পুলওয়ামায় জঙ্গি আক্রমণে নিহত জওয়ানদের উদ্দেশে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের রেশ এবার সরাসরি চলে এল খেলার মাঠে। রাঁচীতে শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় একদিনের ম্যাচে বিরাট কোহালিদের মাথায় প্রথাগত ইন্ডিয়া ক্যাপের বদলে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় সেনার টুপি। খেলার মাঠে সেনার টুপি পরে নামাটাও ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম।
এর আগে নিহত জওয়ানদের জন্য নীরবতা পালন বা জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে কালো ব্যান্ড পরে খেলোয়াড়েরা নেমেছেন। কিন্তু এবার নজিরবিহীন দৃশ্য দেখল রাঁচী। নিহত জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে ভারতীয় ক্রিকেট-বাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে এতকালের ব্যবহৃত টুপিটাই বদলে দিল কোহালি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মাথায় আজ ভারতীয় সেনার টুপি।
ভারতীয় বোর্ডই ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে সেনার টুপিতে কোহলিদের মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শত্রুপক্ষ বা জঙ্গীদের থেকে নিজেদের আড়াল করতে ঝোপঝাড়ের সঙ্গে মিশে থাকা যে সবুজ এবং খয়েরি রংয়ের টুপি ব্যবহার করে সেনাবাহিনী, ধোনির ঘরের মাঠে সেটাই পরতে দেখা যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের। সমস্যা ছিল, দলের সব সদস্যের জন্য দ্রুত এই বিশেষ ধরনের টুপির ব্যবস্থা করা। শুক্রবার সকালেই নাকি সকলের জন্য টুপি পৌঁছে যায়।
পুলওয়ামার জের এমনিতেই খেলায় এসে পড়েছে পুরোদস্তুর। ভারতীয় বোর্ড পাকিস্তানের নাম না-করে আইসিসি-র কাছে দাবি জানিয়েছে, ‘সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া দেশের’ সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হোক। ভারতের সেই দাবি ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা উড়িয়ে দিলেও ভারতীয় বোর্ড এদিন ফের বলেছে, “তারা পিছিয়ে আসছে না”। এখনও বোর্ড বলে চলেছে, সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া দেশকে বহিষ্কারের দাবিতে তারা অনড়।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা উচিত কি না, তা নিয়ে তর্ক উঠেছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, হারভজন সিংহের মতো প্রাক্তনরা বলেছেন, পাকিস্তানকে বিশ্বকাপে বয়কট করা উচিত। আবার সুনীল গাভাস্কার, শচিন তেন্ডুলকরের মতো কিংবদন্তিরা বলেছেন, না-খেলে পাকিস্তানকে দুই পয়েন্ট দিতে যাব কেন? ভারতের খেলাই উচিত। এর মধ্যেই ধোনি-কোহলিদের ফৌজি টুপিতে মাঠে নামার এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মহলে কী প্রভাব ফেলে, সেটাও দেখার।
ভারতীয় দলে সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন যথেষ্টই রয়েছে। নিজের শহরে যিনি শেষ ম্যাচ খেলতে নামছেন, সেই ধোনিই যেমন ভারতীয় সেনার সব চেয়ে বড় ভক্ত। তিনি ভারতীয় টেরিটরিয়াল আর্মির সাম্মানিক লেফটন্যান্ট কর্নেল। ধোনির ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যাগও সেনার পোশাকের আদলে তৈরি।
টেরিটরিয়াল আর্মির সাম্মানিক লেফটন্যান্ট কর্নেল হওয়ায় অনেক সময়েই তাঁকে সেনাবাহিনীর জ্যাকেট বা ট্রাউজার্স পরতে দেখা গিয়েছে। সেনা ঘাঁটিতে গিয়ে ট্রেনিংও করেছেন ধোনি। নিজের শহরে শেষ ম্যাচে সেনার টুপিতে মাঠে নামতে তিনি বেশ উৎসাহীই বলে জানিয়েছেন। অধিনায়ক কোহলি-সহ অনেক ভারতীয় ক্রিকেটারই পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে টুইট করেছেন। এমনকি, বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা নিয়েও তাঁরা বলেছেন, দেশ এবং বোর্ড যা ঠিক করবে, সেটাই তাঁরা মানবেন।
কারও কারও যদিও মনে হচ্ছে, আইসিসি যে তাদের দাবি উড়িয়ে দিল, তারই প্রত্যাঘাত করতে চাইছে না তো ভারতীয় বোর্ড? ধোনি-কোহলিদের ভারতীয় সেনার টুপিতে মাঠে নামিয়ে বোর্ড কি নিয়ামক সংস্থাকে বার্তা দিতে চাইছে যে, তাদের প্রতিবাদ চলবেই!