ইউনেস্কো দুর্গা পুজো, কেন্দ্রের তরফে আগেই তপতী গুহ ঠাকুরতাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল

181
ইউনেস্কো দুর্গা পুজো, কেন্দ্রের তরফে আগেই তপতী গুহ ঠাকুরতাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল
ইউনেস্কো দুর্গা পুজো, কেন্দ্রের তরফে আগেই তপতী গুহ ঠাকুরতাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল

স্বীকৃতি চুরি গেছে, তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুরি করে নিয়েছেন স্বীকৃতি। এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। কিন্তু এই চুরির পিছনে কেন্দ্র সরকারের ভুমিকাও কিন্তু কম নয়। ইউনেস্কো দুর্গা পুজো, কেন্দ্রের তরফে আগেই তপতী গুহ ঠাকুরতাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল। ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। তাই ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যার পুরোভাগে আছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আসল কৃতিত্ব যার, তিনি এই প্রচার থেকে অনেক-অনেক দূরে। তাঁর স্বীকৃতি গিয়েছে চুরি।

ভদ্রমহিলার নাম তপতী গুহঠাকুরতা। এঁনার চেষ্টাতেই কলকাতার দুর্গা পুজো, ২০২১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর, ইউনেস্কোর শিল্প ঐতিহ্যবাহী উৎসবের তালিকা-ভূক্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে তপতী গুহ ঠাকুরতা কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে দায়িত্ব পান, দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর মানবিক ঐতিহ্য মন্ডিত শিল্পের তালিকায় যুক্ত করার প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রামাণ্য চিত্র সংগ্রহ করে উপস্থাপনা করার জন্য।

কারণ ২০০৩ সাল থেকে তপতী গুহ ঠাকুরতা, বাংলায় দুর্গা পূজা নিয়ে গবেষণা করছিলেন। ২০১৫ সালে কলকাতার দুর্গা পুজোকে নিয়ে তাঁর লেখা, ‘ইন দ্যা নেম অফ গডেস; দ্যা দুর্গা পূজাস অফ কন্টেমপোরারি কলকাতা’, সমাদৃত হয়। স্বাভাবিক কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দফতর, তাঁর ওপরই ভরসা রাখেন। খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর, তাঁকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রককে নির্দেশ দেয়।

আরও পড়ুনঃ ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে মমতার পদযাত্রা, ডাকাই হয়নি নেপথ্যের নায়িকা তপতীকে

কুড়িটি ছবি ও একটি ভিডিওর সাহায্যে, কলকাতার দুর্গোৎসবের প্রামাণ্য শৈল্পিক ইতিহাস তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দফতরের সূত্র ধরে ইউনেস্কোর সংশ্লিষ্ট দফতরে পেশ করেন, যা শেষ পর্যন্ত আদায় করে নেয় কলকাতার জন্য এক বিরলতম সম্মান। কলকাতার দুর্গা পুজো হেরিটেজের তকমা পায়।

কোন ঘর থেকে তপতী এসেছেন, তা কি জানে বাঙালি? সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতার বোন, প্রয়াত ইতিহাসবিদ হরি বাসুদেবনের স্ত্রী তপতী, বর্তমানে সেন্টার ফর স্টাডি ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডিরেক্টর প্রফেসর। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী তপতী গুহ ঠাকুরতা অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই গবেষণা করেছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চার্লস ওয়ালেস ভিজিটিং ফেলোশিপ’ লাভ করেছেন। লন্ডনে ‘ইয়েল সেন্টার ফর ব্রিটিশ আর্টে’র ভিজিটিং ফেলো হয়েছেন।

সেই কৃতি মানুষটাকেই দায়িত্ব অর্পণ করেছিল, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। কলকাতাকে বিশ্বের দরবারে যথাযথ-ভাবে উপস্থাপিত করে, তিনি হেরিটেজ তকমায় সম্মানিত করিয়েছেন। আজ তিনিই কোথাও নেই। তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তপতীর স্বীকৃতি চুরি করেছে, অভিযোগ বিজেপির। কিন্তু কেন্দ্র সরকার চাইলে, এই মানুষটির কৃতিত্ব বাংলার মানুষের কাছে অনেক আগে পৌঁছে দিতে পারত।

যে মিথ্যা চিত্রনাট্যের উপর ভর করে, রেড রোডে ক্রেডিট নিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার, তা অনেক আগেই বন্ধ করতে পারত মোদী সরকার। তপতী গুহঠাকুরতা-কে অনেক আগেই, সকলের সামনে আনতে পারলে রোখা যেত এই কৃতিত্ব চুরির খেলা। কেন্দ্র সরকার ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি আনার জন্য সম্মানিত করলে, বাংলা ও ভারতের মানুষ অনেক আগেই জানতে পারত, তপতী গুহ ঠাকুরতার কর্মকাণ্ড। রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রও, তপতী গুহ ঠাকুরতাকে প্রচারের আলোয় আনার কোন চেষ্টাই করেনি।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন