ফের বাংলা তথা ভারতের মানুষের আবেগ নিয়ে ছেলেখেলা কংগ্রেসের। নেতাজির জন্মদিনে আবার মৃতুদিনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিল রাহুলের কংগ্রেস। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী নিজেই এই ছেলেখেলায় তাল মিলিয়েছেন। রাহুলের টুইট দেখে সাধারণ মানুষের অভিযোগ এমনই। ক্ষুব্ধ বাংলার আমজনতা।
“তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে নেতাজির” স্বাধীনতার পর থেকে এটাই প্রমান করতে চায় কংগ্রেস। বুধবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৩তম জন্মদিন পালনে টুইট করে আবার সেই মৃত্যুর কথা মনে পরিয়ে দিল রাহুল ও কংগ্রেস। তাঁর মৃত্যুদিন উল্লেখ করে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিল কংগ্রেস। তাল মেলালেন রাহুল।
আরও পড়তে পারেনঃ মার্চেই শুরুতেই ভারতে লোকসভা ভোটের ঘোষণা
বুধবার ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে একটি টুইট করেছে কংগ্রেস, যেখানে তাঁর মৃত্যুদিন উল্লেখ করা হয়েছে। সুভাষচন্দ্র বসুর ছবির সঙ্গেই উল্লেখ রয়েছে মৃত্যুদিন ১৮ অগাস্ট ১৯৪৫ তারিখটি। এই ছবিটি দিয়ে নিজেও টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এই টুইট করে নেতাজির মৃত্যু নিয়ে ফের নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল কংগ্রেস, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। আর নিয়েই বিতর্কে গোটা দেশ।
নেতাজির মৃত্যু আজও রহস্যাবৃত। তাঁর মৃত্যু এখনও বাংলার মানুষের কাছে আবেগের। নেতাজির মৃত্যু নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও দিনক্ষণের ঘোষণা করেনি ভারত সরকারও। এই নিয়ে একাধিক তদন্ত হওয়ার পরও নেতাজির অন্তর্ধান নিয়ে রহস্য থেকেই গিয়েছে। আর সেই নিয়ে কোন ছেলেখেলা একদম মেনে নেন না নেতাজি প্রেমীরা।
আরও পড়তে পারেনঃ
বাংলায় ক্ষোভ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়াচ্ছে মোদী সরকার
ভোটের আগে মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে মোদী সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান বেশ কিছু পরস্পর বিরোধী তথ্যের সামনে সবসময় দাঁড়িয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগের মুহূর্তে জাপান সরকার ঘোষণা করে দেয় যে, ১৯৪৫ সালের ১৮ অগাস্ট তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়।
বলাই বাহুল্য ঘোষণাটি নিয়ে আজও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। স্বাধীন ভারত সরকার নিযুক্ত কমিশনগুলি এবং বেসরকারি উদ্যোগে আয়োজিত তদন্ত কমিটিগুলি অনেক খুঁজেও বিমান দুর্ঘটনায় আদৌ তাঁর মৃত্যু হয়েছিল কি না, সেই নিয়ে নিঃসন্দেহ হতে পারে নি।
আরও পড়তে পারেনঃ পৃথিবী জুড়ে কমছে শিশু, চরম সমস্যায় বিশ্ব সমাজ
এমনকি ভারত সরকার নিযুক্ত তৃতীয় কমিশন(মনোজ মুখার্জী কমিশন) ২০০৬ সালের মে মাসে তাদের রিপোর্ট পেশ করে ভারতের সংসদ ভবনে। সেখানে সন্দেহ প্রকাশ করা হয় যে, নেতাজির তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে গা ঢাকা দেওয়ার কথা ধামাচাপা দিতেই মৃত্যুর কথা প্রচার করা হয়।
নেতাজি সুভাষ টোকিও যাওয়ার পথে ১৯৪৫ এর ১৮ অগাস্ট মাৎসুয়ামা এরোড্রামে(অধুনা সোংসান বিমান বন্দর) একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। শেষকৃত্য হওয়ার পর মৃতের ছাইভস্ম রেনকোজি মন্দিরে রেখে দেওয়া হয়। ৫ দিন খবরটি চেপে রেখেছিল জাপান সরকার। এই সংবাদটি যে অসত্য তা নিয়ে সর্বপ্রথম সংশয় প্রকাশ করে ব্রিটিশ সরকারই।
আরও পড়ুনঃ দাউদ ইব্রাহিমকে হত্যার পরিকল্পনা করায় ডি কোম্পানির হাতে পাকিস্তানে খুন
এই সংশয়ের কেন্দ্রে ছিলেন ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেল। তথাকথিত দুর্ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৮ অগাস্ট ১৯৪৫ এ, আর রেডিওতে খবরটি প্রচারিত হয়-২৩ অগাস্ট ১৯৪৫। পরদিন লর্ড ওয়াভেল তার ডাইরিতে লেখেন, “বিমান ধ্বংস হওয়ায় সুভাষচন্দ্র মারা গিয়েছেন বলে জাপান থেকে যে ঘোষণা করা হয়েছে তার সত্যতা সম্পর্কে আমি সন্দিগ্ধ। তিনি যদি আত্মগোপন করতে চান তবে এ ধরণের কথাই প্রচার করা হবে”।
আরও পড়তে পারেনঃ বিহারী ভোট ধরতে বাংলায় বাবুলের বিরুদ্ধে বিহারীবাবু
৯০ এর দশকে বাজপেয়ী সরকারের আমলে গঠিত মুখার্জী কমিশনের প্রধান বিচারপতি মনোজ মুখার্জী তদন্ত চলাকালীন নিজেই তাইওয়ান যান এবং জানতে পারেন ১৮ অগাস্ট ১৯৪৫ এ কোনো বিমান দুর্ঘটনা ঘটেই নি। এর আগে সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালও তাঁর ব্যক্তিগত তদন্তে তেমনই ঈঙ্গিত দিয়েছিলেন।
ব্রিটিশ সরকার বেশ কিছু গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছিল সেই সময়। তারা দেখে সুভাষ বোস সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যে জাপান সরকারের বয়ান পরস্পর বিরোধী। সরকারী ভাবে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসে জানিয়ে দেয় বসুর মৃত্যু সংবাদ মেনে নিতে তারা অস্বীকৃত।
আরও পড়তে পারেনঃ রাজ্যের হাতে টাকা নেই বাজারে ধার, তারপরেও বিধায়কদের ভাতা বাড়ছে
কংগ্রেস মনে করে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ১৯৪৮ সালের ১৮ই আগস্ট। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন, এই বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি। তিনি অন্তর্ধানে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু এখনও রহস্যাবৃত।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় আসার পর মোদী সরকার ২০১৫ সালে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য সম্পর্কিত নথি খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটিও এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি। এমন অবস্থায় নেতাজির মৃত্যুদিন উল্লেখ করে টুইটে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিল কংগ্রেস ও রাহুল।
রাহুলের টুইটের পর তাঁকে আক্রমণ করেন বিজেপি নেতারাও। আর এইভাবে নেতাজির মৃতুদিন নিয়ে ছেলেখেলা করায় ক্ষুব্ধ বাংলার আমজনতা। রাহুলকে এইজন্যই ‘পাপ্পু’ বলে রাজনৈতিক নেতারা, বলেছেন বিরক্ত বাংলার মানুষ।
আরও পড়তে পারেনঃ
আরও পড়তে পারেনঃ ব্রিগেড থেকে ফিরেই ভোলবদল, মমতা নয় রাহুলকেই প্রধানমন্ত্রী চাইলেন নেতারা
পাহাড়ে মোর্চা বিজেপির সঙ্গেই, গোপন আস্তানা থেকে বার্তা বিমল গুরুংয়ের
শ্রীজাত হেনস্থা ঘটনায় বাংলার বুদ্ধিজীবিদের মুখোশ খুললেন তসলিমা
বাংলায় দুর্গা পুজো বন্ধ করার চক্রান্ত করছে মোদীর বিজেপি, মারাত্মক অভিযোগ মমতার
মমতার বাছাইয়ে কারা হবেন বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী
মোদীর প্রকল্পে আর টাকা দেবেন না মমতা, কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক তলানিতে
একদিনে বহিষ্কৃত দুই তৃণমূল সাংসদ, দিদিকে ছেড়ে মোদীর দলে আর কে কে
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।