The News বাংলা, বেঙ্গালুরু: ঘুষকাণ্ডে গ্রেপ্তার কর্ণাটক বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী জনার্দন রেড্ডি। রবিবার, বেঙ্গালুরু পুলিশ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বল্লারির এই অভিযুক্ত ‘খনি-মাফিয়া’কে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছে জনার্দন রেড্ডির সহযোগী আলি খান।
কর্ণাটকের বেল্লারির ‘মাইনিং ব্যারন’ তথা কর্ণাটকের প্রাক্তন মন্ত্রী জনার্ধন রেড্ডিকে ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ও ১৮ কোটি টাকার ঘুষকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্র্যাঞ্চ। বেঙ্গালুরুতে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
দক্ষিণের এই তথাকথিত ‘শিল্পপতি’ বহুদিন ধরে গ্রেফতারি এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিচ্ছিলেন বলেও সূত্রের দাবি। এদিকে, ক্রাইম ব্রাঞ্চের তরফে জানানো হয়, আর্থিক দুর্নীতি বিষয়ে বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী জনার্ধন রেড্ডির বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ থাকায় এই গ্রেফতারি।
আরও পড়ুন: Exclusive: বিজেপি কর্মীদের খুনে বিজেপি সমর্থকরাই গ্রেফতার
এর আগেও বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় ফেঁসে তিন বছর জেলে কাটিয়েছেন কর্ণাটকের বিএস ইয়েদুরাপ্পা সরকারের এই মন্ত্রী। কিছুদিন আগেই জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের পুরনো কাজকর্ম শুরু করেছিলেন বলেই অভিযোগ ছিল।
সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের নোটিস পেতেই, শনিবার ব্রাঞ্চের দফতরে পৌঁছন জনার্দন রেড্ডি ও তাঁর আইনজীবী। তারপর সেখানে তাঁকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপরই রবিবার জনার্দনকে গ্রেফতারির সিদ্ধান্ত নেয় ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
বাংলার সারদাকাণ্ডের মতেই জনার্দনের সংস্থা ‘অ্যাম্বিডেন্ট’ বিনিয়োগকারীদের থেকে টাকা নিয়ে প্রতিমাসে অতিরিক্ত লাভের লোভ দেখায়। কিন্তু সেই টাকা ফেরত দিতে পারেনি সংস্থা। এরপরই জনার্দনের সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
এদিকে প্রাক্তন মন্ত্রীর গ্রেপ্তারি নিয়ে মুখ খুলেছেন বেঙ্গালুরুর পুলিশ কর্তা অলোক কুমার। তিনি বলেন, ‘জনার্দন রেড্ডি ঘুষ নিয়েছেন। এই ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ও বিবৃতি হাতে আসার পরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে’। আদালত তাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সমালোচনার মধ্যেই রেকর্ড আয়ের লক্ষ্যে মোদীর ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’
বেঙ্গালুরুর একটি অর্থলগ্নি সংস্থা ‘অ্যাম্বিডেন্ট গ্রুপ। সংস্থার মালিক সৈয়দ আহমেদ ফরিদ। লগ্নিকারী সংস্থাটি বাংলার সরদার মতোই সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে।
১৫০০০ মানুষ আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই খবর প্রশাসনের কাছে আসার পরই শুরু হয় নজরদারি। সেখানই ওই সংস্থার আসল উদ্দেশ্য ধরা পড়ে যায়।
কর্ণাটকে ক্ষমতাসীন বিএস ইয়েদুরাপ্পার সরকারের আমলেই এই আর্থিক দুর্নীতি হয়। বেআইনি লগ্নিকারী সংস্থা সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে। খবর পেয়েই সংস্থার মালিকের সঙ্গে শহরের এক হোটেল বৈঠকে বসেন তৎকালীন মন্ত্রী জনার্দন রেড্ডি।
আরও পড়ুন: ভারতে আরও বড় ‘প্রাণঘাতী’ ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা
মামলা থেকে অব্যহতি দিতে সংস্থার মালিক সৈয়দ আহমেদ ফরিদের কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন প্রাক্তন মন্ত্রী। শেষপর্যন্ত ১৮ কোটি টাকায় রফা হয়। এইভাবে টাকা নিয়ে বেআইনি লগ্নিকারী সংস্থার অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে দেন জনার্দন রে়ড্ডি।
আরও পড়ুন: সুলতানকে নিয়ে বিজেপির বিরোধীতার মধ্যেই টানাপোড়েন কংগ্রেস-জেডিএসের
সম্প্রতি জনার্দন রেড্ডির কুকীর্তির প্রসঙ্গ নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। সেই সময়ই এই বিরাট অঙ্কের ঘুষকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। এই গ্রেপ্তারি নিয়ে আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ। প্রাক্তন মন্ত্রীর কীর্তিকলাপে নীরব কর্ণাটকের বিজেপি নেতৃত্বও।
কর্ণাটক রাজনীতিতে রেড্ডি ভাইদের গুরুত্ব বিশাল। প্রাক্তন ইয়েদুরাপ্পা সরকারের অত্যন্ত কাছের লোক ছিলেন ‘খনি-মাফিয়া’ তথা প্রাক্তন মন্ত্রী জনার্দন রেড্ডি।
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটে আর পড়াবেন না ‘দেশদ্রোহী’ প্রফেসর’
এমনিতেই কংগ্রেস ও জেডিএস জোটের কাছে কর্ণাটকে বারবার নাস্তানাবুদ হচ্ছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই ঘুষ দুর্নীতি ইস্যুতে বিজেপির তুমুল সমালোচনা করেছে কংরেসস। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে, এই ঘুষ দুর্নীতি বিজেপিকে আরও গাড্ডায় ফেলল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।