আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ শ্রী রামকৃষ্ণের জীবনে অজস্র অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় রামকৃষ্ণ জীবনীগুলিতে। ভক্তেরা এইসব ঘটনাকে ঈশ্বরের লীলা বলে মনে করেন। তাঁর বিয়ের আগের জীবনের ১০টি এমন লীলা বা অলৌকিক ঘটনার কথা জেনে নিন, যেগুলি প্রায় কিংবদন্তির আকার নিয়েছে।
১. রামকৃষ্ণের জন্মের আগে থেকেই তাঁর জন্মের নানা অলৌকিক পূর্বাভাস তাঁর পিতামাতা পেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। ১৮৩৫ সালে রামকৃষ্ণের পিতা ক্ষুদিরাম তীর্থ দর্শনে গয়া গমন করেন। সেখানে এক রাত্রে ঘুমের মধ্যে তাঁর স্বপ্নে আবির্ভূত হন বিষ্ণু-অবতার গদাধর। স্বপ্নেই গদাধর বলেন যে, তিনি ক্ষুদিরামের সন্তান রূপে অবতীর্ণ হবেন ধরাধামে। এই ঘটনার এক বছর পরে জন্ম হয় গদাধর, ওরফে রামকৃষ্ণের।
আরও পড়ুনঃবৈশাখীর হাত ধরে বিজেপিতে শোভন, জল্পনা তুঙ্গে
২. ক্ষুদিরাম যখন গয়ায় তখন রামকৃষ্ণের জননী চন্দ্রাদেবী একদিন শিব মন্দিরে গিয়েছিলেন পূজা দিতে। সেখানে এক অলৌকিক অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। তিনি প্রত্যক্ষ করেন, এক দিব্যজ্যোতি মহাদেবের শ্রীঅঙ্গ থেকে নির্গত হয়ে প্রবেশ করছে তাঁর শরীরে। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই গর্ভবতী হন চন্দ্রা দেবী।
আরও পড়ুনঃ মরে গিয়েও তৃণমূল বিজেপির হাত থেকে রেহাই পেলেন না বড়মা
৩. গদাধরের বয়স যখন ছয় কি সাত তখন বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলার সময় গদাধরের চোখ হঠাতই চলে যায় আকাশের দিকে। কালো মেঘের মধ্যে এক ঝাঁক বককে উড়ে যেতে দেখে ভাবতন্ময় হয়ে পড়ে গদাধর। কিছু পরে মূ্র্চ্ছা যায় সে। জ্ঞান ফেরার পরে দেখা যায়, সে একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনাকেই ভক্তেরা শ্রী রামকৃষ্ণের জীবনের প্রথম ‘ভাবসমাধি’ বলে মনে করেন।
আরও পড়ুনঃ এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের অ্যাসিড আক্রান্তরা
৪. গদাধরের বাল্যকালে একবার শিবরাত্রির সময়ে গ্রামস্থ সীতানাথ পাইনের বাড়িতে শিবের মহিমাসূচক যাত্রার আয়োজন হয়েছে। কিন্তু যাত্রা শুরুর সময় দেখা গেল শিবের ভূমিকায় যে ছেলেটির অভিনয় করার কথা সে আসেনি। উপস্থিত সকলের অনুরোধে শিবের ভূমিকায় অভিনয় করতে সম্মত হল গদাধর। কিন্তু শিবের সাজসজ্জা পরিহিত অবস্থায় মঞ্চে ওঠার পরেই বিহ্বল হয়ে পড়ে সে। চোখ থেকে জল গড়াতে থাকে। পরের দিন সকাল পর্যন্ত এরকমই তন্ময় অবস্থায় কাটে তার।
আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রী কিষান যোজনায় দারিদ্র্যের পরিমান কমবে ২০ শতাংশ
৫. দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের প্রধান পুরোহিত নিযুক্ত হওয়ার পরে দেবীর দেখা না পেয়ে শ্রী রামকৃষ্ণ একদিন আত্মাহূতি দেবেন বলে স্থির করে মন্দিরের গায়ে ঠেস দিয়ে রাখা খাঁড়াটি নিতে এগিয়ে যান। তখনই জগন্মাতার এক অদ্ভুত রূপ দর্শন হয় তাঁর। তিনি প্রত্যক্ষ করেন, এক আশ্চর্য জ্যোতিঃপুঞ্জ দশদিগন্ত আচ্ছাদিত করে ফেলেছে আর সেই পুঞ্জীভূত জ্যোতির ভিতরে উঠছে অন্তহীন ঢেউ। অভিভূত রামকৃষ্ণ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন এই দৃশ্য দেখে।
আরও পড়ুনঃ ডিএ মামলায় হাইকোর্টে ফের মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের
৬. একদিন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে দেবীর পূজা করছেন ঠাকুর। রানি রাসমণি উপস্থিত রয়েছেন সেখানে। হঠাৎ রানির গায়ে আলতো চাপড় মেরে ঠাকুর বললেন, ‘‘কেবল ওই চিন্তা! এখানেও ওই চিন্তা!’’ ঠাকুরের এই আচরণে সকলেই যখন অভিভূত তখন রানি নিজেই লজ্জিত মুখে স্বীকার করলেন, দেবীর সামনে বসেও দেবীর ধ্যানে তিনি মনোযোগ দিতে পারেননি। বরং চিন্তা করছিলেন একটি বিশেষ মোকদ্দমা বিষয়ে। ঠাকুরের আচরণের ইঙ্গিতটা ছিল সেদিকেই।
আরও পড়ুনঃ মতুয়াদের বড়মার মৃত্যু রহস্যজনক, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ
৭. একবার ঠাকুরের খুড়তুতো দাদা হলধারী কোনও কারণে ঠাকুরের প্রতি রুষ্ট হয়ে তাঁকে অভিশাপ দেন, ‘‘তোর মুখ দিয়ে রক্ত উঠবে।’’ তার কয়েকদিন পরে সত্যিই ঠাকুরের মুখ থেকে রক্তপাত শুরু হয়। হলধারী সহ সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। শেষে এক বয়স্ক সাধু ঠাকুরকে পরীক্ষা করে বলেন, আসলে হঠযোগ সাধনার চরম অবস্থা জড়সমাধিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ। ফলে সুষুম্নাদ্বার খুলে গিয়ে রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় রক্ত মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে উপকারই হয়েছে তাঁর। নতুবা ঠাকুরের জড়সমাধি আর ভাঙত না। নিজের অভিশাপ বরে পরিণত হয়েছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন হলধারী।
আরও পড়ুনঃ দেশ বা সরকারের সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেই জেল
৮. ঠাকুরের বিয়ে দেবেন বলে মনস্থ করেছেন মা চন্দ্রাদেবী আর দাদা রামেশ্বর। কিন্তু পছন্দমতো পাত্রী আর পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে ভাবাবিষ্ট ঠাকুরই একদিন বলে দিলেন, ‘‘জয়রামবাটী গ্রামের শ্রীরামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে যে পঞ্চম বর্ষীয়া কন্যা, সেই আমার উপযুক্ত’’। ঠাকুরের নির্দেশিত বাড়িতে খোঁজ করতেই সন্ধান মিলল সারদামণির। বিয়ে হয় রামকৃষ্ণ ও সারদামণির।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।