ধর্মান্তরকরণের উদ্দেশ্যে এসে আদিবাসীদের হাতে নিহত মার্কিন খ্রীষ্টান মিশনারী

716
Image Source: Google

শতদ্রু কর, নিউ দিল্লিঃ আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় গিয়ে আদিবাসীদের হাতে নিহত হলেন অ্যালেন চাউ নামের এক খ্রীষ্টান মিশনারী। নিহত ব্যক্তি ২৭ বছরের এক মার্কিন বাসিন্দা। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যেই তিনি ওই আদিবাসীদের গ্রামে গিয়েছিলেন বলেই অভিযোগ।

জানা গিয়েছে, খ্রীষ্টান মিশনারী ওই যুবক গত ১৬ই নভেম্বর স্থানীয় ৭ মৎস্যজীবীর সহায়তায় আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ক্ষুদ্র দ্বীপ নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডে পৌঁছে যান। পৌঁছনো মাত্রই ঝাঁকে ঝঁকে তির উড়ে আসে অ্যালেনের দিকে। আর তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।

Image Source: Google

উল্লেখ্য, সেন্টিনেল উপজাতি পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান নিকোবরের বসবাসরত এক অতি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সেন্টিনেল দীপপুঞ্জে মাত্র ৪০ জন সেন্টিনেল জনজাতির বসবাস ছিলো। বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ফের ভূস্বর্গে চরম রাজনৈতিক ডামাডোল

বহির্বিশ্ব থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন এক জনগোষ্ঠি সেন্টিনেলিজরা। বাইরের আধুনিক বিশ্বের সাথে কোনপ্রকার সংযোগরক্ষায় এরা আগ্রহী নয়। বাইরের জগতের লোকেরাও তাদের বিরক্ত করুক, সেটা তারা চায়না। আর সেরকম হলে নৃশংস পথ অবলম্বন করতেও এরা পিছপা হয়না।

Image Source: Google

২০১৭ সালে ভারত সরকার এই প্রসঙ্গে জানায় যে, সেন্টিনেলিজরা আদিম অধিবাসী। তাদের নিয়ে কোনওরকম ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তাদের এই এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশও সম্পূর্ণরূপে বেআইনী। আর এরকম জায়গায় ধর্মপ্রচারে আসায় তিতিবিরক্ত এই আদিবাসীরা। তারই খেসারত দিতে হল মার্কিন যাজককে।

মৃত্যুর আগের পাঁচদিনে বেশ কয়েকবার ওই দ্বীপে গিয়েছিলেন অ্যালেন। গত ১৪ই নভেম্বর বুধবারও সেন্টিনেল আইল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করেন অ্যালেন। কিন্তু বিফল হন। দু’দিন বাদেই পুনরায় সেখানে স্থানীয় ৭ জন মৎস্যজীবীর সাহায্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

আরও পড়ুন: অমৃতসরে প্রার্থনাসভায় গ্রেনেড হামলায় পাকিস্তানের হাত

১৬ই নভেম্বর শুক্রবার সেন্টিনেল দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছে নৌকো থেকে নেমে যান অ্যালেন। ছোট আরেকটি নৌকা নিয়ে একাই দ্বীপটির দিকে এগিয়ে যান তিনি। সেখানেই আদিবাসীদের আক্রমনে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর তাঁর গলায় দড়ি পেঁচিয়ে টানতে টানতে বালিয়াড়িতে নিয়ে যায় আদিবাসীরা। পোর্ট ব্লেয়ার পৌঁছে একজন স্থানীয় যাজককে পুরো ঘটনা জানান অ্যালেনকে সাহায্য করা ওই মৎস্যজীবীরা। এর পরে দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়।

Image Source: Google

ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ এই দ্বীপে মার্কিনী ব্যক্তির প্রবেশে সাহায্য করার অভিযোগে ৭ জন মৎস্যজীবীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের জেরা করেই ওই ব্যক্তির সেন্টিনেল দ্বীপে যাতায়াতের বিস্তারিত বিবরণ ও উদ্দেশ্য জানা গিয়েছে।

স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এর আগেও ওই যাজক অন্তত ৫ বার সেন্টিনেল দ্বীপে দিয়েছিলেন। মূলত ধর্মের বার্তা পৌঁছে দিতেই ওই দ্বীপে অবাধ যাতায়াত ছিলো তার। আন্দামান নিকোবর প্রশাসনের তরফে তাকে নেহাত পর্যটক হিসেবে উল্লেখ করার ক্ষেত্রে আপত্তি তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঘাসফুল ছেঁটে মমতার ‘কাননে’ কি এবার পদ্ম

আন্দামান পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল দীপেন্দ্র পাঠক জানিয়েছেন, ঘন ঘন সেন্টিনেল দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াতের আসল উদ্দেশ্যই ওই খ্রীষ্টান মিশনারী যুবক চেপে গিয়েছিলেন। এমনকী ধর্ম প্রচারের ও ধর্মান্তরকরণের ব্যপারেও আগে থেকে পুলিশকে কোনও ভাবেই অবহিত করা হয়নি।

অ্যালেনের মৃতদেহের খোঁজে ইতিমধ্যেই তল্লাশি শুরু হয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে হেলিকপ্টারও। তবে আদিবাসীরা রণমূর্তি ধারণ করতে পারে, এই আশঙ্কায় ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টার নামাতে সতর্কতা নিচ্ছে প্রশাসন।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন