The News বাংলা, জাপানঃ গোটা বিশ্বের নিষেধ উপেক্ষা করে নতুন করে সমুদ্রে তিমি শিকার করার সিদ্ধান্ত নিল জাপান। আন্তর্জাতিক কড়া সমালোচনা সত্ত্বেও জাপান একথা জানিয়ে দিয়েছে। সামনের জুলাই মাস থেকেই দেশটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নতুন করে তিমি শিকার শুরু করতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের আঘাতে আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণ, পুড়ছে শহর
এজন্য তিমি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইডব্লিউসি থেকেও নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে যাচ্ছে জাপান। বেশ কিছু প্রজাতির তিমি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই কারণে ১৯৮৬ সালে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তিমি শিকার নিষিদ্ধ করে আইডব্লিউসি।
তবে ১৯৫১ সাল থেকে এই সংস্থার সদস্য জাপান বলছে, তিমি মাছ খাওয়া দেশটির সংস্কৃতির অংশ। জাপানের দাবি, অনেক বছর ধরেই জাপান তিমি শিকার করে আসছে। যা ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা’র কাজে ব্যবহার হয় এবং পরে সেই তিমি মাছ বিক্রি করা হয় বাজারে। বরাবর এই কর্মসূচীর কঠোর সমালোচনা করে আসছেন সংরক্ষণবাদীরা।
আরও পড়ুনঃ ১৪ বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে সুনামিতে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবার সুশি তৈরিতে তিমি মাছ ব্যবহার করা হয়। এখন নতুন এই ঘোষণার মানে হল, জাপান এখন বিলুপ্ত প্রায় মিংক প্রজাতির তিমি সহ সব ধরণের তিমি মাছ শিকার করতে পারবে। তবে, সংরক্ষণবাদীরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন জাপানকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।
কী আছে জাপানের ঘোষণায়ঃ সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিহিদে সুগা জানিয়েছেন, তিমি শিকার জাপানের জলসীমা এবং দেশটির অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের মধ্যে সীমিত রাখা হবে। যে কারণে অ্যান্টার্কটিক জলসীমা ও দক্ষিণে তিমি শিকার বন্ধ করে দেবে জাপান। এই সিদ্ধান্তকে সংরক্ষণবাদীরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। সরকারী বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকারের টেকসই একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার ব্যপারে তত আগ্রহী ছিল না আইডব্লিউসি।
আরও পড়ুনঃ ‘পেলেই ছিঁড়ে খাবে’, কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা
জাপান বৈজ্ঞানিক গবেষণার নামে তিমি শিকার করেঃ জাপানের অভিযোগ, আইডব্লিউসি কেবল সংখ্যায় তিমি মাছ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী। জাপানের উপকূলীয় এলাকার বহু জনগোষ্ঠী শত শত বছর ধরে তিমি মাছ শিকার করে আসছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটিতে তিমি মাছের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। কারণ সেসময় দেশটির মাংসের প্রধান উৎস ছিল তিমি মাছ। এই মূহুর্তে জাপানে যত মাংস বিক্রি হয়, তার মধ্যে তিমির মাংস দশমিক এক শতাংশ বলে জানাচ্ছে দেশটির একটি প্রধান সংবাদপত্র।
কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাপীঃ এক যৌথ বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাপানের এই সিদ্ধান্তে দেশটি খুবই ‘আশাহত’ হয়েছে। “অস্ট্রেলিয়া সব সময়ই সব ধরণের তিমি শিকারের বিপক্ষে অবস্থান নেবে, তা সে বাণিজ্যিক বা ‘বৈজ্ঞানিক’ যে উদ্দেশ্যেই শিকার করা হোক”।
আরও পড়ুনঃ ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসবাদীদের অত্যাচারে দেশ ছাড়ছে মানুষ
অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশবাদী একটি সংগঠন হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল এই ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, জাপান আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে। গ্রীনপিস জাপান নামের আরেকটি পরিবেশবাদী সংগঠন জানিয়েছে তারা সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাবে। সংস্থাটি বলছে, জুনে জি-টুয়েন্টি সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসেবে জাপান এজন্য ব্যাপক সমালোচনার শিকার হবে।
আরও পড়ুনঃ পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি অস্ট্রেলিয়ার
বর্তমান নিষেধাজ্ঞায় কী আছেঃ বিশ্বব্যাপী তিমি মাছের বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে, সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে আইডব্লিউসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো শিকার বন্ধে একমত হয়। জাপান, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ডের মত যেসব দেশ সেসময় তিমি শিকার করত, তারা ভেবেছিল তিমির সংখ্যা একটি কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পৌঁছানো পর্যন্ত হয়ত ঐ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
আরও পড়ুনঃ জেল হতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের
কিন্তু সিদ্ধান্ত সাময়িক ছিল না। এই রাষ্ট্রগুলো তখন তিমি শিকার তাদের দেশীয় সংস্কৃতির অংশ বলে নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বর্তমানে পৃথিবীতে তিমির সংখ্যা সন্তোষজনক অবস্থায় আছে, বেশিরভাগ তিমি প্রজাতিই বিপদাপন্ন নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছে জাপান সহ এই দেশগুলি। গত সেপ্টেম্বরে জাপান আইডব্লিউসিকে বাণিজ্যিকভাবে তিমি শিকারের অনুমতি দেবার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।
আরও পড়ুন: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ‘আজাদ লড়াই’কে সম্মান নরেন্দ্র মোদীর
ফলাফল কী হবেঃ গত ৩০ বছর ধরে জাপান বৈজ্ঞানিক গবেষণার অজুহাতে নিয়মিত তিমি শিকার করে আসছে। প্রতিবছর দেশটি গড়ে ২০০টি থেকে ১২০০টি পর্যন্ত তিমি শিকার করে। কারণ হিসেবে দেশটির দাবি তারা তিমি মাছের সংখ্যা যাচাই করে কোন প্রজাতি বিপদাপন্ন কিনা তা দেখার জন্য এমনটি করে থাকে। তবে জাপান যেহেতু এখন আনুষ্ঠানিকভাবে আইডব্লিউসি ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা হয়ত নেয়া যাবে না।