২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয়েছে গত ১০ই মার্চ। দেশজুড়ে নির্বাচনী বিধি লাগু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রচার নিয়ে চাপানউতর শুরু হয়েছে, অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সবকিছুই। দেওয়াল লেখা থেকে জনসভার অনুমতি সব দিকেই রয়েছে নির্বাচন কমিশনের পাখির চোখ। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের দিন এবং গণনার দিন ইভিএম ও ভিভিপ্যাট কোথায় কীভাবে থাকবে এবং তার নিরাপত্তা কিভাবে হবে সেই নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকদের দফতরে জোর কদমে কাজ করে চলেছে।
আরও পড়ুনঃ বাম কংগ্রেস বিজেপির আপত্তি নেই, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কেন মাথাব্যথা শুধু তৃণমূলের
ইভিএমের কমিশনিং হয়ে যাবার পরেই তা চলে যাবে স্ট্রং রুমে। শুধু তাই নয় সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ২৪ ঘন্টা পাহারা দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে যাবে সেই মুহূর্ত থেকেই। সেখানে থাকবে দুইস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যেখানে মূল দরজায় থাকবে সিএপিএফ ও বাইরে পাহারা দেবে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। কোনরকমেই রাজ্য পুলিশ ভিতরে আসবে না।
আরও পড়ুনঃ বিরোধী মহিলা প্রার্থীদের ‘মাল’ সম্বোধন করে কুরুচিপূর্ণ আক্রমণ ফিরহাদের
ভোটের দিন আগে থেকেই প্রত্যেকটি বুথেই মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাদের নজরদারির মধ্যে সেখানে থাকবে সব আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার মধ্যে। ভোটের আগের দিন ভোট কর্মীরা সেখান থেকে সব তথ্য প্রমাণাদি দিয়ে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট নিয়ে চলে যাবেন সংশ্লিষ্ট বুথের উদ্দেশ্যে। কেবলমাত্র বুথে পৌঁছানোর পরেই কাজ শেষ হচ্ছে না কারোরই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটদান মিটে যাবার পর আবার সেই সব জিনিসপত্র নিয়ে আরসি-তে ফিরে আসবেন ভোট কর্মীরা সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে করেই।
আরও পড়ুনঃ সেন্ট্রাল ফোর্স বছরে এই কয়েকদিন থাকবে, হুমকি মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের
এখান থেকে তৈরি হবে নতুন নিরাপত্তার বলয়। ইভিএম ও ভিভিপ্যাট সেখান থেকেই সটান চলে যাবে একেবারে স্ট্রং রুমে। স্ট্রং রুমটি আগে থেকেই নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া থাকবে। স্ট্রং রুমের একটি মাত্র দরজা থাকবে। এমনই জানাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। শুধু তাই নয় সেখানে ২৪ ঘন্টা থাকবে নিরাপত্তার ৩টি বলয়। থাকবে সিসিটিভি। কে কখন এল কন্ট্রোল রুমের কাছে, সবকিছুই ধরা পড়বে সিসিটিভিতে। যদিও সেখানে রিটার্নিং অফিসার এবং অবজার্ভার ছাড়া আর কেউই যেতে পারবে না এমনই কিন্তু নির্দেশিকা জারি করা হয়ে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুনঃ তৃণমূলের তারকা প্রার্থী নিয়ে অশ্লীল ও বিতর্কিত মন্তব্য ক্ষিতির
স্ট্রং রুমের মূল দরজার কাছে পৌঁছতে গেলে প্রথমেই রিটার্নিং অফিসার অথবা অবজারভারকে সার্চ করা হবে। তারপরের ধাপে গেলে সেখানে পুনরায় সমস্ত কিছু নথিপত্র খতিয়ে দেখে তার পরেই তৃতীয় বলয় এর দিকে তাদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। তৃতীয় নিরাপত্তা বলয়ে গিয়ে সেখানে নিজের নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার এবং নিজের পদ লিখতে হবে খাতায়। এরপর মোতায়েন থাকা এক সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনী উক্ত ব্যক্তিকে মূল দরজার কাছে নিয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের
স্ট্রং রুমের মধ্যে একবার ইভিএম ও ভিভিপ্যাট ঢুকে গেলে স্ট্রং রুমকে সম্পূর্ণ সিল করে দেওয়া হবে। একেবারে গণনার দিন সকালবেলায় সেই সিল অবজার্ভার এবং রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট প্রার্থী বা তার এজেন্টদের সামনে খোলা হবে এবং তারপর একে একে ইভিএম বার করে এনে গণনার কাজ শুরু করা হবে। তবে এই স্ট্রং রুম রিটার্নিং অফিসার এবং অবজারভার ছাড়া প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের অনুমতি পাওয়া প্রার্থী ও তার এজেন্টরা দেখতে যেতে পারবেন একই নিয়ম মেনে।
আরও পড়ুনঃ মিমি নুসরত এর চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ বিতর্কে জড়ালেন দিলীপ ঘোষ
এই স্ট্রং রুমের এই রকম কঠিন নিরাপত্তা বলয় থাকছে ২৪ ঘন্টাই। যেখানে গণনা কেন্দ্র তৈরি করা হবে সেই গণনা কেন্দ্র থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে কাউকে প্রবেশ করতে গেলে কঠিন নিয়মের বেড়াজালে প্রবেশ করতে হবে। যে নিয়মের বিধি ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে লিখে সব রাজনৈতিক দল রিটার্নিং অফিসার ও অফিসারদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাবুলকে হারাতে ১ কোটি টাকার কাজের টোপ, বিতর্কিত ঘোষণা মেয়রের
গণনা কেন্দ্রের থেকে একদম বাইরে মূল রাস্তা পর্যন্ত মোট পাঁচটি স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকছে। একেবারে রাস্তায় থাকবে রাজ্য পুলিশের লাঠি ধারী পুলিশ। তারপরে থাকবে ফ্লাইং স্কোয়াড। এরপর থেকেই থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সমস্ত নথিপত্র দেখেই এইখান থেকেই প্রবেশ করতে হবে সকলকে। নিজের পরিচয় পত্র এবং অনুমতি পত্র ছাড়া আর কোন কিছুই নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। বিশেষ করে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুনঃ বাংলায় নির্বাচন কমিশনের কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ বিজেপির
এই তৃতীয় বলয় পেরোনোর পর চতুর্থ বলায় হবে মূল চেকিং। সেখানে সব কিছু পরীক্ষা করার পর তার পরে সেখান থেকে ঢুকে যাবে সোজা গণনা কেন্দ্রের ভিতর। স্ট্রং রুম এবং গণনা কেন্দ্র এর মাঝে কোন মতেই রাজ্য পুলিশের কোন কর্তা ব্যক্তি কেউ থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুনঃ বাবুলকে ‘বাচ্চা ছেলে’ বলে কটাক্ষ করলেন ‘সেন্সেশনাল’ মুনমুন
পাশাপাশি এই তৃতীয় ও চতুর্থ বলয়ের মাঝখানে থাকবে মিডিয়া সেন্টার। সংবাদমাধ্যমের জন্য নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হলেও সেখানেও থাকছে বেশ কিছু কড়াকড়ি। ধাপে ধাপে চিত্রসাংবাদিকদের গণনা কেন্দ্রের ভেতর নিয়ে যাবেন নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত কর্মীরা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী।
তবে এই প্রথম নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে গণনা কেন্দ্রের ভেতর ইভিএম এর ছবি তোলা যাবে না। তবে সকালবেলা গণনার এক ঘন্টা আগে রিটার্নিং অফিসার অফিসার এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের পৌঁছাতে হবে। সকলের সামনেই সিল ভেঙ্গে দরজা খুলে বার করে আনা হবে ইভিএম।
আরও পড়ুনঃ ভোটের দিন ঘোষণার পরেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বাংলায় এগিয়ে তৃণমূল
যখন সিল ভাঙ্গা হবে তখন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই ছবিও ভিডিওগ্রাফি করে নির্বাচন কমিশনে মুহূর্তের মধ্যেই পাঠাতে হবে প্রত্যেক রিটার্নিং অফিসারকে। তাই গোটা দেশজুড়ে যখন রাজনৈতিক চাপানোউতোরে রীতিমতো উত্তেজনার পারদ চড়ছে তখন নির্বাচন কমিশন কিন্তু তার নিজের ঘর গোছানোর কাজ খুব সুন্দর ভাবে ও সন্তর্পনে করে চলেছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলায় বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।