বেশ কিছুদিন হল ‘রাম’কে ছেড়েছেন লক্ষণ। না রাময়নের রাম-লক্ষণ নয়। সেপ্টেম্বরেই গেরুয়া শিবির ছেড়েছিলেন প্রাক্তন কমরেড লক্ষণ শেঠ। শুভেন্দু অধিকারী ও স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে নেয় নি। বিজেপি ছেড়ে সিপিআইএম থেকে বিতাড়িত প্রাক্তন কমরেড এখন বাকি থাকা কংগ্রেসের দিকে। আর একসময়ের সেই দাপুটে লক্ষণ শেঠকে নিয়ে তুলকালাম শুরু হয় প্রদেশ কংগ্রেসে। এবার প্রাক্তন কমরেড যোগ দিচ্ছেন কংগ্রেসে, হতে পারেন তমলুক কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী।
আরও পড়ুনঃ বাংলার ভোটে উড়ছে টাকা, ৪২ আসনে নজরদারিতে ৪৪ জন ব্যয় পর্যবেক্ষক
বৃহস্পতিবারই কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছেন সিপিআইএম ও বিজেপি ফেরত প্রাক্তন সাংসদ লক্ষণ শেঠ। এমনটাই শোনা যাচ্ছে কংগ্রেস সূত্রে। নানা মামলায় অভিযুক্ত তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষণ শেঠের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম-গণহত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগও আছে। সিপিআইএম তাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। এবার পা বাড়িয়েছেন বাকি থাকা কংগ্রেসের দিকে। সম্ভবত বৃহস্পতিবারই কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন লক্ষণ।
স্কুল সার্ভিস নিয়ে পড়ুনঃ মমতার কথাতেও ওঠেনি অনশন, পুলিশি অত্যাচারের মুখে স্কুল সার্ভিস অনশনকারীরা
সিপিআইএম বহিষ্কার করার পর নতুন দল, তারপর বিজেপিতে। তবে, সুবিধা করতে পারেন নি। ফিরে পান নি বাম আমলের সেই দাপট। অন্যদিকে লক্ষণ শেঠকে নিয়ে মানুষের নিন্দার মুখে পড়েছিল বিজেপি। বলাই যায়, বিজেপিতে থাকাকালিন লক্ষন শেঠ হলদিয়ার বুকে রাজনৈতিক ভাবে তেমন কোন দাগ কাটতে পারেন নি। এমনকি লক্ষন শেঠকে নিয়ে বিজেপির মধ্যেও প্রচুর বিতর্ক হয়।
স্কুল সার্ভিস নিয়ে পড়ুনঃ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারাই শুনবে স্কুল সার্ভিস কেলেঙ্কারির ঘটনা
জেলাস্তরেও বিজেপি কর্মীরা হলদিয়ার প্রাক্তন সাংসদকে পাত্তা দিতেন না। নন্দীগ্রামের গনহত্যার জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিজেপি কর্মীরাও লক্ষণ শেঠকে প্রকাশ্যে দায়ি করতেন। এর ফলে হলদিয়ার প্রাক্তন সাংসদ দলে ক্রমেই একা হয়ে পড়েছিলেন। রাজনৈতিক ভাবেও তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ। ফলে বিজেপি ত্যাগ করেন এই নেতা।
আরও পড়ুনঃ নামে ১১টা ফৌজদারি মামলা, খুন শ্লীলতাহানি মামলার আসামি লোকসভায় প্রার্থী কেন
লক্ষণ শেঠ ও জেলা জুড়ে থাকা তার কয়েক হাজার অনুগামী লক্ষণের তৈরি ‘ভারত নির্মান’ পার্টি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে পুরোনো বিজেপি ও নতুন বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় জেলা জুড়ে। পাশাপাশি, লক্ষণের হাত ধরে পুরোনো সিপিএম নেতারা গেরুয়া পোষাক পরলেও তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে তাদের পুরোনো শত্রুতার কারনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হতে থাকে বিজেপি কর্মীরা।
আরও পড়ুনঃ কাশ্মীর কি কলি, নজিরবিহীন কটাক্ষ তৃণমূল নেত্রী মমতাকে
যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে বিজেপি। ওদিকে হলদিয়া পুরসভা ভোটের পর দলে লক্ষণ শেঠের গুরুত্ব ক্রমশ কমতে থাকে। নন্দীগ্রাম কান্ডে অভিযুক্ত লক্ষণ বাবুকে দলে নেওয়ার কারণে জেলায় বিজেপির ভাবমূর্তি খারাপ হতে থাকে জেলার বড় অংশের মানুষের কাছে। তা থেকে মুক্তি চাইছিল বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে লক্ষণ শেঠের বিজেপি ছেড়ে দেওয়ার ফলে, খুশী হয়েছিলেন জেলার বিজেপি কর্মীরা।
আরও পড়ুনঃ কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে ২ দিনের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করার চ্যালেঞ্জ মমতার
বিজেপির মায়া কাটিয়ে এবার ‘নন্দীগ্রামের খলনায়ক’ এখন কংগ্রেসের পথে। আর এই নিয়েই কংগ্রেস শিবিরে শুরু হয় তীব্র মতান্তর। ফলে থমকে যায়, ‘হাতে’ লক্ষণ পাওয়ার ব্যাপারটা। অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন অনেকবার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও কংগ্রেসে ঢোকা সম্ভব হয় নি। অধীর চৌধুরীর আপত্তি ছিল লক্ষণে। তবে শোনা যাচ্ছে নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর অত ছুঁতমার্গ নেই লক্ষণের ব্যাপারে।
আরও পড়ুনঃ মহাকাশে শত্রুর স্যাটেলাইট ধ্বংসে ভারতের হাতে অ্যান্টি স্যাটেলাইট অস্ত্র, বললেন মোদী
সোমেন মিত্রর সঙ্গে ইতিমধ্যেই একাধিকবার বৈঠকও করেছেন লক্ষণবাবু। তবে প্রদেশ কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃত্ব লক্ষণ শেঠকে দলে গ্রহণ দেওয়ার সিদ্ধান্তে কড়া আপত্তি জানিয়েছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরের খবর, এই আপত্তিকে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরে শীর্ষস্তর থেকে জানানো হয়, পূর্ব মেদিনীপুরে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করানোর লক্ষ্যেই লক্ষণ শেঠকে দলে গ্রহণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ভোটের আগে স্যাটেলাইট অস্ত্রের ঘোষণা কেন, মোদীর বিরুদ্ধে কমিশনে নালিশ তৃণমূলের
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন মামলায় ফেঁসে থাকা লক্ষণ শেঠের একটা রাজনৈতিক পরিচয় খুব দরকার। সিপিআইএম থেকে বিতাড়িত, গেরুয়া ছাড়ার পর একটা দলের ঝান্ডা এখনই দরকার লক্ষণের। স্বনামে ও বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক লক্ষণের নাম ও সম্পত্তি বজায় রাখতে রাজ্যের একটা নামি রাজনৈতিক দল দরকার। নাম, প্রতিপত্তি ও সম্পত্তি টিকিয়ে রাখতে রাজনীতির ব্যবসা ছাড়া আর কি আছে?
আরও পড়ুনঃ ২৮ দিনে টনক নড়ল মমতার, স্কুল সার্ভিস অনশন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী
লোকসভা ভোটের আগেই লক্ষণকে হাতে চায় সোমেনের কংগ্রেস। রাজ্য সভাপতি হবার পরেই, তৃণমূলকে ছাড়া বাংলায় একা লড়ার কথা জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে বলে এসেছেন সোমেন মিত্র। আজ বৃহস্পতিবারই কংগ্রেসে যোগ দেবার কথা লক্ষণ শেঠের। তাঁকে লোকসভা ভোটে তমলুক আসন থেকেই দাঁড় করান হবে বলেই রাজনৈতিক জল্পনা চলছে।
আরও পড়ুনঃ নির্বাচন কমিশনের নতুন অ্যাপ সি ভিজিল, জনতার অভিযোগে ১০০ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।