সম্ভবত রাজ্যপাল পরিবর্তন হতে চলেছে জম্মু কাশ্মীরে। জম্মু কাশ্মীরে এখন রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। বকলমে রাজ্য চালাচ্ছেন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। এবার কাশ্মীরের পুলওয়ামা ঘটনার পর পাক জঙ্গি নিধনে নামছে কেন্দ্র। সম্ভবত সত্যপাল মালিককে সরিয়ে কোন প্রাক্তন সেনাকর্তাকে রাজ্যপাল করে কাশ্মীরে পাক জঙ্গি নিধনে নামতে চলেছে কেন্দ্র। রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে এমনটাই খবর।
আরও পড়ুনঃ পাক জঙ্গিদের খুঁজে বের করে মারতে সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিল মোদী সরকার
গত ২২শে নভেম্বর বিরোধীদের সরকার গঠনের উদ্যোগের মাঝেই জম্মু কাশ্মীরে বিধানসভা ভেঙে দেবার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। এরপরেই কংগ্রেস, পিডিপি সহ সব বিরোধীরাই বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়ে যাবার পর ৬ মাসের মধ্যে জম্মু কাশ্মীরে নির্বাচন করতেই হবে। কেন্দ্র ভোট চাইছে না বলেই অভিযোগ ওঠে। সব অভিযোগ সংসদেই উড়িয়ে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন চাইলে লোকসভার সঙ্গেই ভূস্বর্গে বিধানসভা ভোট হবে।
শুধু তাই নয়, ভোটের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে বলেও তখন জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ভোটের ব্যপারে শেষ কথা বলবে নির্বাচন কমিশন, জানিয়ে দিয়েছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। আর জঙ্গি নিধন ও জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন নিরাপত্তা, এই দুটি কারণেই বর্তমান রাজ্যপাল সত্যপাল মালিককে সরিয়ে কোন প্রাক্তন সেনা কর্তাকেই জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল করতে চিন্তা ভাবনা করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
আরও পড়ুনঃ কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় শহিদদের মধ্যে বাংলার ২জন সেনা জওয়ান
বিজেপি আর পিডিপি একসঙ্গে উপত্যকায় সরকার চালাত। এরই মাঝে জুন মাসে পিডিপি থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় বিজেপি। তারপর থেকেই কাশ্মীরে রাজ্যপাল শাসন জারি ছিল। লোকসভার সঙ্গেই ভূস্বর্গে বিধানসভা ভোট করার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের। তবে, ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা ও ৪০জন জওয়ানের মৃত্যুর পর আদৌ এখন জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন করা সম্ভব কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন।
এদিকে কাশ্মীরে পাক জঙ্গিদের খুঁজে বের করে ধরে ধরে মারতে সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। উপত্যকার নিরাপত্তা বিষয়ে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর পাকিস্তান ও জঙ্গিদের উদ্দেশ্যে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরিস্কার জানিয়ে দিলেন সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে। আর সেই কারণেই কোন প্রাক্তন সেনাকর্তাকে রাজ্যপাল করে কাশ্মীরে পাক জঙ্গি নিধনে নামতে চায় কেন্দ্র।
আরও পড়ুনঃ দেশ জুড়ে বদলার দাবি, কাউকে ছাড়া হবে না জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
প্রতিবেশী দেশকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিলেন, বড় ভুল করেছে পাকিস্তান। পরিস্কার বলে দিলেন, “চরম মূল্য চোকাতে হবে তাদের”। শুক্রবার, দিল্লিতে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, গতকালের পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার কড়া জবাব দেবে ভারত। তার জবাব দিতে সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিলেন।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, “বিশ্বের প্রায় সব দেশই ভারতের পাশে রয়েছে। এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা জানিয়েছে সব মহল”। সব দেশকে এই ভাবেই ভারতের পাশে থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। নাম না করে পাকিস্তানের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আর্থিক দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিবেশী দেশ যদি ভেবে থাকে ভারতকে এভাবে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে, তা হলে তারা ভুল ভাবছে। এই হামলার জবাব চাইছে ১৩০ কোটি দেশবাসী”। পাকিস্তান ও জঙ্গিদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, “এই ঘটনার জন্য বড় মূল্য চোকাতে হবে পাকিস্তান ও জঙ্গিদের”।
এদিন কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদী বলেন, “মোস্ট ফেবার নেশন নয় পাকিস্তান। ভারতের সেনার উপর আস্থা রয়েছে। প্রতিবেশি দেশ যদি ভেবে থাকে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে তারা পার পেয়ে যাবে তবে তারা ভুল ভাবছে। ষড়যন্ত্র করে পার পাবে না ওরা। এর মূল্য ওদের চোকাতেই হবে”। পাশাপাশি, এই ঘটনার পর সমস্ত দেশকে ভারতের পাশে থাকার বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের জনগনের রক্ত ফুটছে। এর জবাব তো পাকিস্তানকে দিতেই হবে”।
আরও পড়ুনঃ ব্যর্থ পার্থর শিক্ষা দফতর, মাধ্যমিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের হ্যাটট্রিক বাংলায়
উল্লেখ্য, গতকাল ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর এদিন উপত্যকার নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার একাধিক সদস্য। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, সুষমা স্বরাজ, পীযূষ গোয়েলের মতো ব্যক্তিরা। সেই বৈঠকের পরই এদিন কড়া বার্তা দিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে সেখানেই প্রাথমিক ভাবে জম্মু কাশ্মীরের রাজ্যপাল পরিবর্তন নিয়ে কথা হয়েছে।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।