নিউজিল্যান্ডের ২ টি মসজিদে গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে মেরে ফেলেছে এক বন্দুকবাজ। তাকে ক্রিস্টান জঙ্গি বলা কেন হবে না সেই নিয়ে চলছে বিতর্ক। এবার সেই বিতর্কে অংশ নিয়ে কি বললেন বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন? দেখে নিন।
তসলিমা লিখেছেন:
সারা মুসলিম বিশ্ব কেঁপে উঠেছে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী ঘটনার খবর শুনে। মুসলিমদের ওপর মানুষের এমনিতে অনেক রাগ, কারণ মুসলিমরা বিশ্ব জুড়ে ভয়ংকর ভয়ংকর সন্ত্রাসী কান্ড ঘটায়। শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটে, শত শত মেয়ে ধর্ষিতা হয়। সে কারণে কিছু মুসলিম বিদ্বেষী লোক সুযোগ পেলে মুসলিমদের অপমান, নির্যাতন করতে ছাড়ে না। মসজিদে সন্ত্রাসী আক্রমণ মুসলিমদের প্রতি সেই ঘৃণারই বহিঃপ্রকাশ।
আরও পড়ুনঃ মিমি নুসরত এর চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ বিতর্কে জড়ালেন দিলীপ ঘোষ
মসজিদে সন্ত্রাসী আক্রমণ অবশ্য নতুন কিছু নয়। সুন্নী সন্ত্রাসীরা শিয়াদের মসজিদে, বা আহমদিয়াদের মসজিদে প্রায়ই হামলা চালায়।
সন্ত্রাসী লোকটি উগ্র ডানপন্থী, বর্ণবাদী, সাদা নয় এমন মানুষদের, বিশেষ করে অভিবাসীদের ঘৃণা করে। নরওয়ের বর্ণবাদী সন্ত্রাসী এন্ডারস ব্রেইভিকের মতো। মুসলিমদের প্রতি ঘৃণাটা তাদের একটু বেশিই।
তৃণমূলের তারকা প্রার্থী নিয়ে অশ্লীল ও বিতর্কিত মন্তব্য ক্ষিতির
মুসলিম বিদ্বেষীরা ভেবে নিয়েছে সব মুসলিমই সন্ত্রাসী, সুতরাং একটি মুসলিমকে হত্যা করা মানে একটি সন্ত্রাসীকে হত্যা করা। অধিকাংশ নিরীহ নিরপরাধ মুসলিমকে শাস্তি পেতে হয় অল্প সংখ্যক মুসলিমের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য।
মানবতা ভূলুন্ঠিত হয়েছে বলে মুসলিমরা যেভাবে একজোট হয়ে হাহাকার করছে, ঠিক সেভাবেই কেন তারা হাহাকার করে না যখন মুসলিম সন্ত্রাসীদের হাতে অমুসলিমরা বা ইসলামে অবিশ্বাসীরা মরে? তাহলে কি এটাই ঠিক যে মুসলিমরা মারা গেলে তারা যতটা দুঃখ পায়, অমুসলিমরা মারা গেলে ততটা পায় না? মুসলিম বিদ্বেষীদের দেখেছি, মুসলিম মরলে ওরা দুঃখ তো পায়ই না, বরং খুশি হয়। এ অনেকটা আবার তেমনই হয়ে গেল না তো!
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ভবিষ্যতের ভূত মুখ পোড়াল রাজ্য সরকারের
শুধু আমার পরিবারের বা আমার সম্প্রদায়ের লোক মরলে আমি কাঁদবো, অন্য কেউ মরলে আমার কিছু যায় আসে না , এ কোনও ভালো মানুষের কথা নয়।
মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসা দীর্ঘকাল পেতে হলে মুসলিমদের শুধু ‘সন্ত্রাসী নই’–এই ট্যাগই যথেষ্ট নয়, মুসলিমদের প্রতি যেমন, অমুসলিমদের প্রতিও তাদের সমান সহমর্মী হতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ম্যায় ভি চৌকিদার হু, আমজনতাকে ভোটের স্লোগান জানিয়ে দিলেন মোদী
মুসলিমরা অমুসলিমদের দেশে যতটা স্বাধীনতা , সহযোগিতা, সম্মান পায়, ততটা কোনও মুসলিম দেশ থেকে পায় না। তাই যত ধর্মান্ধই হোক, তারা অমুসলিমদের দেশে বাস করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ তারকা যুদ্ধে বিজেপির বাজি শ্রাবন্তী, অগ্নিমিত্রা, চলছে জোর জল্পনা
সারা পৃথিবীর অমুসলিম লোক যেভাবে নিউজিল্যান্ডের নিরীহ মুসলিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে, যেভাবে সমব্যাথী হচ্ছে, মুসলিমদেরও এ থেকে শেখা উচিত। অমুসলিমদের নৃশংস মৃত্যু হলে মুসলিমদেরও এভাবে শোক প্রকাশ করা উচিত, এভাবে সমব্যাথী হওয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ অর্জুনের হাত ধরে বারাকপুর লোকসভা ছিনিয়ে নিতে পারে বিজেপি
যারা মুসলানদের সন্ত্রাসী হওয়ার পেছনে আমেরিকা আর ইজরাইলএর কার্যকলাপকে দোষ দেয়, তারা কি এখন নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী লোকটির মসজিদে ঢুকে মুসলানদের হত্যা করার পেছনে, আইসিস, আল কায়দা, বা বোকো হারামের কার্যকলাপকে দোষ দিচ্ছে? যদি না দেয়, তাহলে নিশ্চয়ই কোথাও কোনও গন্ডগোল আছে।
আরও পড়ুনঃ মা মাটি মানুষ এখন শুধুই মানি মানি মানি
মুসলিমদের শুধু শিশু হলে চলবে না, এবার সময় হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কের মতো আচরণ করার, দায়িত্ববান হওয়ার। ‘আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলা চলবে না,আমার আইন নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার পোশাক নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার খাবার নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার পশু-জবাই নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার সমাজের নারী-পুরুষ বৈষম্য নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার অনুভূতিতে কারো আঘাত দেওয়া চলবে না, আমার নবীকে আঁকা চলবে না, তাহলে মেরে ফেলবো, আগুন জ্বালিয়ে দেবো, দুনিয়া ধংস করে ফেলবো’… শিশুর মতো আবদার আর অসভ্যের মতো আচরণ!
আরও পড়ুনঃ মমতার প্রার্থী তালিকা নিয়ে গোপনে ক্ষোভ বাড়ছে জেলায় জেলায়
সভ্য হতে চাইলে শুধু নিজের নয়, পৃথিবীর সবার– সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব লিংগের, সব ভাষার মানুষের মানবাধিকারে, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারে, তাদের মত প্রকাশের অধিকারে বিশ্বাস করতে হবে।