মুম্বাই: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, গ্রামে গ্রামে মদের দোকান খুলবে রাজ্য সরকারের নিগম ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজ কর্পোরেশন (বেভকো)। নিগম ঠিক করেছে, প্রথম পর্বে ২০০০ মদের দোকানের মধ্যে বেশিটাই হবে গ্রামীণ এলাকায়। বাংলাকে টেক্কা দিয়ে দেবেন্দ্র ফরণবিশ-এর মহারাষ্ট্র সরকার এবার মদ হোম ডেলিভারি করার সিদ্ধান্ত নিল।
বাংলাকে টেক্কা দিল মহারাষ্ট্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হার মানালেন দেবেন্দ্র ফরণবিশ। রাজস্ব বাড়াতে রাজ্যের গ্রামে গ্রামে মদের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতার রাজ্য সরকার। আর মাত্র একটা ফোনে বাড়িতেই চলে আসবে মদের বোতল, সিদ্ধান্ত ফরণবিশের মহারাষ্ট্র সরকারের।
অবাক হবেন না! আদতেই কিন্তু তাই ঘটতে চলেছে। আর ভারতবর্ষে এটাই প্রথম। আয় বাড়াতে মদের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তার থেকে কয়েক কদম এগিয়ে এবার মহারাষ্ট্র সরকার চালু করছে মদের হোম ডেলিভারি।
মহারাষ্ট্র সরকার মদের হোম ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন নিয়মে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়েছে মহারাষ্ট্রে আবগারি দফতর। সেই ওয়েবসাইট মারফতেই করা যাবে মদের বুকিং। তবে বুকিং এর সঙ্গে ক্রেতার বয়স, আধার নম্বর, পরিচয়ও জানাতে হবে। তার পরেই হোম ডেলিভারির মাধ্যমে ক্রেতার বাড়িতে মদ পৌঁছে দেওয়া হবে।
এই বিষয়ে মহারাষ্ট্রে আবগারি দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে জানান, মহারাষ্ট্রে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এইসব অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্যই নয়া এই নিয়ম আনা হয়েছে।
প্রশাসনের আশা হোম ডেলিভারি পদ্ধতি চালু হলে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি অনেকেই চালাবেন না। চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে আরও জানান, অনলাইন ওয়েবসাইটগুলিতে যে পদ্ধতিতে অর্ডার দেওয়া হয়, এক্ষেত্রেও সেই ব্যবস্থা থাকবে।
মাত্র একটা ফোন করলেই বাড়িতে চলে আসবে হুইস্কি, ভদকা বা রাম-এর বোতল। অথবা অনলাইনে মদ বুক করতে পারবেন মহারাষ্ট্রবাসী। এক্ষেত্রে অবশ্য বয়সের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে ক্রেতাকে। আঠারো বছরের নিচে যেন কাউকে মদের সরবরাহ না করা হয় সে ব্যাপারে কড়া নজর রাখবে সরকার। এক্ষেত্রে ভেন্ডর হিসাবে কাজ করবে সরকারি ওয়েবসাইট। এদিকে ক্রেতাকে সবার আগে নিজের আধার কার্ড নম্বর দিয়ে বুকিং করতে হবে। তারপরই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে যাবে পছন্দমত মদের বোতল।
ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র সরকারের এমন পদক্ষেপ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। মহারাষ্ট্রের সমাজকর্মীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছেন। সমাজসেবী সংগঠনগুলো দাবি করেছে, সরকারের এমন পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী। তাছাড়া এক্ষেত্রে কমবয়সীদের মধ্যে মদ্যপানের প্রবণতাও বাড়তে পারে বলে দাবি করছেন তারা।
তাঁদের মতে, ভারতীয় সংবিধানের ৪৭ তম ধারায় বলা হয়েছে মাদকপান বা মদ্যপান শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই সরকারের উচিত নতুন নিয়মটি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা।
জানা গিয়েছে, প্রত্যেকটি বোতলের উপর জিও ট্যাগ থাকবে। যার ফলে বোতলটি কোথায় পাঠানো হচ্ছে সবই বোঝা যাবে। ভারতের মহারাষ্ট্রই প্রথম রাজ্য, যেখানে মদ হোম ডেলিভারি হবে।
রাজস্ব বাড়াতে এই পদক্ষেপ হলেও মহারাষ্ট্র সরকারের বক্তব্য বাড়িতে বসে মদের বোতল পেলে কেউ আর রাতে গাড়ি চালাবেন না। ফলে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা রেকর্ড হারে কমবে। এর জন্যই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে। মদের হোম ডেলিভারির উদ্দেশ্যই হল কেউ যাতে রাতে রাস্তায় গাড়ি না চালান বা মদ পান করে গাড়ি না চালান।
বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবের সময় হোক বা পরিবারের সঙ্গে কোনও গেট টুগেদারে মদ্যপান করার ক্ষেত্রে বাড়িকেই যেন নিরাপদ হিসাবে বেছে নেন মহারাষ্ট্রবাসী। এমনটাই চাইছে সরকার। এরকম কোনও পলিসি নিয়ে এর আগে দেশের কোনও রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়নি।
তবে, এই উদ্দেশ্য ও উদ্যোগকে পাগলের প্রলাপ বলে জানিয়েছেন বিরোধীরা ও সমাজকর্মীরা। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে রাজস্ব কতটা বাড়ে আর গাড়ি দুর্ঘটনা কতটা কমে, সেটাই এখন দেখার।