শিলিগুড়ি: স্বপ্নের মায়াজালে বন্দী কালিপুজোয় এবার সাধারণ নারীর পুজো। মা কালির পাশাপাশি এবার সাধারণ নারীকেও পুজো করার, সম্মান দেবার একটা বার্তা দেওয়া হচ্ছে শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার তরুন সংঘ ক্লাবের এবারের কালিপুজোয়।
স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে কেউ একজনকে টপকে ওপরে উঠে যায়। কেউ বা আবার স্বপ্ন সফল না হওয়ায় অতলে হারিয়ে যায়। সেই স্বপ্নকে নিয়েই শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার তরুন সংঘ ক্লাবের এবারের কালিপুজোর থিম “স্বপ্ন”। মানুষের সেই স্বপ্নলোককে আলোকোজ্জল করার জন্য চন্দননগরের আলোকসজ্জার সম্ভারে সমৃদ্ধ করে তোলা হচ্ছে। কলকাতার কুমোরটুলি থেকে রবিবারই প্রতিমা নিয়ে আসা হয়েছে। মায়ের মুর্তিতেও থাকছে নারীকে সম্মানিত জায়গায় স্থান দেওয়ার স্বপ্ন।
আরও পড়ুন: ৩০০ বছরের ডাকাতে কালির হাড় হিম করা কাহিনি
শিলিগুড়ির মধ্যে বিগ বাজেটের কালিপুজোয় সেরার তকমা পাওয়া ক্লাবগুলির মধ্যে অন্যতম হাকিমপাড়ার তরুন সংঘ। প্রতি বছর অভিনবত্বে মানুষের মন কেড়ে নেয় এই ক্লাবের পুজো। দুর্গাপুজোর অনেক আগে থেকেই এখানকার পুজোর মন্ডপসজ্জা শুরু হয়ে যায়। গত বছর কালিপুজো শেষ হওয়ার পর থেকেই ক্লাব কর্তৃপক্ষ এ বছরের পুজোর থিমের পরিকল্পনা শুরু করেছিল।
আরও পড়ুনঃ অজানা কাহিনির আড়ালে সিদ্ধপিঠ তারাপীঠের তারা মা
মুলত মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যা দেখে তাকেই “স্বপ্ন” নাম দিয়ে থাকে। কিন্তু স্বপ্ন হল, মানুষ ভবিষ্যতে যা হতে যায়। আসলে সব মানুষের স্বপ্নই হল বর্তমান অবস্থা থেকে আরও একটু ওপরে ওঠা। এরকম উপরে উঠতে উঠতে যে কাউকে পায়ের তলায় পৃষ্ট করতে কাল বিলম্ব করে না সে। যে যতই ওপরে উঠুক না কেন আরও আরও ওপরে ওঠার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে চলে। অনেকে ওপরে ওঠার সিড়িগুলো তরতর করে বেয়ে গেলেও অনেকে তা পারে না। দেশ বিদেশে ছড়িয়ে আছেন এমন অনেক ব্যাক্তিত্ব যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে ওপরে উঠে নাম করে কয়েকশত বছর পরে আজও অম্লান।
সেই সমস্ত স্মৃতি-বিস্মৃতির মধ্যে থাকা মানুষগুলিকে পুনরায় মানুষের মনে জাগিয়ে তুলতে, তরুন সংঘ ক্লাব তাদের ছবি ও মুর্তিতে একটি স্টেজ তৈরী করেছে। অন্যদিকে বড় বড় বিল্ডিংয়ের সারি চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। মানুষের বড় হওয়া মানে শুধু নাম ও যশে নয় তা প্রতিপত্তিতেও। সেই ভাবনাতেই এই প্রাসাদপ্রতিম বিল্ডিংয়ের সারি।
কিন্তু এত ওপরে ওঠার পরও নারীদের যোগ্য সম্মানে সম্মানিত করা হয় না আজও। পথে ঘাটে অহরহ নারীরা শ্লীলতাহানীর শিকার হচ্ছে। মানুষ মায়ের পুজো করলেও নারীরা আজও ধর্ষন ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়। তাই মায়ের মুর্তির সামনেই রাখা হয়েছে শ্বেত শুভ্র বসনা সাধারণ নারীর মুর্তি। মায়ের পাশাপাশি সাধারণ নারীকেও পুজো করার, সম্মান দেবার একটা বার্তা দিতেই প্রতিমাতে অভিনবত্ব আনা হয়েছে, বলে জানান তরুন সংঘ ক্লাবের শ্যাম সাহা, ভবতোষ সাহা, তপন সাহারা।
আরও পড়ুন: ৪ দিনের পুজো এখন ১৫ দিনের জমজমাট উৎসব
প্রতিমা শিল্পি আর কেউ নন, কলকাতার কুমোরটুলির নামকরা শিল্পি মোহনবাঁশি রুদ্রপাল। ক্লাব সদস্য অতনু দাম জানান, এ বছরের কালি পুজো বিগত ৬৪ বছরকেও ছাপিয়ে যাবে। পুজোর থিমের মধ্যে যেমন রয়েছে অভিনবত্বের ছোঁওয়া, ঠিক তেমনই বিসর্জনের দিনটিতেও থাকবে অভিনবত্ব। কার্নিভালের আদলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে করতে বিসর্জনের পথে এগিয়ে যাবেন মা।
একদিকে থাকবে পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য শিল্পিরা, অন্যদিকে থাকবে স্থানিয় নেপালী নৃত্য ও ড্রাগন নৃত্যশিল্পিরাও। থাকবে বিভিন্ন রকমের সমাজ সচেতনতামুলক বার্তার ব্যানার ও ফেস্টুন। এছাড়া সবার প্রথমে প্রতিবারের মত এ বছরও, ক্লাবের পতাকা নিয়ে ছটি ঘোড়া ছুটবে। ৪০ টি ঢাকের তাল মায়ের যাত্রাপথকে করে তুলবে আরও আকর্ষণীয়।
সোমবার পুজোর উদ্বোধনের দিন থেকে শুরু করে ভাইফোঁটার পরদিন বিসর্জনের দিন পর্যন্ত পুলিশের পাশাপাশি থাকবে দুটো শিফটে ৩০০ জনেরও বেশি ভলেন্টিয়ার৷ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সবদিক নজরবন্দি করার জন্য থাকবে ১২টি সিসি ক্যামেরা ও যথেষ্ট পরিমানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। স্বপ্ন, ঘুমিয়ে নয়, চোখ কান ও মনকে খোলা রেখে তরুন সংঘ ক্লাবের মন্ডপ সজ্জায় দেখতে পাওয়া যাবে কালিপুজোর কয়েকটা দিন। কলকাতার কার্নিভালের আদলে এবার কলাীপুজোর বিসর্জনে নজর কাড়বে শিলিগুড়ি, দাবি তরুন সংঘ ক্লাবের কর্তাদের।