চুমু খাওয়া কি অপরাধ? সেটা হয়ত নয়। কিন্তু সেটাই যদি হয় ভরা ক্লাসরুমে সবার সামনে? তাহলে? আর এই অপরাধ করেই স্কুল থেকে বহিষ্কার ছয় ছাত্র ছাত্রী। শিবপুর বিই কলেজ মডেল স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের কীর্তি দেখে তাজ্জব গোটা বাংলা।
সিসি ক্যামেরা আছে তো কী! সে কি আর বাধ সাধে চুম্বনে। সিসিটিভি ক্যামেরাকে উপেক্ষা করে ক্লাসের মধ্যেই দেদার চুম্বনে মাতল ছয় ছাত্রছাত্রী। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। শেষমেশ চুমু খাওয়ার অপরাধে বহিষ্কৃত হতে হল। বাধ সাধল সেই সিসিটিভির ফুটেজই। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা হাওড়ার শিবপুর বিই কলেজ মডেল স্কুলে। ঘটনায় ৬ শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মোদীর মাস্টারস্ট্রোকে দেশ পেতে পারে প্রথম মহিলা বাঙালি সিবিআই প্রধান
ক্লাসে একে অপরকে জড়িয়ে উষ্ণ চুম্বন ছাত্র-ছাত্রীদের। ভরা ক্লাস রুম। তাতে কী! ছয় ছাত্রছাত্রী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে আরম্ভ করেছিল প্রেমিক প্রেমিকারা। সিসিটিভি ক্যামেরাকে আড়াল করা হয়েছিল বইয়ের ব্যাগ ডাঁই করে। তবু প্রযুক্তিকে হার মানাতে পারল না ছাত্র-ছাত্রীরা। লজ্জার মাথা খেয়ে তারা একে অপরকে জড়িয়ে চুমু খেয়েছিল ক্লাসভর্তি পড়ুয়াদের সামনেই।
পুজোর ছুটির ঠিক আগে ঘটেছিল চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা। তারপর ছয় ছাত্রছাত্রীর এই চুম্বন কীর্তি ফাঁস করে দিয়েছিল ক্লাসেরই দুই ছাত্র। ক্লাস টিচারের সামনে জানিয়ে দিয়েছিল ছয় সহপাঠীর বে-শরম কাণ্ডকারখানার কথা। তারপরই নড়েচড়ে বসে স্কুল কর্তৃপক্ষ। খতিয়ে দেখা হয় সিসিটিভি ফুটেজ। সেখানেই মেলে অকাট্য প্রমাণ।
আরও পড়ুনঃ মোদীর বিরুদ্ধে ইন্দিরা তাস খেলতে রাহুলের কংগ্রেসে প্রিয়াঙ্কা
ঘটনাটি ঘটেছে গত বছরের অক্টোবর মাসে দুর্গাপূজার সময়। সে সময় শ্রেণীকক্ষের মধ্যেই নবম শ্রেণীর তিনজন ছাত্র ও তিনজন ছাত্রী একে অপরকে চুমু খায় বলে অভিযোগ। এ সময় অন্য সহপাঠীরা নিষেধ করলেও তা কানে দেয়নি তারা। এরপর অন্য শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়েই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের ভিত্তিতে ক্লাসরুমের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়।
এরপর অভিভাবকদের ডেকে পাঠিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অভিভাবকরা ভালো ছেলেমেয়েদের কীর্তিকলাপ স্বীকারই করতে চায়নি। তারপর তাঁদের দেখানো হয় সিসিটিভি ফুটেজ। তা দেখার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই মেনে নিয়েছেন অভিভাবকরা। সেইসঙ্গে সহানুভূতির জায়গা থেকেও ভেবে দেখার কথা জানানো হয়েছে। আপাতত ছয় ছাত্রছাত্রীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনঃ জন্মদিনে নেতাজি সুভাষের মৃত্যুদিন নিয়ে ছেলেখেলা রাহুলের কংগ্রেসের
স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেওয়ার কারণেই সেই সময় অভিযুক্ত ছাত্রছাত্রীদের শাস্তি কার্যকর করা হয়নি। পরীক্ষার পরে ওই ছয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযুক্ত ওই ছয় শিক্ষার্থী ইতিমধ্যেই পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ইতিমধ্যেই চার শিক্ষার্থী অন্য স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেলেও দুইজন এখনও কোনো স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি বলেই খবর। সম্প্রতি সেই দুই শিক্ষার্থীর পরিবার এসে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার সিদ্ধান্তের আবেদন জানান।
আরও পড়ুনঃ রাজ্যের হাতে টাকা নেই বাজারে ধার, তারপরেও বিধায়কদের ভাতা বাড়ছে
এই ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস দত্ত জানান, ‘প্রত্যেক স্কুলেরই একটা নিয়মকানুন থাকে। তার বাইরে গিয়ে আমরা কোন কাজ করতে পারি না। আমরা মানবিকতার খাতিরে অভিযুক্তদের নবম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে দিই। সেই পরীক্ষায় ভালভাবে পাসও করে তারা। হিসাবমতো তারা এখন দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী। এবার পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের আর স্কুলে রাখা সম্ভব নয়। আমরা তাদের টিসি দিয়ে অন্য স্কুলে যাতে ভর্তি হতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছি’।
আরও পড়ুনঃ ব্রিগেড থেকে ফিরেই ভোলবদল, মমতা নয় রাহুলকেই প্রধানমন্ত্রী চাইলেন নেতারা
তবে, স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে অভিভাবকদের অনেকেই ‘লঘু পাপে গুরুদণ্ড’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তাদের একটি অংশের মতে, সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা, আর ঠিক তার আগে স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের ‘টিসি’ দেওয়াটা বিরাট বড় ভুল। একই অভিমত হাওড়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শান্তনু সিংহ। তিনি বলেন ‘এতটা কঠোর না হওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে আবেদন জানিয়েছেন। তবে তাতেও কোন ফল মেলেনি’।
অভিভাবকরা আবেদন করেন হাওড়ার বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী অরুপ রায়ের কাছেও। তবে, স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে কার্যত সমর্থন করেছেন মন্ত্রী অরূপ রায়। বুধবার মন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সেখানে আমার কিছু করার নেই’।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।