The News বাংলা, কলকাতা: আবার নক্ষত্র পতন বাংলায়। এবার চলে গেলেন সাহিত্যিক দিব্যেন্দু পালিত। বৃহস্পতিবার সকালে, যাদবপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ৭৯ বছর বয়স হয়েছিল এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের। কয়েকদিন আগেই মারা যান মৃণাল সেন। শোকের পরিবেশ কাটতে না কাটতেই আবার দুঃসংবাদ।
আরও পড়ুন: বছর শেষে আবার ইন্দ্রপতন, প্রয়াত চিত্র পরিচালক মৃনাল সেন
এক ঈর্ষণীয় পরিমিতিবোধে উজ্জ্বল ছিল তাঁর রচনারীতি। সমসময়, ভাষা নিয়ে তাঁর গভীর ভাবনা ছিল। দিব্যেন্দু পালিত বাংলা সাহিত্যে এক স্বতন্ত্র নাম। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এই সাহিত্যিক।
আরও পড়ুন: বাঘ খুঁজতে ব্যর্থ হাতি, উত্তরের জঙ্গল সাফারিতে উড়বে ড্রোন
১৯৩৯ এর ৫ই মার্চ বিহারের ভাগলপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন দিব্যেন্দু পালিত। তিনি তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। সেই বিষয়েই তিনি এমএ করেন। ১৯৫৫ সাল থেকে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখতে শুরু করেন।
১৯৫৫ সালেই আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় পাতায় তাঁর প্রথম গল্পটি প্রকাশিত হয়। গল্পের নাম ছিল ছন্দপতন। উপন্যাস, গল্প, কবিতা প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখছেন। বাংলা ও হিন্দি চলচিত্র, দূরদর্শন ও বেতারে রূপায়িত হয়েছে অনেকগুলি কাহিনি। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থের নাম শীত গ্রীষ্মের স্মৃতি।
আরও পড়ুন: টানা ২ দিন ধরে সন্ধান নেই ‘শচীনের’, বিপদ চিন্তায় প্রশাসন
১৯৫৮ সালে পিতৃবিয়োগের পর কলকাতায় চলে আসেন তিনি। শুরু তাঁর জীবন সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের জীবন, তাঁর সাহিত্য রচনার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে পরবর্তীকালে। কর্মজীবন শুরু হয় সাংবাদিক হিসাবে। হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় সাব এডিটর হিসাবে।
১৯৬৫ সালে যোগ দেন বিপণন ও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত পেশায়। সেই সূত্রে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন ক্ল্যারিয়ন ম্যাকান অ্যাডভার্টাইজিং সার্ভিসেস, আনন্দবাজার সংস্থা এবং দ্য স্টেটসম্যানে।
আরও পড়ুন: ‘রাম’কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে ‘হাতে’ নিয়ে বাংলায় তুলকালাম
তাঁর উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সহযোদ্ধা (১৯৮৪), অন্তর্ধান (১৯৮৮), গৃহবন্দি (১৯৯০) প্রভৃতি। গল্পের মধ্যে রয়েছে মুখগুলি, শুক্রে শনি, বৃক্ষ ও অমানুষ প্রভৃতি। দিব্যেন্দুর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে রাজার বাড়ি অনেক দূর (১৯৭০), আহত অর্জুন (১৯৭৩), কিছু স্মৃতি কিছু অপমান, সিন্ধুবারোয়াঁ, ভেবেছিলাম, মধ্যরাত, প্রণয়চিহ্ন, মুন্নির সঙ্গে কিছুক্ষণ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: কংগ্রেস ছেড়ে মমতার ‘মহানায়িকা’ এবার মোদীর বক্স অফিসে
তাঁর লেখা গল্প নিয়ে, উপন্যাস নিয়ে একাধিক সিরিয়াল ও চলচ্চিত্র হয়েছে। ‘ঘরবাড়ি’ উপন্যাস নিয়ে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘গৃহযুদ্ধ’। ‘অন্তর্ধান’ উপন্যাস নিয়ে একই নামে তপন সিংহের ছবি যাদের মধ্যে স্মরণীয়। নির্মাল্য আচার্যের সঙ্গে চলচ্চিত্র সংক্রান্ত একটি গ্রন্থও (‘শতবর্ষে চলচ্চিত্র’) সম্পাদনা করেছেন তিনি।
দিব্যেন্দু পালিত তাঁর সাহিত্যকীর্তির জন্য বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৪ সালে তাঁর প্রথম পুরস্কার লাভ। পেলেন আনন্দ পুরস্কার। দু বছর পরে পেলেন ভুয়ালকা পুরস্কার। এর পর ১৯৯০ সালে পান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার এবং ১৯৯৮-তে পেলেন সর্বভারতীয় স্বীকৃতি। এল সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।
আরও পড়ুন: পরিচালক মৃণাল সেনের ফিল্ম পরিচালনার কিছু ‘মণি মুক্ত’
একনজরে পুরস্কার:
আনন্দ পুরস্কার (১৯৮৪), বঙ্কিমচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৯৮)।
কিছু সুপরিচিত গ্রন্থ:
অচেনা আবেগ, অনুভব, অনুসরণ, অন্তর্ধান, অমৃত হরিণ, একদিন সারাদিন, ঢেউ, যখন বৃষ্টি, সঙ্গ ও প্রসঙ্গ, রজত জয়ন্তী, সংঘাত, সতর্কবার্তা, সিনেমায় যেমন হয়, হঠাৎ একদিন,হিন্দু।
সাহিত্যিক দিব্যেন্দু পালিত এর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার সাহিত্য জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হাসপাতালে ও বাড়িতে সাহিত্যিককে শেষ দেখা দেখতে ভিড় করেছে বাংলা সাহিত্য জগত ও তাঁর অসংখ্য গুণমুগ্ধ পাঠক। কয়েকদিন আগেই মারা যান মৃণাল সেন। শোকের পরিবেশ কাটতে না কাটতেই, বাংলায় আবার নক্ষত্র পতন। আগামীকাল সাহিত্যিকের শেষকৃত্য।