শনি ও রবিবারের পর সোমবারেও রাজ্য জুড়ে রুট মার্চ করল কেন্দ্রীয় বাহিনী। এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম সবাই মুখ খুলেছেন এই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে। বাম কংগ্রেস বিজেপির আপত্তি নেই, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কেন মাথাব্যথা শুধু তৃণমূলের? উঠছে প্রশ্ন।
সোমবার, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে রুটমার্চ করল কেন্দ্রীয় বাহিনী। যাদবপুর, ওয়েলিংটন থেকে গার্ডেনরিচ- সর্বত্রই শোনা গেল ভারী বুটের শব্দ। এদিকে বাহিনীর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
>আরও পড়ুনঃ বিরোধী মহিলা প্রার্থীদের ‘মাল’ সম্বোধন করে কুরুচিপূর্ণ আক্রমণ ফিরহাদের
আমডাঙা, বাঁশদ্রোণী, যাদবপুর, বিজয়গড়, ওয়েলিংটন, ওয়াটগঞ্জ, খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ – রাজপথ থেকে অলিগলি, রবিবার শহরের আনাচে কানাচে রুটমার্চ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সকাল ও সন্ধ্যায় রোজই রুটমার্চ চলবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ তৃণমূলের তারকা প্রার্থী নিয়ে অশ্লীল ও বিতর্কিত মন্তব্য ক্ষিতির
পাড়ার মোড়ে মোড়ে স্থানীয় মানুষ ও দোকানদার-ব্যবসায়ী সবার সঙ্গে কথা বলছেন বাহিনীর সদস্যরা। নির্বিঘ্নে ভোটদানের আশ্বাস দিচ্ছেন এলাকার মানুষকে। এদিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “বিজেপি বাহুবলী হতে চাইছে, কাশ্মীরেও এত কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে কি না সন্দেহ। তার থেকেও বেশি বাহিনী এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে”।
আরও পড়ুনঃ অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের
“কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেই বাড়ি–বাড়ি হুমকি দিচ্ছে, বাহিনী পক্ষপাতদুষ্ট”, অভিযোগ করেছে তৃণমূল। রবিবার দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে প্রার্থী মালা রায়ের সমর্থনে কর্মিসভা ছিল। পার্থ চ্যাটার্জি থেকে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত বক্সি, সুব্রত মুখার্জি ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সকলেই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।
আরও পড়ুনঃ মিমি নুসরত এর চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ বিতর্কে জড়ালেন দিলীপ ঘোষ
তারা বলেছেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেই বাড়ি–বাড়ি হুমকি দিচ্ছে”। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি বলেন, ‘”বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখা গেছে, তারা হুমকি দিচ্ছে। পক্ষপাতদুষ্ট এই বাহিনী। কাশ্মীরেও এতো বাহিনী পাঠানো হয়নি। এরা রুটমার্চ করতেই পারে। রুটমার্চের নামে যা করছে তা মেনে নেওয়া যায় না”।
আরও পড়ুনঃ চোখ মেরে শাড়ির আঁচল ফেলে প্রচার মুনমুনের, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক বা না থাকুক, আমাদের কিছু এসে যায় না। ২০১৪–র নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছিল। বিজেপি ভেবেছিল আমরা হেরে যাব। ৩৪টি আসন আমরা পেয়েছিলাম। সে–সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী কম অত্যাচার করেনি। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ মমতাকে দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করে। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী আমাকেই আমার বুথে ঢুকতে দেয়নি”।
আরও পড়ুনঃ ভাটপাড়ায় অনাস্থা, তৃণমূল বনাম বিজেপির জমজমাট লড়াই
মেয়রের প্রশ্ন, “এত আগে থেকে কেন বাহিনী পাঠানো হল? কাশ্মীর ও জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরাতে এতো বাহিনী পাঠানো হয়নি। আমার মনে হয়, এর পেছনে বিজেপি–র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। বাহিনী আসতেই পারে। এসে যে–কাজ ওরা করছে তা সমর্থনযোগ্য নয়”।
কেন এত আগে থেকে বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হল তা নিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিজেপি প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। কোনও সংগঠন নেই। এদিন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, সুব্রত মুখার্জি ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বাহিনী নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুনঃ মোদীর সঙ্গে সবাই চৌকিদার, অদ্ভুত প্রচার বিজেপির
সুব্রত বক্সি বলেন, ‘”২০০৪ সালে এক দফায় লোকসভা নির্বাচন হয়। তৃণমূল একটি আসন পায়। ২০০৯–এ তিন দফায় ভোট হয়। আমাদের আসন সংখ্যা বেড়ে ১৯ হয়। ২০১৪ সালে পাঁচ দফায় ভোটে তৃণমূল পায় ৩৪টি আসন। এবার সাত দফা ভোটে তৃণমূল পাবে ৪২–এ ৪২”।
তৃণমূল নেতারা বলেন, “এই কয়েক বছরে যতবার ভোট হয়েছে ততবারই কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে। মানুষ কিন্তু ভরসা রেখেছে মমতা ব্যানার্জির ওপরে। সিপিএম, কংগ্রেস জোট নিয়ে নাটক করছে। যত পারে করুক। আখেরে কোনও লাভ হবে না। বিজেপি–কে মানুষ প্রত্যাখান করবে”। তারপরেও কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে অভিযোগ বুঝতে পারছেন না বিরোধীরা।
আরও পড়ুনঃ বাম কংগ্রেস বিজেপির আপত্তি নেই, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কেন মাথাব্যথা শুধু তৃণমূলের
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মমতা যেভাবে উন্নয়ন করেছেন তাতে যত বাহিনী আসুক ভোটে তার কোনও প্রভাব পড়বে না। এর পিছনে রাজনীতি আছে। ওদের নিয়ে ভয়ের কোনও কারণ আছে বলে মনে করি না। গোটা বাংলা জুড়ে মমতা কেন্দ্রের অসহযোগিতা সত্ত্বেও যে উন্নয়ন করে চলেছেন, তাতে বিরোধীরা কোনও সুবিধে করতে পারবে না”।
আরও পড়ুনঃ ২০২৫ সালের পর ভারতের অংশ হবে পাকিস্তান, ঘোষণা আরএসএস নেতার
ভোটে ১৩৫ কোম্পানি আধা সেনা কেন মোতায়েন করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রাজ্যে ভোটে নিরাপত্তা নেই অভিযোগ বাম, কংগ্রেস, বিজেপির সবার। পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার প্রমান সন্তুষ্ট করেছে নির্বাচন কমিশনকেও। তাই এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে বাংলাকে মুড়ে দিয়েই ভোট করাবে কমিশন।
তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৬ বিধানসভা জিতে আসা তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কেন এত সমালোচনা করছে, বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে আমজনতার মনেও।
আরও পড়ুনঃ মমতার প্রার্থী তালিকা নিয়ে গোপনে ক্ষোভ বাড়ছে জেলায় জেলায়
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।