাজোটের বার্তা দিয়েছিলেন ডিএমকে নেতা স্ট্যালিনও। ফলে জল্পনা ছিল যে নিজের আগের মত থেকে সরে এসেছেন স্টালিন। কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। গত ডিসেম্বরেই চেন্নাইয়ের একটি রাজনৈতিক সমাবেশে তিনি জানিয়েছিলেন, তামিলনাড়ুর মানুষ কংগ্রেস নেতা রাহুলকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। ব্রিগেড থেকে ফিরেই আবার সেই একই দাবি।
শুধু তাই নয়, এবিষয়ে বন্ধু দলগুলির কাছে সমর্থনও চাইলেন ডিএমকে সভাপতি। তাঁর দাবি, কেন্দ্র থেকে বিজেপি শাসনের অবসান ঘটানোর ক্ষমতা কংগ্রেসে সভাপতির রয়েছে। স্ট্যালিনের প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। রাহুল গান্ধীকে ডিএমকে সভাপতি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার প্রস্তাব দিলেও তাতে একমত নয় বিরোধী শিবিরের একটা অংশ। কংগ্রেস সভাপতিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে লোকসভা ভোটে যেতে নারাজ বিরোধী শিবিরের এই অংশ। স্ট্যালিনের প্রস্তাবে সায় নেই তাদের।
আরও পড়তে পারেনঃ
বাংলায় ক্ষোভ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়াচ্ছে মোদী সরকার
ভোটের আগে মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে মোদী সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট
পাশাপাশি বিরোধী দলগুলির প্রতি তাঁর আবেদন, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে রাহুল গান্ধীর হাত শক্ত করুন। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে বিরোধী শক্তিগুলির হাত মেলানোর প্রয়োজন রয়েছে। স্ট্যালিনের যুক্তি, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে একজোট করার জন্য রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা প্রয়োজন।
‘যদি মানুষ চান তাহলে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না’, সোমবার কংগ্রেস সভাপতির প্রধানমন্ত্রী হওয়া প্রসঙ্গে আবার একথাই বললেন লালু পুত্র তেজস্বী যাদব। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তেজস্বী বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাহুল সব দিক থেকেই যোগ্য। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিভিন্ন কঠিন প্রশ্নের জবাব ঠাণ্ডা মাথায় দেন রাহুল।
আরও পড়তে পারেনঃ
শ্রীজাত হেনস্থা ঘটনায় বাংলার বুদ্ধিজীবিদের মুখোশ খুললেন তসলিমা
ব্যর্থ মহাজোটে ত্রিমুখী লড়াই, উত্তরপ্রদেশে একা লড়বে কংগ্রেস
পাশাপাশি এদিন ফেডেরাল ফ্রন্টের কথা উল্লেখ করে লালুপুত্র বলেন, বিজেপিকে রুখতে আমরা সব বিরোধীরা এক হয়ে লড়ব। আর দেশের মানুষ যদি চান রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে তাহলে কেউই তাঁদের আটকাতে পারবে না। নিজের দাবির পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন তেজস্বী। তাঁর মতে, বিজেপি-র পরে কংগ্রেসই এখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। তাছাড়া গোটা দেশব্যাপী অস্তিত্ব এবং গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে কংগ্রেসের। ফলে, বিরোধী দলগুলির মধ্যে লোকসভা নির্বাচনে সবথেকে বেশি আসন জেতার সম্ভাবনা রয়েছে কংগ্রেসেরই।
ফলে ব্রিগেড থেকে ফিরেই মহাজোটের দুই নেতার কংগ্রেসের দিকে পাল্টি খাওয়ায় ব্রিগেডের সভাই যেন হাস্যকর হয়ে পড়ল। তবে মমতার ‘মান’ রেখেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার ছেলে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী। তিনি ব্রিগেড থেকে ফিরে বলেছেন মমতা প্রধানমন্ত্রী পদের যোগ্য নেতা।
শনিবার ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবে, কে নেতা হবে, তা বড় কথা নয়। আমাদের এই ইউনাইটেড ইন্ডিয়া জোটে নেতার অভাব নেই। সবাই নেতা। সবাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন আমাদের নেতার অভাব নেই। বরং বিজেপিতে একজন প্রধানমন্ত্রী, একজন মাত্র সভাপতি। তাঁর সঙ্গে ব্রিগেডে তাল মেলান সব নেতাই।
কিন্তু বাড়ি ফিরেই যেভাবে আবার কংগ্রেসের হয়ে বা রাহুলের হয়ে গলা ফাটাতে শুরু করলেন মমতার ভরসার মহাজোটের নেতারা, তাতে ব্রিগেডের ঐক্যের পরেও ফের মহাজোটের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।
আরও পড়তে পারেনঃ
বাংলায় দুর্গা পুজো বন্ধ করার চক্রান্ত করছে মোদীর বিজেপি, মারাত্মক অভিযোগ মমতার
মমতার বাছাইয়ে কারা হবেন বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী
মোদীর প্রকল্পে আর টাকা দেবেন না মমতা, কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক তলানিতে
একদিনে বহিষ্কৃত দুই তৃণমূল সাংসদ, দিদিকে ছেড়ে মোদীর দলে আর কে কে
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।