“একটা ফোন করলে সাহায্যের জন্য পৌঁছে যাব”; ভোটের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল এটাই। ভোট শেষ; প্রতিশ্রুতিও শেষ। সেই ফোনটাই এখন বন্ধ। মানুষের সাহায্যের আবেদনে এলাকায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যপার; সংবাদমাধ্যমে ২ লাইনের বক্তব্য জানিয়েই দায় সেরেছেন বসিরহাটের সাংসদ। তৃণমূল নেতা কর্মী থেকে; সাধারণ মানুষের অভিযোগ এমনটাই।
সাংসদ হতে পারলে মানুষের পাশে থাকবেন; বলে কথা দিয়েছিলেন বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী নুসরাত জাহান। ভোট মিটে যাওয়ার পর সেই প্রতিশ্রুতি; বেমালুম ভুলে গেছেন বসিরহাটের সাংসদ নুসরাত জাহান। জ্বলছে বসিরহাট, আর সেই সময়ই নিজের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত; ভোটের আগে মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সাংসদ।
ভোটের পর ইদের আগে; এলাকায় গিয়ে দরিদ্র মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন জামাকাপড়। নিজের কেন্দ্রের সাংসদের হাত থেকে শাড়ি নিয়ে; বেজায় খুশি ছিলেন স্থানীয়রাও। মনে করা হয়েছিল প্রাক্তন সাংসদ মুনমুন সেন বা সন্ধ্যা রায়ের মত; হবেন না নুসরাত। কিন্তু বিপদ শুরু হতেই উধাও সাংসদ। হবারই কথা; দুদিন বাদেই যে তাঁর বিয়ে।
কথা দিয়েছিলেন, একটা ফোন করলেই; পৌঁছে যাবেন বসিরহাটে। কিন্তু ৫টি তাজা প্রাণহানিও তাঁকে আনতে পারেনি; শোকস্তব্ধ সন্দেশখালিতে। বসিরহাটের সদ্য জয়ী সাংসদ অভিনেত্রী নুসরাত জাহান; ব্যস্ত নিজের বিয়ে নিয়ে। কোথাও স্বজন হারানোর বুকফাটা আর্তনাদ; কোথাও বা চাপা উদ্বেগ। ঘটনার পর থেকে যেন থমথমে গোটা বসিরহাট।
ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেবলমাত্র একটি ছোট্ট মেসেজ; সংবাদমাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে নিজের সাংসদ হওয়ার দায় সেরেছেন এই গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী। আগামী ১৯ জুন ইস্তানবুলে বসছে নুসরাত জাহান ও নিখিল জৈনের সাদীর আসর। ভাবি স্বামীর সাথে এখন প্রেমে মশগুল তিনি।
তাই বসিরহাটের জনতাকে দেওয়া কথা; পাক্কা রাজনীতিকের মতো ভুলে গিয়েছেন তিনি, এমনটাই অভিযোগ। এমন সংকটপূর্ণ মুহূর্তে; ‘টিকটক’ ভিডিও শেয়ার করেছেন তৃণমূল সাংসদ। সেই ভিডিওতে নুসরতের হবু বর নিখিলকে বলতে শোনা গিয়েছে; “দিল কা দরওয়াজা খোল দিয়া; মেরে লাভস্টোরি মে লিডওয়ালা রোল দিয়া”।
অভিনেত্রীর পার্ক সার্কাসের ব্রড স্ট্রিটের বাড়িতে; এখন সাজ সাজ রব। আগামী ১৩ তারিখ গায়ে হ্লুদ। ১৭ই জুন বিলাসবহুল ইয়টে পার্টি। ১৮ই জুন মেহেন্দি। ১৯ই জুন নিকাহ। সেখানে সন্দেশখালিতে মৃত গরীব মানুষগুলোর জায়গা না থাকারই কথা; থাকেওনি।
অথচ বসিরহাটে সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে হেরেও; বিজেপির ৫ জন সাংসদ এসেছিলেন ঘটনার পর; এমনটাই আলোচনা সন্দেশখালি জুড়ে। নুসরতের যে নম্বর বসিরহাটের তৃণমূল নেতাদের কাছে রয়েছে; তা সবসময় বন্ধ থাকছে বলেই অভিযোগ। সংবাদমাধ্যম থেকেও এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
বসিরহাটের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মহলে আলোচনা; ভোট চাইতে এসে অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন নুসরাত। তার মধ্যেই ছিল; “একটা ফোন করবেন চলে আসব”। দলনেত্রী মমতাও বলেছিলেন, “বাচ্চা মেয়ে ভালোভাবে কাজ করবে”।
তৃণমূল নেতারা বলছেন, এতো দেখছি জেতার ১৫ দিনের মধ্যেই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। এখনও পাঁচ বছর বাকি রয়েছে! আর এটাই মত বসিরহাটের সাধারণ মানুষেরও। কোথায় সাংসদ; কোথায় তাঁর প্রতিশ্রুতি! সব সমান।