শিলিগুড়িঃ আর কয়েকটা মাস, তারপরই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন জনজাতি ও বিভিন্ন সম্প্রোদায়ভুক্ত মানুষের মন জয় করতে পাঁচ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরের চতুর্থ দিনে বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের দুটি সম্প্রোদায়ভুক্ত মানুষের উন্নয়নে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
এদিন জলপাইগুড়ির চালসার টিয়াবন থেকে হেলিকপ্টারে চেপে শিলিগুড়ির নিকট ফুলবাড়ির স্বশত্র বাহিনীর হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে বেলা ১টা নাগাদ অবতরন করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে সড়ক পথে গাড়িতে উত্তরকন্যায় আসেন। সেখানেই নমশুদ্র বিকাশ পরিষদ ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল বোর্ডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষন বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ৩০০ বছরের ডাকাতে কালির হাড় হিম করা কাহিনি
বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সাংবাদিকদের মুখোমুখি না হলেও, সর্বভারতীয় নমশুদ্র বিকাশ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমটির কার্যকরি সভাপতি মুকুল চন্দ্র বৈরাগ্য জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এদিনের বৈঠকে মূলত দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় তাদের। প্রথমত নতুন করে বাংলায় নমশুদ্র উন্নয়ন পর্ষদ গঠন, দ্বিতীয়ত অসমের বাঙালি ও নমশুদ্র সম্প্রোদায়ভুক্ত মানুষের এনআরসি নিয়ে আন্দোলন।
তিনি আরও বলেন, নমশুদ্র উন্নয়ন বোর্ড গঠনে আবেদন জানিয়ে গত সাত বছর ধরে গোটা রাজ্যের ১৪টা জেলা থেকে ৪০টি স্মারকলিপি পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তারই ফলস্বরুপ ইতিমধ্যেই গত আগষ্ট মাসের ৬ তারিখেও নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি স্মারকলিপি দেওয়ার পর সেই বোর্ড নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা হয় সেদিন।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে তৃণমূল নেতাদেরই শাস্তির দাবীতে পোস্টার
এরপর এই সফরে এসে তাদের ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। তার আরও বক্তব্য, বিভিন্ন জনজাতির জন্য বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই নমশুদ্র উন্নয়ন পর্ষদের জন্যেও আবেদন করা হয় এদিন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা পর তিনি আশ্বস্ত করেন যে, আগামী ৫ তারিখে নবান্নে মন্ত্রিসভার ক্যাবিনেট মিটিং হবে, সেখানে এই উন্নয়ন পর্ষদ পাশ করানো নিয়ে আলোচনা হবে। সেই বৈঠকে নোট তৈরি করে তারপর উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এবিষয়ে মুকুলবাবু আশাবাদী যে মুখ্যমন্ত্রী কার্যকারি পদক্ষেপ গ্রহন করবেনই। তিনি আরও জানান, গোটা রাজ্যে মোট ২ কোটি ৮৭ লক্ষ নমশুদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। অধিকাংশই পূর্ববঙ্গের মানুষ। তাদের উন্নয়নে এবার মুখ্যমন্ত্রী সদর্থক ভুমিকা নেবেন।
মুকুলবাবু আরও জানান, তাদের দ্বিতীয় প্রস্তাবে এদিন অসমের এনআরসি নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়। সেখানে ১৮জন সরকারি কর্মরত মানুষ অাত্মহত্যা করেছেন। তাদের প্রমানের সমস্ত দস্তাবেশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলে তারা।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সেরা একশোয় সত্যজিতের পথের পাঁচালি
সেই সব প্রমানপত্রের কাগজপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেন। তিনি জানান, এনআরসি থেকে নাম বাদ পরায় অসমে মোট ৩১ জন আত্মহত্যা করেছেন যার মধ্যে ১৮ জন নমশুদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ রয়েছেন। তারা কেউই বাংলাদেশে জন্মায় নি। সকলেই ভারতীয়। শুধু বাঙালি বলেই তাদের নাম এনআরসি থেকে বাদ গেছে। তার সমস্ত প্রমানপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার সমস্ত শক্তি দিয়ে অসমের নমশুদ্র ও সমস্ত বাঙালীদের রক্ষা করবেন তিনি। এনআরসি নিয়ে নমশুদ্রদের আন্দোলনকে আগেও মুখ্যমন্ত্রী সমর্থন করেছেন। এবং আগামী দিনের আন্দোলনকে এদিনও সমস্তরকম সহোযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি এদিন ওয়েস্ট বেঙ্গল আদিবাসি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল বোর্ডের প্রতিনিধিদের সাথে দীর্ঘক্ষন বৈঠক হয় মুখ্যমন্ত্রীর। এদিন পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বিরষা তীরকি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ২০ দফা দাবী তুলে ধরেন। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবী হল মুখ্যমন্ত্রীর তৈরী করা এই বোর্ডের কাজে যেন কেউ হস্তক্ষেপ না করে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ছোট মেয়েকে হারিয়ে মনমরা মা শীলা ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা
এছাড়া বানারহাটের কার্তিক ওড়াও হিন্দি কলেজের নাম পরিবর্তন করে হিন্দি কথাটা বাদ দেবার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কালচিনি ও বাগডোগরায় ও নাগরাকাটায় মহিলা কলেজ সহ সরকারী চারকরীর ক্ষেত্রে আদিবাসীদের জন্য স্পেশাল কোটা তৈরী ও হাউসিং প্রকল্পের দাবী করা হয়।
এছাড়া গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময় ৯০০ জন আদিবাসীদের নামে কোর্টে মামলা চলে। সেই মামলায় নেপালিদের নামেও মামলা হয়। তাতে নেপালিদের সমস্ত মামলা খারিজ করা হলেও আদিবাসীদের নামের মামলা এখনও পর্যন্ত তুলে নেওয়া হয় নি।
সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে জানালে, কার কার নামে মামলা আছে সেই সমস্ত নামের তালিকা ও কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং সেই নিয়ে ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে বলে জানান বিরসা তিরকী। তিনি আরও জানান, তাদের ২০টি দাবীর মধ্যে ৯০ শতাংশ দাবী পুরন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। উভয় বৈঠকেই ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বলে জানান উভয়পক্ষের পদাধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: মেয়াদ বৃদ্ধি রাজ্য পে কমিশনের হতাশ রাজ্য সরকারি কর্মীরা
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এদিনের এই বৈঠকে নমশুদ্র বিকাশ পরিষদের মোট ২৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে অসম থেকে ১৩ জন তাদের প্রতিনিধি ছিলেন। অন্যদিকে আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের ১৬ জন প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রীমা ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল সেন, গৌতম দেব, অরূপ বিশ্বাস, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সহ দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির জেলাশাসক ও অন্যান্য সরকারী আধিকারিকরা।