The News বাংলা: ৬৬০০০ টাকা মাস মাইনে পাওয়া উচ্চবর্ণের হিন্দুদের জন্য এবার সংরক্ষণ নরেন্দ্র মোদীর। আর তাই নিয়েই দেশ জুড়ে তুমুল বিতর্ক। ভোটের মুখে ফের সংরক্ষণ এর দিকেই ঝুঁকছে বিজেপি, অভিযোগ বিরোধীদের।
উচ্চবর্ণের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির ভোট ব্যাঙ্ক পেতে সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাবে সিলমোহর দিল মোদী সরকারের মন্ত্রীসভা। সোমবার মন্ত্রিসভায় সর্বসম্মতিতে পাস হয়ে যায় এই প্রস্তাব। পাঁচ একরের কম জমি যাঁদের এবং যাঁদের বার্ষিক আয় ৮ লাখের কম তাঁরা এই সংরক্ষণ আওতায় আসবেন।
আরও পড়ুনঃ হিন্দুত্ববাদীদের নিশানা করতে মসজিদে পাথর ছুঁড়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা, ধৃত সিপিএম নেতা
ভোটের মুখে মঙ্গলবারই লোকসভায় পেশ হচ্ছে উচ্চবর্ণের জন্য এই সংরক্ষণ প্রস্তাব বিল। ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভায় পাশ করিয়ে ভোট প্রচারের হাতিয়ার এই নতুন অস্ত্র এ এবার শান দিচ্ছে বিজেপি। তবে লোকসভা ও রাজ্যসভায়, দুটোতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় বিজেপি। তাই ওই বিল সংসদে শেষমেশ পাশ হবে না এটা বলাই যায়।
তবু পাশ না হলেও ভোটের ময়দানে হিন্দু সংরক্ষণ নিয়ে ফায়দা তোলা যাবে বলেই মনে করছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। তবে বিরোধীদের কটাক্ষ, এই প্রস্তাব আসলে ‘গিমিক’। শুধু ভোটের মুখে বাজার গরম করার তাল।
উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছিল, উত্তরপ্রদেশের ঠাকুর, রাজস্থানের রাজপুত, হরিয়ানার জাঠ, গুজরাটের প্যাটেল পতিদার, মহারাষ্ট্রের মারাঠা সম্প্রদায়ের নেতারা। এর মাধ্যমে লোকসভা ভোটের আগে সব রাজ্যের সব হিন্দু নেতাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা মোদী সরকারের।
আরও পড়ুনঃ
বিজেপি না তৃণমূল, পাহাড়ে মোর্চার জোট নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে
কংগ্রেস ছেড়ে মমতার ‘মহানায়িকা’ এবার মোদীর বক্স অফিসে
ভোরবেলায় শবরীমালা মন্দিরে ঢুকে ইতিহাস সৃষ্টি ‘মা দুর্গার’
দেশপ্রেম বাড়াতে স্কুলের রোল কলে এবার ‘জয় হিন্দ’ ও ‘জয় ভারত’
১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে সরকারি চাকরি ও ভর্তির ক্ষেত্রে সংরক্ষণে ৫০ শতাংশ উর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সংবিধানের ১৬(৪) অনুচ্ছেদে তফশিলি জাতি ১৫ শতাংশ, তফশিলি উপজাতি ৭.৫ শতাংশ এবং ওবিসি ২৭ শতাংশ সংরক্ষিত রয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে তফশিলি জাতি ১৬.৬৬ শতাংশ এবং ওবিসি ২৫.৮৪ শতাংশ বাড়িয়ে মোট ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়। তাই, কেন্দ্রের এই ১০ শতাংশ উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ কতটা যুক্তিযুক্ত ও গ্রাহ্য হবে সেটাই দেখার।
১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, চাকরি বা শিক্ষায় সংরক্ষণ যেন ৫০ শতাংশের কম হয়। কিন্তু তফসিলী জাতি-উপজাতিদের পাশাপাশি দরিদ্র উচ্চবর্ণের জন্য যদি সংরক্ষণ করতে হয়, সেক্ষেত্রে তার পরিমাণ হবে ৬০ শতাংশ। এই ইস্যুটাকেই হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি।
সংবিধানের ১৫ এবং ১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতেই ওই বিল পেশ করা হবে। তবে, মঙ্গলবারই শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। আর দুকক্ষেই দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নেই বিজেপির। তাই কোনোরকমেই এই অধিবেশনে এই বিল পাস হওয়া সম্ভব নয়। তবে শীতকালীন অধিবেশন দু দিন বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
মনে করা হচ্ছে এই অধিবেশনে শুরুটা করে দেওয়া হল। ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে বাজেট অধিবেশন। সেখানে ভোটের ঠিক আগে বিলটিকে পাশ করানোর মরিয়া প্রচেষ্টা চালাবে সরকার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অবশ্য মনে করছেন, সংসদে ওই বিল পাশ করা কার্যত অসম্ভব। আর কোনওভাবে যদি এই বিল আদালতের দরজায় গিয়ে পৌঁছয়, তাহলে অন্তত লোকসভা নির্বাচনের আগে তা পাশ করানোর কোন সম্ভবনাই নেই।
আরও পড়ুনঃ
ফের গরু চোর সন্দেহে খুন, এবার ‘গোরক্ষকের’ নাম মুসলিম মিঁয়া
বউ অদল বদল, বিকৃত যৌনাচারে ধর্ষণের অভিযোগ গৃহবধূর
EXCLUSIVE: সংখ্যালঘুদের ধর্মে সুড়সুড়ি দিয়ে প্রকাশ্যে ভারতের টাকার কালোবাজারি
EXCLUSIVE: নতুন বছরে সুখবর, রাজ্য সরকারি কর্মীরা পাচ্ছেন বকেয়া ডিএ
বিরোধীরা বলছেন, উঁচু জাতের জন্য সংরক্ষণ ঘোষণা করে মোদী সরকার করেকটি জিনিস প্রমাণ করল। সেগুলি হল,
১) মাসিক ৬৬ হাজার টাকা অবধি রোজগার, ১,০০০ স্কোয়ার ফিট ফ্ল্যাট ও ৫ একর জমির মালিক মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হিসাবে ঘোষণা করে বিজেপি বোঝাল ওরা আসলে বড়লোক ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের পার্টি।
২) এই খাতা থেকে ক্রিশ্চান, মুসলিম, বৌদ্ধ, জৈনরা বাদ পড়ে গেল, কারণ তাদের উঁচু জাত নেই।
৩) জাতপাতের বিরুদ্ধে লড়াই এখনও ভারতের অন্যতম প্রধান সামাজিক সংগ্রাম। বিজেপি এই লড়াইটা ঘেঁটে দিতে চাইছে।
৪) রাফায়েল বিতর্ক থেকে দৃষ্টি সরাতেই বিজেপি সরকারের এই প্রচেষ্টা।
তবে সব সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। উচ্চবর্ণের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া হিন্দুদের জন্য মোদী সরকার একমাত্র ভাবছে বলেই দাবি তাঁদের।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।