শনিবার কাঠফাটা গরমের বিকেলে নয়া দিল্লীর তিস হাজারি কোর্ট থেকে বেরিয়ে তেজ বাহাদুর যাদব একটু ফাঁকা জায়গায় গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার দিতে কিছুতেই রাজি হলেন না। মানুষের ভিড় থেকে দূরে ফাঁকা জায়গায় যাওয়া যে তাঁর পক্ষে নিরাপদ নয় তাও তিনি জানালেন। অগত্যা ভিড় আর হট্টগোলের মাঝেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হল। শুরুতেই তেজ বাহাদুর জানিয়ে দেন এই লড়াই আসল ও নকল চৌকিদারের।
আরও পড়ুনঃ বাংলা থেকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
পাঁশুটে রঙের সাফারি স্যুট পরিহিত, বিএসএফের প্রাক্তন সেনানী, তেজ বাহাদুর যাদব এবার বারাণসী কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছেন। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি ২০১৪ সালের জানুয়ারী মাসে এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন যে বিএসএফের সেনানীদের নিয়মিত অখাদ্য খাবার দেওয়া হয়, কারণ বিএসএফের উপরমহলের দুর্নীতি।
আরও পড়ুনঃ মমতার সভা ছেড়ে চলে গেল মানুষ, মাঝপথে ভাষণ বন্ধ করে বসে পড়লেন মমতা
সেই ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পরে চারদিকে তোলপাড় পড়ে যায়, যাদব বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। যদিও ওই বছরেরই শেষে সেনা আদালতের রায়ে তাঁর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানানো হয় এবং বাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাঁকে বাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আরও পড়ুনঃ মমতাকে বুঝতে আমারও ভুল হয়েছিল, মানুষের তো হবেই, বললেন মোদী
বিএসএফের ভিতরের দুর্নীতির প্রতিবাদ করে ব্যর্থ হয়ে, যাদবের মনে হয় যে একমাত্র সংসদে গিয়ে যদি সব কিছু বলা যায়, তাহলেই এই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব। তাঁর ভাষায়, “আমি কোনদিনই ভাবিনি যে আমি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসব। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর ভিতরের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনতে গিয়ে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে কোনও গুরুত্বই দিলেন না। এমনকি ন্যুনতম কোনও ব্যবস্থাও নিলেন না”।
আরও পড়ুনঃ মমতার সভা আলো করে বসে দাগী সমাজবিরোধী, নির্বাচন কমিশনে গেল বিরোধীরা
লোকসভায় ৫৪৩টি কেন্দ্র থাকতে বারাণসী কেন বেছে নিলেন যাদব? “প্রধানমন্ত্রী প্রথমবার সেনাবাহিনীর রাজনীতিকরণ শুরু করেছেন। এরকম আগে কখনো হয় নি। তাই বারাণসী থেকে প্রার্থী হয়ে আমি তাঁকে প্রশ্ন করতে চাই কেন তিনি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করছেন”। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত লোকসভা নির্বাচনে বারাণসী থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারেও তিনি ওই আসন থেকে লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
আরও পড়ুনঃ অর্জুন সিংহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ চার কাউন্সিলর সহ কয়েক হাজার তৃণমূল কর্মীর
সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা এবং বাহিনীর ভিতরের দুর্নীতি মূল প্রতিপাদ্য হলেও আরও বেশ কিছু নির্দিষ্ট ইস্যু নিয়েও সরব হওয়া প্রয়োজন বলে তাজ বাহাদুর যাদব মনে করেন। তাঁর মতে, দেশ রক্ষার কাজে কোনও বিএসএফ জওয়ানের মৃত্য হলে তাঁকে শহীদ আখ্যা দেওয়া হয়, কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় তাঁকে কখনও সরকারীভাবে কোনও ভালো কাজের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। এমনকি তাঁদের ঠিকমত খাবারও দেওয়া হয় না।
অর্ণব উধাও রহস্যে আরও পড়ুনঃ নোডাল অফিসার স্বামীর উধাও হওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তোপ দাগলেন স্ত্রী অনিশা
বিএসএফের কার্যপদ্ধতির মধ্যে কোনও ফাঁকফোকর আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তেজ বাহাদুর কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তবে তিনি জানান যে, সীমান্তে যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে তা ঠিকমত দেওয়া হয় নি। তার সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গিরা। ওপরতলার রাজনীতিক এবং বিএসএফের ওপর মহলের ঔদাসিন্যের জন্যই অনুপ্রবেশকারীরা এদেশে প্রবেশ করতে পারছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, বাহিনীর জওয়ানদের একটানা ১৮ ঘন্টারও বেশি কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
আরও পড়ুনঃ দুদফায় ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলায় তৃতীয় দফায় সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী
যাদব জানান যে, তাঁর ভিডিও প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাহিনীর জওয়ানদের কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা সকলকে জানানো। যদি তিনি বুঝতে পারতেন, যারা ক্ষমতায় আছেন তাঁরা দুর্নীতিকেই সমর্থন করবেন এবং তিনি তাঁর চাকরি খোয়াবেন, তাহলে তিনি মোটেই এমন কাজ করতেন না।
প্রসঙ্গত ২০১৭-র এপ্রিলে সামরিক আদালত তেজ বাহাদুর যাদবের বিসেওএফ থেকে বহিষ্কার করার রায়ে জানায়, “তেজ বাহাদুর যাদব সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও প্রকাশ করে অখাদ্য খাবার পরিবেশনের যে অভিযোগ এনেছেন, তা ভিত্তিহীন, এবং এই ধরণের অভিযোগের ক্ষেত্রে বাহিনীর যে নিয়ম কানুন আছে তা তিনি লঙ্ঘন করেছেন”।
আরও পড়ুনঃ দার্জিলিংয়ে আবার ভোট ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন, ১৯ মে পাহাড়ে ফের ভোট
যাদবকে যখন সশস্ত্র বাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয় তখন তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। তার ওপর এবছর গোড়ার দিকে তিনি তাঁর ছেলেকে হারান এবং তাঁর বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। “যে কঠিন সময়ই আসুক না কেন, একজন সেনার তা মোকাবিলা করার মত মানসিক দৃঢ়তা থাকে, কারণ সে জাতিকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।”
যাদব দাবি করেন, তিনি তাঁর দাবির সপক্ষে শুধু সাধারণ মানুষের সমর্থনই পাচ্ছেন তাই নয়, তাঁর প্রচারের জন্যও সাধারণ মানুষ অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। এর জন্য তাঁকে কোনও রাজনৈতিক দলের সাহায্য নিতে হচ্ছে না। এখন দেখার ভোট বাক্সে তেজ বাহাদুরকে কতটা সমর্থন করবেন বারানসীর মানুষ।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।