শিলিগুড়িঃ সাঁতরাগাছিতে ফুটওভার ব্রীজ কান্ডের পর পরই বর্তমানে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন রেল স্টেশনের ফুটব্রীজগুলিতে সাবলিল যাতায়াতে যাত্রীরা কিছুটা হলেও আতঙ্কিত। উত্তর থেকে দক্ষিন কিংবা পূর্ব -পশ্চিম সহ গোটা রাজ্যেরই প্রায় সমস্ত জনবহুল স্টেশনগুলিতেই পর্যটক থেকে সাধারন নিত্যযাত্রীদের মধ্যে একপ্রকার ভীতির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুটওভার ব্রীজগুলি। একদিকে লাইন পারাপারের সতর্কিকরন, অন্যদিকে ফুটওভার ব্রীজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা, সবে মিলিয়ে একপ্রকার আতঙ্কের মধ্যেই ট্রেনে যাত্রায় আতঙ্কিত যাত্রীরা।
যদিও সাঁতরাগাছি কান্ডের পর শিক্ষা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে রেলওয়ে দফতর। সমস্ত জনবহুল স্টেশনগুলির ফুটওভার ব্রীজগুলির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। তবুও উত্তরবঙ্গ সহ রাজ্যের বেশ কিছু জনবহুল স্টেশনের এই ধরনের ব্রীজের হালহকিকত নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারন যাত্রীরা।
দক্ষিনবঙ্গের বিধাননগর, দমদম, নৈহাটি, ব্যান্ডেল, বর্ধমান সহ একাধিক স্টেশনের মতই উত্তরবঙ্গের অন্যতম জনবহুল স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশন ও শিলিগুড়ি জংশন স্টেশন। নিত্যদিনই এই স্টেশন দুটিতে লক্ষ লক্ষ যাত্রীদের আনাগোনা। প্রতিদিনই সেই সমস্ত যাত্রীদেরই ট্রেন ধরতে প্লাটফর্মে যাতায়াতে একমাত্র ভরসা ফুটওভার ব্রীজ।
আরো পড়ুন:সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনে ফুটব্রিজে পদপিষ্ট বহু যাত্রী
কিন্তু এনজেপি স্টেশনে মাত্র তিনটি ফুটওভার ব্রীজ রয়েছে। প্রতিদনই ট্রেন ধরতে এই তিনটি ব্রীজে দিয়েই লক্ষ লক্ষ যাত্রীদের আনাগোনা এবং ট্রেন ধরবার অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অপেক্ষা পর্যটক থেকে শুরু করে সাধারন নিত্যযাত্রীদের। তার মধ্যে একটি দিয়ে শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দারাই যাতায়াত করেন। পর্যটকরা সেই ফুট ব্রীজের কথা জানলেও ব্যবহার প্রায় করেন না বললেই চলে।
বর্তমানে পাহাড় শান্ত, ডুয়ার্সের জঙ্গলেরও পর্যটন খুলে গেছে। তারও পর বিভিন্ন পর্যটন স্থলে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক আসা যাওয়া করার ক্ষেত্রেও এই এনজেপি স্টেশনই প্রধান ভরসা। তাছাড়া দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং সহ শিলিগুড়িতেও বেশ কিছু নতুন নতুন পর্যটনস্থল হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে শিলিগুড়ি সহ গোটা উত্তরবঙ্গেই।
সে কারনেই দিন দিন যাত্রীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুন। এবং সেই কথা মাথায় রেখেই বেড়েছে ট্রেনের সংখ্যাও। উত্তর পুর্ব সীমান্তে প্রচুর নতুন ট্রেন চালু হয়েছে। আর সমস্ত ট্রেনেরই যাতায়াত এই করিডোর এনজেপি’র ওপর দিয়েই। ফলে ট্রেন ও যাত্রীর অনুপাতে ব্রীজের সংখ্যা রয়ে গেছে সেই তিনেই।
আরো পড়ুন: কেন্দ্রীয় আইবিতে ১০৫৪ মাধ্যমিক পাশ অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ
নতুন কোনো ফুটব্রীজ তো তৈরী হয়ই নি, তারপর ফুটব্রীজগুলির রক্ষনাবেক্ষনও তথৈবচ। এমনকি কোনো সংস্কারও লক্ষ করা যায় নি বিগত কয়েক বছরে। পাহাড়, ডুয়ার্স ও প্রতিবেশী রাজ্য সিকিম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড সহ সাতটি রাজ্যের পর্যটক ও সাধারন যাত্রীদের আনাগোনার কারনে অনেকটাই চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে এনজেপি মূল স্টেশন ও শিলিগুড়ি জংশনের ওপর।
কেননা, ট্রেনে করে পর্যটকরা পাহাড়, ডুয়ার্স বা সিকিম যেখানেই যান না কেন তাদের হয় এনজেপি স্টেশন আর না হলে শিলিগুড়ি জংশনে নেমে তারপর সড়ক পথে যেতে হয়। তাই এসব স্টেশনের ফুটব্রীজগুলো নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন, সংস্কার ও দেখভালের প্রয়োজনীয়তা থেকেই যায়।
রেল সুত্রে খবর, এনজেপি স্টেশনের প্রথম ফুটওভারব্রীজ তৈরী হয়েছিল গত সত্তরের দশকে। এই ব্রীজের দৈর্ঘ্য ১৯৬ মিটার এবং প্রস্থ ৩.২০ মিটার। এরপর প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ২০০৫ সালে আর একটি ফুটওভারব্রীজ তৈরী হয় যার দৈর্ঘ্য ১৮৬.৫০ মিটার ও প্রস্থ ৬.৩০ মিটার। পরবর্তীতে মালপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০১৪ সালে আর একটি ফুটব্রীজ তৈরী করা হয়। এই ব্রীজের দৈর্ঘ্য ৪২৬ মিটার ও প্রস্থ ৪.৮০ মিটার।
তবে তুলনামুলকভাবে প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুটব্রীজের প্রস্থ অনেকটাই কম। আর এই ব্রীজ দিয়েই যাত্রীদের সবচেয়ে বেশী যাতায়াত। শুধু তাই নয়, ট্রেন ধরবার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা এই পুরনো ব্রীজের ওপরই প্রতীক্ষা করেন যাত্রীরা। সেইসঙ্গে টিকিট কাউন্টার লাগোয়া হওয়ায় টিকিট কেটে সবাই সরাসরি এই ব্রীজটাই ব্যবহার করে থাকে। ফলে, এই ব্রীজেই সবচেয়ে বেশি চাপ পরে।
আর দীর্ঘ বয়সের ভারে, জীর্নতা গ্রাস করেছে এই ফুটব্রীজকে। কিন্তু তার সংস্কার কিংবা রক্ষানাবেক্ষনস্ত বা যাত্রী সুরক্ষার ক্ষেত্রে সেই তথৈবচ অবস্থা। অন্যদিকে শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনের তিনটি প্লাটফর্মের সংযোগে মাত্র একটি ফুটব্রীজই রয়েছে। এই দুই স্টেশনের ওপর দিয়ে ৪৪ জোড়া ট্রেনে লক্ষ লক্ষ যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও জংশন স্টেশনে কিন্তু ফুটওভার ব্রীজ বাড়ে নি। তারপর, এখানেও রক্ষনাবেক্ষনে সেই একই হাল।
আরো পড়ুন: সিবিআই এর নিজেদের ঝামেলা বাংলায় স্বস্তিতে রাখবে তৃণমূলকে
ফলে, সাঁতরাগাছি কান্ডের পর নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে একপ্রকার আতঙ্কের মধ্যে প্রাণ হাতে নিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। তাই যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবী পুরোনো ও প্রথম তৈরী হওয়া ফুটব্রীজটি ভেঙে নতুন করে ফুটব্রীজ তৈরী করা হোক। যাত্রীদের আরও দাবী, শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনেও নতুন আরও একটা ফুটওভারব্রীজ তৈরি করুক রেলওয়ে অথরিতি।
সেইসঙ্গে নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের দাবীও তুলেছ পর্যটক থেকে নিয়মিত যাত্রীরা। এদিকে রেল সুত্রে জানা গেছে, এনজেপি স্টেশনের পুরোনো এই ব্রীজটি ভেঙে নতুন একটি ব্রীজ তৈরী করার অনুমোদন ইতিমধ্যেই চলে এসেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে। কিন্তু কবে তার কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু এখনও জানায় নি রেলওয়ে দফতর। অন্যদিকে জংশন স্টেশন নিয়েও স্পষ্ট কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি নর্থ ইষ্ট, নর্থ ফ্রন্টিয়ার রেলেওয়ের পক্ষ থেকে।