৩০০ বছরের ডাকাতে কালির হাড় হিম করা কাহিনি

1138
The News বাংলা

মালদহঃ মালদহের হবিবপুর থানার জাজৈল অঞ্চলে ‘মানিকোড়া কালি’ মা-কে গোটা মালদহে জাগ্রত কালি বলে জানেন সকলে। আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বের ডাকাতে কালি পুজো নিয়ে এক রহস্যময় কাহিনি আজও সেই এলাকার মানুষের মুখে মুখে ঘোরে।

সেই সময় একদল ডাকাত জঙ্গলে ভরা এই মানিকোড়ায় পূর্নভবা নদী পেরিয়ে এসে রাতভর মায়ের পুজোতে মেতে থাকত। আর সূর্যোদয়ের আগেই এলাকা ছেড়ে আবার চলে যেত জঙ্গলে। শুধু এই কাহিনি নয় আরও অনেক হাড় হিম করা গল্প আছে মানিকোড়ার এই মা কালিকে নিয়ে।

আরও পড়ুন: তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে তৃণমূল নেতাদেরই শাস্তির দাবীতে পোস্টার

৩০০ বছর পূর্বের কথা। তখন তো আর বাংলাদেশ বলে কিছু ছিল না। জঙ্গলে ভরা ছিল এই সমস্ত এলাকা। কিলোমিটার দুই গেলেই পূর্নভবা নদী। যা এখন ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত তৈরী করেছে। সেই পূর্নভবা নদী পার হয়ে ডাকাত দল এই মানিকোড়াতে এসে সারা রাত থেকে কালি পুজো করতো আর দিনে আলো ফোঁটার আগেই আবার পূর্নভবা পেরিয়ে ওপারে জঙ্গলে চলে যেত।

The News বাংলা

এই গল্প আজও ঘোরে ওই এলাকার বৃদ্ধ থেকে কিশোরের মুখে মুখে। তবে এই পূজো নিয়মনিষ্ঠা মেনে, করে আসছে ওই এলাকার এলাকাবাসীরাই। পূর্ব পুরুষদের মুখ থেকে গ্রামবাসীদের জানা যে, গত ৩০০ বছর আগে এই মানিকোড়া গ্রাম জঙ্গলে ভরা ছিল। দেশ ভাগের কোনো প্রশ্ন ছিল না। সেই সময় এই কালি পুজোর দিন পূর্নভবা পেরিয়ে একদল ডাকাত এসে পুজো করে যেত। অনেক সময় পুজো করার পর তারা ডাকাতি করতে যেত বলে প্রচলিত গল্প।

আরও পড়ুন: ৪ দিনের পুজো এখন ১৫ দিনের জমজমাট উৎসব

আরও একটি বিষয় কথিত আছে যে যেহেতু ডাকাতেরা পুজো করতো, সেইজন্য নিঃশব্দে এই পুজো হতো। তাই এই মা কালি নাকি কোনোরকম আওয়াজ শুনতে পছন্দও করত না। এমনকি পুজোর পরে বলি দিত ডাকাতেরা। শোনা যায় নরবলিও দিত ডাকাতরা। সেই সময় মা নড়ে উঠত। তাই মাকে পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। আজও পাঁঠা বলির সময় সেই রীতি মেনে মায়ের পায়ে শিকল দেওয়া না হলেও মা যাতে বলি না দেখতে পায় সেই জন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

The News বাংলা

ধীরে ধীরে জনবসতি বাড়তে থাকায় ডাকাতেরা পুজো থেকে সরতে থাকে। ঠিক সেইসময় পুরো পুজোর দায়িত্ব নিয়ে নেয় এলাকার জমিদার ভৌরবেন্দ্র নারায়ন রায়। শেষ পর্যন্ত জমিদারি চলে যেতে থাকায় গত ১০০ বছর পূর্বে পুজোর দায়িত্ব জমিদাররা তুলে দেন গ্রামবাসীদের হাতেই। আজও ধুমধামের সাথে এই কালি পুজো করে আসছে মানিকোড়া গ্রামবাসীরা।

এই কালি পুজোকে ঘিরে হবিবপুর সহ মালদাতেও বেশ সাড়া পড়ে। কালি পুজোতে ভক্তদের ঢল নামে। সাতদিন ধরে চলে এখানে কালি পুজোর মেলা। পাশাপাশি আজও বলির রীতি আছে এই পুজোকে ঘিরে। প্রায় হাজার খানেক ছাগবলি পড়ে এখানে।

আরও পড়ুন: ছোট মেয়েকে হারিয়ে মনমরা মা শীলা ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা 

এদিকে গ্রামবাসী ও এই পুজোর উদ্যোক্তারা এই কালিকে ঘিরে যে আরও বেশ কিছু হাড় হিম করা কাহিনি আছে সেটাও জানিয়েছেন। কথিত আছে এই গ্রামে এক শাঁখারি আসে শাঁখা বিক্রি করতে। সেই সময় এক মহিলা এসে তাঁর কাছে শাঁখা পড়তে চায়। শাঁখা পড়ার পর শাঁখারি টাকা চাইলে ওই মহিলা বলে, ‘টাকা তার বাবা দেবে’। শাঁখারি তার বাবা কে জানতে চাইলে ওই মহিলা সেবাইত কালিবাবার নাম উল্লেখ করেন। এরপর সেখানে কালিবাবা উপস্থিত হলে শাখারি তাঁর কাছে টাকা চান। কালিবাবা বলেন, তাঁর কোনো মেয়ে নেই। ঠিক সেই সময়ই দেখতে পান পুকুরে শাঁখা পড়া দুই হাত উঠে আছে। তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে, স্বয়ং মা কালি তাঁর মেয়ে সেজে এসে শাঁখা পড়ে গেছে। তাঁর পরই শাঁখারিকে শাঁখার দাম দিয়ে দেয় ওই সেবাইত।

The News বাংলা

এছাড়া আরও এক কাহিনি সকলের মুখে মুখে ঘোরে তা হল, এই গ্রামে বেশ কিছু পরিবার এসে বসবাস শুরু করে। তাঁরা চিড়ে তৈরী করে বিক্রি করত। কথিত আছে, মা কালি রাতে আওয়াজ করা পছন্দ করে না। কিন্তু ওই গ্রামবাসীরা চিড়ে বানাতো রাতে। এবং তার জন্য আওয়াজ হত। কথিত আছে মা বেশ কয়েকবার স্বপ্নও দেন ওই চিড়ে বিক্রেতাদের। কিন্তু তবুও তারা না শোনায় গ্রামে কলেরা রোগ দেখা দেয়। বেশ কিছু লোক মারাও যায়। এরপর তারা রাতে চিড়ে তৈরী করা বন্ধ করে দেয়। আর কোন রোগও দেখা দেয় নি।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সেরা একশোয় সত্যজিতের পথের পাঁচালি

ভক্তদের সমস্ত আর্জি মা মিটিয়ে দেন বলেই দাবি এলাকাবাসিদের। আজও নিষ্ঠার সাথে মানিকোড়া মায়ের পুজোর হয়ে আসছে ধুমধামের সাথে। আর মায়ের পুজোকে কেন্দ্র করে সাতদিন ধরে মেলাও জমে উঠে। সবার কাছেই, মানিকোড়া কালি আজও জাগ্রত কালি।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন