The News বাংলা, কলকাতা: ৫ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পরেই সম্ভবত এপ্রিল-মে মাসে দেশে লোকসভা ভোট। বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ও লোকসভা উপনির্বাচনে দেখা গেছে বিরোধী ভোট এক হলেই হেরেছে বিজেপি। আর তাই লোকসভা ভোটেও,’একের বিরুদ্ধে এক’ লড়াইয়ের রাস্তা তৈরি করতে সোমবার বিকালে নবান্নে বৈঠকে বসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও চন্দ্রবাবু নাইডু।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে আসছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা টিডিপি সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু। সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নবান্নে এই বৈঠক হবে বলে ঠিক আছে।
২২ নভেম্বর বিজেপি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে দিল্লিতে একটি সভা ডাকা হয়েছে। তবে, বৈঠকের দিন নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন চলছে। এই পরিস্থিতিতে কতজন নেতা নিজেদের রাজ্য ছেড়ে আসতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সেই কারণে সেই সভা ডিসেম্বরে পিছতে পারে।
আরও পড়ুনঃ অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জমায়েতে অশান্তির আশঙ্কায় সংখ্যালঘুরা
দিল্লির বৈঠক এখনও নিশ্চিত না হলেও, এদিনের বৈঠকে টিডিপি সুপ্রিমোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধী শক্তিগুলিকে এক করার বিষয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে এই জোটের মুখ কে হবে তা নিয়েও এদিন আলোচনা হতে পারে।
২২ নভেম্বর বা ডিসেম্বরে দিল্লিতে সব বিরোধী দলকে নিয়ে বৈঠকের ব্যপারে চন্দ্রবাবু নাইডু বেশ কিছু দিন ধরেই তৎপর। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, এর আগে কর্নাটকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর সঙ্গে ও তামিলনাড়ুতে স্ট্যালিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। অখিলেশ যাদব ও মায়াবতীর সঙ্গেও বৈঠক হয়ে গিয়েছে। নবান্নে এসে দিল্লির বিরোধী বৈঠকে মমতাকে আমন্ত্রণ জানাবেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ‘গুজরাট দাঙ্গা’, মোদীর বিরুদ্ধে জাকিয়ার অভিযোগ শুনবে সুপ্রিম কোর্ট
তবে মমতা মনে করেন, সব বিরোধী দলের শীর্ষস্তরের নেতাদের এনে সম্মিলিত বিরোধী ঐক্যের ছবিটা ভাল করে তুলে ধরা না গেলে এই বৈঠক এখন না করাই ভাল। সূত্রের খবর, মমতা মনে করেন, কংগ্রেস তো বটেই, অখিলেশ-মায়াবতী-সহ সকলেরই উপস্থিতি নিশ্চিত করলে তার রাজনৈতিক তাৎপর্য অনেক বেশি হবে।
যদিও ইতিমধ্যে মায়াবতী যে ভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, তাতে বিরোধী জোট নিয়েই উঠে গেছে প্ৰশ্ন। তৃণমূল সূত্র বলছে, সোমবার চন্দ্রবাবুর সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টিও আলোচনায় উঠতে পারে। পাশাপাশি, গুরুত্ব পাবে ১৯ জানুয়ারি মমতার ব্রিগেড সমাবেশ। কারণ সেখানেও সব বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি চাইছেন মমতা।
আরও পড়ুনঃ দলকে লজ্জায় ফেলে ঘুষ কান্ডে জেলে বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী
এর আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করে অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি ফেডেরাল ফ্রন্টের বার্তা দেন। তারপরই হাওয়া অন্য দিকে বইতে শুরু করে।
কারণ চন্দ্রবাবু নাইডু মনে করেন, মোদীকে সরাতে গেলে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করা বিশেষ জরুরি। অন্য দলগুলিরও এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব রয়েছে। তাঁরই পরামর্শে বিভিন্ন বিরোধী দলের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রবীণ কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলটকে।
ঘেলঘট বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা শুরু করতেই ক্ষুব্ধ হন শরদ পওয়ার। প্রশ্ন ওঠে, অশোক গেহলট কে? বিরোধী শিবিরে অনেকেই বলেন, তা হলে কি চন্দ্রবাবুকে সামনে রেখে কংগ্রেস তার তাস খেলছে?
আরও পড়ুনঃ ফের বিজেপি কর্মীদের ‘পাচন’ মারার পরামর্শ কেষ্টর
যদিও, মায়াবতী এবং অখিলেশ দু’জনেই চন্দ্রবাবুকে জানিয়েছেন, বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে যে হেতু কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের দলের জোট হয়নি, তাই বিরোধী জোটের ওই বৈঠকটি বিধানসভার নির্বাচনপর্ব মিটে যাওয়ার পরে করাই ভাল।
সূত্রের খবর, ২২ নভেম্বরের প্রস্তাবিত বৈঠক নিয়ে মমতার সঙ্গে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বেরও কথা হয়েছে। আপাতত ওই বৈঠকের কিছু বাস্তব অসুবিধের কথা নিয়ে দুতরফে আলোচনা হয়েছে। একটি প্রস্তাব হল, এখনই না করে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের সময় এই বৈঠক করতে পারলে ভাল হয়।
আরও পড়ুনঃ ‘মুসলিম’ নাম বদলে ‘রামরাজ্য’ আনতে উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
চন্দ্রবাবু অবশ্য ২২ নভেম্বরের বৈঠক নিয়ে এখনও হাল ছাড়েননি। তিনি তাকিয়ে আছেন মমতার সঙ্গে সোমবারের বৈঠকের দিকে। যদিও চন্দ্রবাবু জানিয়ে রেখেছেন, মমতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। তাই ২২ নভেম্বরের বৈঠকটি করা না করার প্রশ্নে মমতার অভিমতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেবেন তিনি।
তবে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে সোমবারের নবান্নের বৈঠকের যথেষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। মমতা-চন্দ্রবাবুর এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে বিজেপিও।