The News বাংলা, কলকাতাঃ সামনেই ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোট, আর বছর ঘুরলেই দেশজুড়ে লোকসভা ভোট। ‘আচ্ছে দিন’ এর প্রতিশ্রুতি যে অনেকের কাছেই ‘যাচ্ছে দিন’ হয়ে গেছে, সেটাও বুঝেছে মোদীর বিজেপি। আর তাই ‘শিরে সংক্রান্তি’ ভোটের মুখে, বরাবরের মত সেই অযোধ্যার রাম-ই শেষ আশা-ভরসা গেরুয়ার।
কদিন পরেই ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। লোকসভা নির্বাচনেরও আর বাকি মাত্র ৪-৫ মাস। তার আগে এখন থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এক দিকে যেমন সরকারের বিভিন্ন ইস্যুকে হাতিয়ার করে ময়দানে নামার সময়, তেমনি সরকারের কাজ হচ্ছে পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো নিজেদের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে নিজেদের মার্কশিট প্রস্তুত করা।
সেই মার্কশিট প্রস্তুত করতে গিয়েই বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার যে বেশ হোঁচট খাচ্ছে, তা বলাই বাহূল্য। একদিকে শরীক দল টিডিপির সঙ্গ ত্যাগ, আরেক শরীক দল শিবসেনার প্রতিনিয়ত হুমকি, একের পর এক উপনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি, সর্বশেষ হওয়া কর্ণাটকে লোকসভা ও বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলও বিজেপির পক্ষে মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়।
আরও পড়ুন: মোদীর নোটবন্দীর ২ বছর পূর্তিতে আশা নিরাশা
এর আগে, মে মাসেও বিভিন্ন রাজ্যের উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। দেশের ৪টি লোকসভা ও ১০টি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফল বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়েছিল৷ উপনির্বাচনে যে চারটি লোকসভার আসনে নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসে তার মধ্যে তিনটি আসনই বিজেপির দখলে ছিল।
আর এই তিনটি আসনের মধ্যে মহারাষ্ট্রের পালঘর লোকসভা কেন্দ্রই শুধুমাত্র নিজেদের হাতে রাখতে সক্ষম হয় বিজেপি ৷ উত্তরপ্রদেশের কৈরানা ও মহারাষ্ট্রের ভান্ডারা-গোন্ডিয়া লোকসভা হাতছাড়া করে বিজেপি ৷
আরও পড়ুন: ‘মুসলিম’ নাম বদলে ‘রামরাজ্য’ আনতে উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
গত মঙ্গলবার, কর্ণাটক উপনির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেল বিজেপির দুর্গ বল্লরি লোকসভা ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। মান্ড লোকসভা আসনেও হেরেছে বিজেপি। লোকসভা বিধানসভা মিলিয়ে ৫ টি আসনের নির্বাচনে ৪টি তেই হেরেছে পদ্ম শিবির।
অন্যদিকে, রাফায়েল কেলেঙ্কারি সহ পেট্রোপন্যের প্রতিনিয়ত মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও স্বাভাবিকভাবেই চরম অস্বস্তিতে সরকার। এদিকে বৃহস্পতিবারই পূর্ণ হল নোটবন্দীর দুই বছর। যার কুফল নিয়ে বিরোধীরা এখনও সোচ্চার। বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরানো বা নতুন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কর্মসংস্থান তৈরি না করতে পারা নিয়ে স্বভাবতই বিরোধীদের প্রশ্নবানে জর্জরিত কেন্দ্র সরকার।
আরও পড়ুনঃ উপনির্বাচনে হেরে বিধানসভা ও লোকসভার আগে চিন্তায় বিজেপি
এই সকল অস্বস্তির নাগপাশ থেকে বেরোতে বিজেপি আবার রাম নামে শান দিয়ে পুরোনো হাতিয়ারকে ইস্যু করেই ভোটে এগোতে চাইছে। সম্প্রতি সুপ্রীম কোর্টের রায়ে রামমন্দির সংক্রান্ত মামলার রায় পুনরায় স্থগিত করা হয়েছে। অতএব, লোকসভা ভোটের আগে রামমন্দির সংক্রান্ত কোনো আশা যে দেখানো সম্ভব হচ্ছেনা, সেটা পরিষ্কার।
এদিকে রামমন্দির ইস্যুতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের অসন্তোষ যে ক্রমশই বেড়ে চলেছে, তা ভালোই বুঝতে পেরেছে বিজেপি। মন্দির আপাতত না হলেও রাম রাজনীতিতে কোনো প্রকার খামতি রাখতে চাইছে না বিজেপি।
সেই লক্ষ্যেই দীপাবলির দিন থেকেই একগুচ্ছ কর্মসূচি ও প্রতিশ্রুতি প্রদানে তৎপর হলো বিজেপি। সংঘ পরিবারের সবুজ সংকেত দেওয়া মাত্রই উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ এর ঘোষণায় ফৈজাবাদের নাম পাল্টে হয়ে গেলো অযোধ্যা। এর সাথেই রাম জন্মভূমিতে রামচন্দ্রের সুবিশাল মূর্তি তৈরি সহ, রাজা দশরথের নামে অযোধ্যায় বিমানবন্দর তৈরি, এই সবই রাখা হোলো প্রতিশ্রুতির ডালিতে।
শুধুমাত্র উন্নয়নকে ভর করে যে বিজেপির ময়দানে নামা সহজ হবে না, তা বুঝেই প্রতিবারের মতোই রামনামে ভর করেই নতুন করে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠতে চাইছে বিজেপি। যাতে উন্নয়নের কিছু নমুনাকে পাশে রেখেও মূলত হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করেই সিংহভাগ জনগনকে একই ছাতার তলায় আনা সম্ভব হয়।
অধরা “আচ্ছে দিন” থেকে নজর ঘোরাতে প্রতিবারের মতো ভোটের আগে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ‘রামমন্দির রাজনীতি’ বিজেপির ভোটবাক্সে আশীর্বাদ হয়ে আসতে পারে কিনা, তা অবশ্য পরে বোঝা যাবে। আপাততঃ ৫ রাজ্যে বিধানসভা ও পরের বছরের লোকসভা ভোটে অযোধ্যার রামই বড় ভরসা মোদীর বিজেপির।