বিশেষ রিপোর্ট : ভারতের অন্যতম প্রধান তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্তার লড়াই এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক ভার্মা ও বিশেষ ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সিবিআই দফতরেই সমস্যায় পড়া রাকেশ আস্থানা এই রাজ্যের সারদা ও নারদা মামলায় নজর দিতে পারবেন কি ?
নারদা-সারদা তদন্ত কি এ বার গতি হারাবে? প্রশ্নটা উঠছে ওই মামলাগুলির তদন্তের নেতৃত্বে থাকা রাকেশ আস্থানা নিজেই নিজের দফতরে বিপাকে পড়ায়।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দেশ জুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর নেতৃত্বে রয়েছেন সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানা। কিন্তু, তাঁর বিরুদ্ধেই ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় আপাতত বেসামাল সিবিআইয়ের অন্দর। ফলে প্রশ্ন উঠছে, নারদা-সারদা মামলায় অভিযুক্তরা কি কিছুটা বাড়তি অক্সিজেন পাবেন?
এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলে বেশ কয়েক জন নেতা-মন্ত্রী-সাংসদরা সারদা ও নারদা মামলাগুলিতে অভিযুক্ত। লোকসভা ভোটের আগে রাকেশ আস্থানা যথেষ্টই চাপে রেখেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্বকে। এখন, রাকেশ আস্থানা নিজেই ঘুষের মামলায় জড়িয়ে যাওয়ায় আপাততঃ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা।
গত জুন মাসেই রাকেশ আস্থানা নিজে কলকাতায় এসেছিলেন। শহরে এসে সারদা ও নারদা মামলা নিয়ে তদন্তে গতি বাড়ানোর নির্দেশও দেন তিনি। চিটফান্ড মামলাগুলিও যাতে গতি পায়, তার নির্দেশও দিয়েছিলেন আস্থানা। এর পরই সারদা ও নারদা মামলা নিয়ে নড়েচড়ে বসে সিবিআই। পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমনও পাঠানো হয়। যার ফলে অস্বস্তিতে পরে যায় মা মাটি মানুষের সরকার।
সিবিআইয়ের অন্দরেই আস্থানাকাণ্ডের পর অবশ্য সেই গতি কতটা বজায় থাকবে তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। শাসক দল তৃণমূল অবশ্য এই সুযোগে সিবিআইকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্যবহারের অভিযোগ তুলতে ছাড়ছে না। রাকেশ আস্থানার এই অবস্থা দেখে বেশ খুশিই হয়েছেন তৃণমূলের অভিযুক্ত নেতারা।
এদিকে রাকেশ আস্থানার সঙ্গে সারদা ও নারদা মামলায় সিবিআই তদন্তকারি দলে কাজ করা ডেপুটি সুপার দেবেন্দ্র কুমারকে সাক্ষীর বয়ান বদলের অভিযোগে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে। অর্থাৎ সারদা মামলায় তদন্তকারী অফিসাররাই এখন চরম সমস্যায়।
সিবিআই-এর অন্দরের এই দ্বন্দ্ব মেটাতে শেষ পর্যন্ত ময়দানে নামতে হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তদন্তকারী সংস্থার প্রধান অলোক ভার্মা এবং স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে প্রধানমন্ত্রী ডেকে পাঠিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ডিরেক্টর এবং স্পেশাল ডিরেক্টরের মধ্যে কাজিয়া এই মুহূর্তে দিল্লির প্রশাসনিক মহলে অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এতে হাসির ছোঁয়া সারদা ও নারদা মামলায় অভিযুক্তদের মুখে।
যদিও তৃণমূল নেতা – নেত্রীদের তরফে বারবার সিবিআই এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু সারদা ও নারদা মামলায় তদন্তকারী অফিসাররাই এইভাবে তদন্তের মুখে পরে যাওয়ায় আপাততঃ স্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব।