স্বীকৃতি না রাজনৈতিক ফায়দা, নেতাজীকে নিয়ে বিতর্কে মোদী

841
Image Source: Google

বিশেষ রিপোর্ট : নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বছর পূর্তিতে রীতি ভেঙে লালকেল্লায় এই বছর দ্বিতীয়বার জাতীয় পতাকা তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর এই নিয়েই এখন তুমুল বিতর্ক গোটা দেশ জুড়ে। স্বীকৃতি প্রদান না নেতাজীকে সামনে রেখেই লোকসভা ভোটে বাংলা সহ ভারতে আসন বাড়াতে চাইছে মোদীর বিজেপি ?

সুভাষচন্দ্র বসুর অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বছর পূর্তিতে লালকেল্লায় এই বছর দ্বিতীয়বার জাতীয় পতাকা তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর পুরোনো সদস্যরা। উল্লেখ্য, আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বছর পুর্তি অনুষ্ঠানে লালকেল্লার মাথায় তেরঙ্গা উঠুক, এমন দাবি করেছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের প্রপৌত্র বিজেপি নেতা চন্দ্রকুমার বোস। তাঁর এই আবেদন মেনে নিয়ে গত রবিবার দেশের সর্বত্র অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বছর-পূর্তি ঘটা করে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি সরকার।

লোকসভা ভোটের দোরগোড়ায় বিজেপির এই ‘নেতাজী-প্রেমে’ অবশ্য রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা। রবিবার লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশ্য বলেন, ‘নেতাজী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সব ভারতীয় সমান সুযোগ পাবেন। এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে মানুষ তাঁর নিজের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করবেন। তাঁর সেই স্বপ্ন এখনও পূরণ হয়নি’।

আর এখানেই সমালোচনা বিরোধীদের। বিরোধীদের মতে বিজেপির লক্ষ্য এবার পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৯ এ লোকসভা ভোটে বাংলায় আসন বাড়াতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তাই এবার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে সামনে রেখে এগোতে চাইছে বিজেপি। বাঙালির নেতাজী আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট বাড়াতে চাইছে বিজেপি, অভিযোগ বিরোধীদের।

রবিবার, আজাদ হিন্দ ফৌজের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাদিবসে একটি সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সংগ্রহশালায় রয়েছে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ব্যবহৃত নানা সামগ্রী।

এছাড়াও ৩০ ডিসেম্বর পোর্টব্লেয়ার যাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ১৯৪৩ সালে এই দিনেই ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিলেন নেতাজী। আজাদ হিন্দ ফৌজের সেই পতাকা উত্তোলনের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আন্দামান যাবেন মোদী। সেখানে তেরঙ্গা পতাকা তুলবেন তিনি।

ভারত ভূখণ্ডে প্রথম পতাকা উত্তোলনের স্মৃতিতে ১৫০ ফুট উঁচু পতাকা তুলবেন মোদী। সঙ্গে নেতাজীর স্মরণে একটি ডাকটিকিট ও মুদ্রা প্রকাশ করবেন তিনি। এর পর সেলুলার জেলে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঙালিদের মনে নেতাজী নিয়ে আবেগ বিলক্ষণ জানে বিজেপির থিংক ট্যাঙ্ক। তাই নেতাজীকে হাতিয়ার করে ২০১৯ নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করার পরিকল্পনা করেছে তারা।

তবে, এই নিয়ে সব সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি নেতারা। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘নেতাজীকে সম্মান দেওয়া নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তাঁরা আগে কোনদিন ভারতের এই মহান সন্তানকে শ্রদ্ধা জানান নি’। এখন নরেন্দ্র মোদী সরকার নেতাজীর সেই অবদানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে তাই এত সমালোচনা’।

সব মিলিয়ে নেতাজীকে নিয়ে ফের বিতর্কে কেন্দ্রীয় সরকার। কংগ্রেসের পর এবার নেতাজী বিতর্কে মোদী সরকারও। লোকসভা ভোটের আগে ফের দেশ জুড়ে নেতাজী চর্চা।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন