পৃথিবী জুড়েই নারীদের সন্তান জন্মদানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ক্রমেই শিশুর সংখ্যা কমছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। “পৃথিবী জুড়ে কমছে শিশু, বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা, বিশ্ব সমাজের পক্ষে এটা খুব একটা ভাল উদাহরণ নয়”, বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের অর্ধেক দেশেই শিশু জন্মহার মারাত্মকভাবে কমে গেছে। অর্থাৎ, জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করার মতো যথেষ্ট শিশুর জন্ম হচ্ছে না। বয়স্কদের তুলনায় বাড়ছে না শিশুর সংখ্যা।
“পৃথিবী জুড়ে কমছে শিশু, চরম সমস্যায় বিশ্ব সমাজ”। গবেষণার এই তথ্য-পরিসংখ্যান ‘অত্যন্ত বিস্ময়কর’ বলেই অভিহিত করেছেন গবেষকরা। সমাজে এর পরিণতিতে বয়স্ক মানুষ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেছেন, “ভবিষ্যতে নাতি-নাতনির চেয়ে দাদা-দাদিদের সংখ্যা বাড়বে।”
আরও পড়তে পারেনঃ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদে এক হিন্দু নারী
আরও পড়তে পারেনঃ ভারতের কৃষকের মেয়ে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ
শিশু জন্মদানের ব্যবধান কতটা? ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশের জনসংখ্যার হার পর্যালোচনার ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বের বিখ্যাত চিকিৎসা পত্রিকা ‘দ্য ল্যানসেট জার্নাল’।
এতে দেখা গেছে, বিশ্বে ১৯৫০ সালে নারীদের সন্তান জন্মদানের হার ছিল ৪.৭ বা ৪ দশমিক ৭ জন। ২০১৮ তে, তা কমে হয়েছে নারী প্রতি ২.৪ বা ২ দশমিক ৪ জনে। তবে দেশভেদে এ ব্যবধান আরও অনেক বেশি।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে জন্মহার ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে, ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপদেশ সাইপ্রাসে গড়ে একজন নারী মাত্র একটি সন্তান জন্ম দেন। যুক্তরাজ্যে এই হার ১.৭ বা ১ দশমিক ৭ এবং পশ্চিম ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেও এই চিত্রটা অনেকটা একই।
কতটুকু জন্মহার দরকার? কোনো দেশের গড় শিশু জন্মের হার ২.১ বা ২ দশমিক ১ শতাংশের নিচে নেমে গেলে জনসংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পেতে শুরু করবে। আর তাই জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে গেলে গড়ে অন্তত ২ দশমিক ১ শতাংশ জন্মহার প্রয়োজন। গবেষণার শুরুতে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালে কোনো দেশেই শিশুজন্মের হার এ পর্যায়ে ছিল না।
আরও পড়তে পারেনঃ সপ্তশৃঙ্গর পর সপ্ত আগ্নেয়গিরি, বিরল বিশ্বরেকর্ডের চূড়ায় বাঙালি
আরও পড়তে পারেনঃ একপায়ে এভারেস্ট অ্যান্টার্কটিকার পর এবার নতুন শৃঙ্গ জয়ের পরিকল্পনা অরুণিমার
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ‘হেলথ ম্যাট্রিক্স এন্ড এভালুয়েশন ইন্সটিটিউট’ এর পরিচালক ক্রিস্টোফার মারি বলেন, “আমরা এমন এক মুহূর্তে এসে পৌঁছেছি, যেখানে বিশ্বের অর্ধেক দেশে শিশু জন্মহার এতই কমে গেছে যে তা আর বদলানোর মত অবস্থায় নেই। তাই কিছু না ঘটলে এসব দেশের জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। এটি সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য রূপান্তর।”
কোন দেশগুলোতে জন্মহার কমছে? অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোতে জন্মহার প্রতিনিয়ত কমছে। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে, যুক্তরাষ্ট্রে, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় সন্তান জন্মদানে নিম্নহারের সমস্যায় ভূগছে।
যদিও তার মানে এই নয় যে, দেশগুলোতে জনসংখ্যা কমছে। কারণ, জন্মহার, মৃত্যুহার ও অভিবাসীর কারণে এসব দেশে জনসংখ্যা মোটামুটি ঠিকই থাকছে। তবে নারীদের সন্তান জন্মদানের হার বাড়াতে কয়েক প্রজন্ম সময় লেগে যেতে পারে বলেই মত গবেষকদের।
গবেষক মারি বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এখনও যথেষ্ট শিশু জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু বহু দেশই এখন অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে থাকায় সেসব দেশে শিশু জন্মহার কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
আরও পড়তে পারেনঃ নতুন বছরের শুরুতেই খারাপ খবর, বড় বড় কোম্পানিতে কর্মী ছাঁটাই
শিশু জন্ম কমছে কেন? শিশুমৃত্যুর কারণে নারীদের সন্তান সংখ্যা কমে যেতে পারে, জন্মনিরোধক ব্যবহারের ফলে কমতে পারে সন্তান জন্মহার, নারীরা বেশিহারে শিক্ষা এবং চাকরিতে ব্যস্ত হলেও কমতে পারে শিশু জন্মহার। তাছাড়া, আরো নানা কারণেও নারীরা সন্তান নাও নিতে পারেন।
পরিণতিতে কি হবে? অভিবাসন ছাড়া বিভিন্ন দেশেই বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে এবং জনসংখ্যা কমতে থাকবে। যদিও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন এজিং’ এর পরিচালক জর্জ লেসন বলছেন, “সমাজ এই জন্মহার পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিলে বিষয়টাকে আর তখন এত খারাপ মনে হবে না।”
তবে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মারি বলছেন, “বর্তমান প্রবণতায় শিশুর সংখ্যা কমতে থাকবে। বাড়বে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। ফলে, বিশ্ব সমাজকে টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন হবে।” স্থবির হবে বিশ্ব সমাজ।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।