বাগদেবীর আরাধনায় মহিলা পুরোহিত, সমাজের রীতি ভাঙার দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা নিয়মের বেড়াজাল টপকে দেবী মায়ের পুজো করে নজির সৃষ্টি করল শিলিগুড়ির এক স্কুল ছাত্রী। রীতিমত সংস্কৃত মন্ত্র পরিষ্কার উচ্চারণ করে বাগদেবীর আরাধনায় মেতে উঠল ১৬ বছরের ছাত্রী। তার মন্ত্রেই স্কুল পড়ুয়ারা অঞ্জলী দিয়ে ব্রত ভাঙে। এমনকি পুজো শেষে যজ্ঞও করল এই তরুণী। তাকে সঙ্গ দিলেন স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষিকা সহ অন্যান্য শিক্ষিকারা।
আরও পড়ুনঃ বেকার যুবকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে বাংলায় তৈরি হচ্ছে ১০ লক্ষ চাকরি
বিদ্যার দেবী হলেন মা সরস্বতী। স্কুল, কলেজ ও প্রায় প্রতিটি বাঙালি ঘরে মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজো হয়ে থাকে। পূজো করতে গেলে বাজার থেকে প্রতিমা কিনে ফল, ফুল, মিষ্টি আনলেই হয় না। তার জন্য প্রয়োজন পড়ে একজন পুরোহিতের। কিন্তু এত জায়গায় পুজো হয় বলে পুরোহিত পাওয়াও এসময় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়৷ তাই এবার স্কুলের ছাত্রীকে দিয়েই পুজো করিয়ে চমকে দিল বাংলার একটি স্কুল।
আরও পড়ুনঃ সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন করে দিয়ে মমতার ‘বাড়া ভাতে’ ছাই দিলেন মোদী
পুজোর দিন, ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়ারা না খেয়ে সারাদিন পুরোহিতের অপেক্ষায় থেকে শেষে নিরাশ হয়ে পড়ে। তখন কোনরকমে হাতে পায়ে ধরে রাস্তা থেকে যে কোন একজন পুরোহিতকে প্রায় জোর করে ধরে এনে পুজো করাতেও দেখা যায়। কিন্তু দিন বদলেছে। বদলেছে মানুষের চিন্তা ভাবনাও। পুজো করতে হলে পুরুষ পুরোহিতই কেন লাগবে?
আরও পড়ুনঃ নতুন যুদ্ধ, রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে মমতার দুই অফিসারকে ডেকে পাঠাল ইডি
পুজোর জোগাড় করবে সব মেয়েরা, উপোস করেও থাকবে মেয়েরা। যার পুজো হবে সেও একজন মেয়ে। তাহলে একজন মেয়ে কেন পুরোহিত হতে পারবে না? এই চিন্তাভাবনা থেকেই সমাজটাকে পাল্টে ফেলার পরিকল্পনা নেয় শিলিগুড়ির হায়দারপাড়া বুদ্ধ ভারতী স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। তারা এবার ঠিক করে বাইরের পুরোহিতের কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই কোনো পুরুষের।
আরও পড়ুনঃ কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে তিন তালাক বিরোধী আইন বাতিল করে দেবে কংগ্রেস
স্কুলের একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী স্নিগ্ধা সরকারকে তারা বেছে নেয় এবারের সরস্বতী পুজোর পুরোহিত হিসেবে। এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেয় স্নিগ্ধাও। একমাস চর্চা করে, সংস্কৃত শিক্ষিকা সাধনা মজুমদারের থেকে সংস্কৃত উচ্চারণ শিখে, সরস্বতী মন্ত্র উচ্চারণ করে দিব্বি পুজো সাঙ্গ হয়ে গেল৷ সাক্ষী রইল স্কুলেরই প্রায় সাড়ে আটশত পড়ুয়া।
আরও পড়ুনঃ মমতার ধর্ণায় বসা পুলিশ অফিসারদের কড়া শাস্তি দিতে চলেছে মোদী সরকার
সময় লাগল একটু বেশী। কিন্তু তাতে মিশ্রিত ছিল শ্রদ্ধা ও পূর্ণতা। তবে বাড়িতে পুজো করা এক জিনিস। আর জনসমক্ষে স্কুলের মধ্যে পুজো করে পুরোহিতদের রোজগারে থাবা বসানো অন্য জিনিস। তার ওপর নারীকুলের উত্তরনের যেখানে পদে পদে বাধা! সেই বাধা ভেদ করে পুরোহিত সমাজের গড়ে হানা! এটা যে পুরোহিতকুল মেনে নেবে না তা বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুনঃ মমতার বাংলায় ১ লাখ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেন মুকেশ আম্বানি
প্রচারে এলে একটা হইচই যে পড়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহই নেই। তবে তার জন্য প্রস্তুত স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও। স্নিগ্ধার বক্তব্য, “শাস্ত্রে তো কোথাও লেখা নেই যে মেয়েরা পুজো করতে পারবে না। এটা একটা সামাজিক রীতি হয়ে আসছে মাত্র। তাছাড়া দেশকে মা বলি, পুজো করছি মায়ের, জোগাড় করছে মেয়েরা। তাহলে পুজো করার আসনে কেন মেয়েরা বসতে পারবে না”?
আরও পড়ুনঃ সারদা রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে মমতার পুলিশ কর্তাদের বারবার তলব গোয়েন্দাদের
এভাবে পুজো করে এই রীতিটাকে ভাঙতেই চায় হায়দারপাড়া বুদ্ধভারতী স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই পুজোর মাধ্যমে তারা সমাজে একটা বার্তা দিতে চায়। যাতে মেয়েরাও এবার পুরোহিতের কাজটাও সমান তালে করতে এগিয়ে আসতে পারে। স্নিগ্ধার মতো এভাবে আরও মেয়েরা এগিয়ে এসে সমাজের মুল স্রোতের ধারার পরিবর্তন ঘটাক সেই বার্তাও রয়েছে তাঁদের।
তবে একজন নারী যে আবার স্কুলের ছাত্রীও, তার পুরোহিত হওয়া তাও আবার অব্রাক্ষ্মন! পুরোহিত সমাজে এই খবর কতটা আলোড়ন সৃষ্টি করে এখন সেটাই দেখার। তবে ‘সুন্দরী স্নিগ্ধা’ যে বাংলা সমাজে একটা বিপ্লব ঘটিয়েছে সেটা বুঝতে পারছেন সবাই।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।