The News বাংলা, নিউ দিল্লী: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর উর্জিত প্যাটেলের পদত্যাগ নিয়ে সমস্যার মধ্যেই ভালো খবর নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে। ক্রিশ্চিয়ান মিশেলের পর আরও একটা বড় সাফল্য পেল মোদী সরকার। বিজয় মালিয়াকে ভারতে প্রত্যর্পণে আর কোনও বাধা থাকল না। বিজয় মালিয়াকে ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশ নিয়ে সোমবারই চূড়ান্ত রায় দিল লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। শুনানি শেষে বিচারক তাঁর রায়ে জানান, বিজয় মালিয়াকে ভারতের হাতেই তুলে দেওয়া উচিৎ।
ব্রিটেনের আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত সরকার। তবে এই রায় চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ থাকছে বিজয় মালিয়ার। মালিয়াকে প্রত্যর্পণে লন্ডনে রওনা দিয়েছে সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা এ সাই মনোহরের নেতৃত্বে সিবিআই এবং ইডির যৌথ একটি দল। গত সপ্তাহেই দুবাই থেকে ভারতে আনা হয়েছে আরেক অভিযুক্ত ক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে।
আরও পড়ুনঃ রাহুলের ‘রাফায়েল’ অ্যাটাকের জবাবে মোদীর হাতে ‘মাইকেল’
তবে, এখনই তাঁকে ভারতে ফেরানো হবে কিনা সেই নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। রায় ঘোষণার পর ১৪ দিন সময় পাবে বিজয় মালিয়া উচ্চ আদালতে রায়ের পুনর্বিবেচনার জন্য।
ভারতে ১৩টি ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ৯,০০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পরিশোধ না করেই ২০১৬ সালের ২ মার্চ লন্ডনে গা ঢাকা দেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা কিংফিশার এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ গ্রুপের মালিক বিজয় মালিয়া।
আরও পড়ুনঃ ‘অনুগ্রহ করে সব টাকা নিন’ বিজয় মালিয়ার টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত
এর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মালিয়াকে ‘পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী’ ঘোষণা করে তাকে ভারতে ফেরত পাঠানোর জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানায় ভারত সরকার। সেই অনুরোধের ভিত্তিতে গত বছর এপ্রিল মাসে লন্ডনে মালিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে, শীঘ্রই তিনি জামিনে মুক্তি পান।
এর পর গত বছর ডিসেম্বর থেকে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মালিয়ার বিচার শুরু হয়। ভারত প্রত্যর্পণের দাবি তুললে, মালিয়া অভিযোগ করেন স্বাস্থ্যকর জেল নেই এ দেশে। বাধ্য হয়ে মালিয়ার জন্য বিশেষ জেলের ব্যবস্থার আশ্বাসও দেওয়া হয় ভারতের তরফে।
আরও পড়ুনঃ মোদী সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় পদত্যাগ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের
কোটিপতি বিজনেস টাইকুন বিজয় মালিয়া আগেই দেশে ফিরে এসে দেশের আইনের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন বলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রে জানা গিয়েছিল। এবার সমস্ত ব্যাংকের সব লোন শোধ দেবারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
অর্থ প্রতারণা মামলার তদন্ত চালানো ইডির আধিকারিকদের ইঙ্গিত অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আইন তৈরি করে বিজয় মালিয়ার সমস্ত সম্পত্তিকে বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্তের ফলেই এই সুর বদল।
আরও পড়ুন: মার্চে বন্ধ দেশের অর্ধেক এটিএম কি মোদীর নোটবন্দীর কুফল
এই নতুন আইন অনুযায়ী, কোনও অভিযুক্ত দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া যাবে। আগেই এই আইনের আওতায় বিজয় মালিয়কে নিয়ে এসে তাঁকে ‘পলাতক’ বলে ঘোষণা করার অনুরোধ ইডি করেছিল আদালতের কাছে। সারা দেশে যত ব্যাঙ্ক রয়েছে, সব ব্যাঙ্কেই তাঁর ঋণের পরিমানটা চোখে পড়ার মতো। সংখ্যাটা সবই কোটির ঘরে।
আরও পড়ুন: মোদীর নোটবন্দীর ২ বছর পূর্তিতে আশা নিরাশা
একনজরে আরও একবার বিজয় মালিয়ার ঋণের বহরঃ-
১) স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া- ১.৬০০ কোটি টাকা ধার।
২) পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক- ৮০০ কোটি টাকা ধার।
৩) আইডিবিআই- ৮০০ কোটি টাকা ধার।
৪) ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া- ৬৫০ কোটি টাকা ধার।
৫) ব্যাঙ্ক অফ বরোদা- ৫৫০ কোটি টাকা ধার।
৬) ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া- ৪৩০ কোটি টাকা ধার।
৭) সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া- ৪১০ কোটি টাকা ধার।
৮) ইউকো ব্যাঙ্ক- ৩২০ কোটি টাকা ধার।
৯) কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক- ৩১০ কোটি টাকা ধার।
১০) স্টেট ব্যাঙ্ক অফ মহীশূর- ১৫০ কোটি টাকা ধার।
১১) ইন্ডিয়ান অভারসিস ব্যাঙ্ক- ১৪০ কোটি টাকা ধার।
১২) ফেডেরাল ব্যাঙ্ক- ৯০ কোটি টাকা ধার।
১৩) পঞ্জাব সিন্ধ ব্যাঙ্ক- ৬০ কোটি টাকা ধার।
১৪) অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক- ৫০ কোটি টাকা ধার।
আরও পড়ুনঃ বাংলায় ২৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ, নাসিকে দাম না পেয়ে আত্মহত্যা
ভারত কূটনৈতিক স্তরে যেভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে, মালিয়ার প্রত্যর্পণে পক্ষে রায় আসার সম্ভবনা ছিল বলেই মনে করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সেটাই সত্যি হল। এই আভাস বুঝেই কি ১০০ শতাংশ ঋণ মিটিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়ে টুইট করেছিলেন মালিয়া? জল্পনা যাই হোক না কেন লোকসভা নির্বাচনের আগে মালিয়াকে দেশে ফেরাতে পারলে রাজনৈতিক মঞ্চে মোদী সরকার বাড়তি অক্সিজেন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর উর্জিত প্যাটেলের পদত্যাগ নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার একটা জবাবও এল সরকারের হাতে।