The News বাংলা: ‘শচীন তেন্ডুলকরের কোচ’ রমাকান্ত আচরেকার প্রয়াত। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। ক্রিকেটের ‘ভগবান’কে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন ‘দ্রোণাচার্য’ কোচ। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি।
শচীন তেন্ডুলকরের ‘ক্রিকেট গুরু’ রমাকান্ত আচরেকার প্রয়াত। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। বুধবার মুম্বইয়ে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। খবর শুনে মুম্বাই ক্রীড়া জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকের ছায়া গোটা তেন্ডুলকর পরিবারে।
১৯৩২ সালে রমাকান্ত আচরেকারের জন্ম। শচীন তেন্ডুলকরকে সম্পূর্ণ নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন ‘দ্রোণাচার্য’ কোচ। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। হারিয়েছিলেন বাকশক্তি। নিয়মিত কোচের খোঁজ খবর নিতেন শচীন। শচীন ছাড়াও প্রভিন আমরে, চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত, সঞ্জয় বাঙ্গার, রমেশ পাওয়ার সহ আরও অনেক ক্রিকেটারকে তিনি তৈরি করেছিলেন।
তাঁর প্রতিটি জন্মদিনে ছুটে যেতেন তাঁর প্রিয় ছাত্র শচীন। আচরেকারকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরির কাজে হাত দেন শচীন। রমাকান্ত আচরেকারের মৃত্যুর খবরে ক্রীড়া মহলে শোকের ছায়া ছড়িয়েছে।
‘গুরু’ নাকি কখনোই শচীন তেন্ডুলকরের খেলার প্রশংসা করেন নি। কখনোই বলেন নি ‘ওয়েলডান’ বা ‘ওয়েলপ্লেইড’। ‘ভালো খেলেছ’—এই কথাটা শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিলেন তেন্ডুলকর। নিজের বিদায়ী ভাষণেও সেই কথা বলেছিলেন তিনি। শচীনের অবসরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গুরুর ফোন পেয়ে যান তেন্ডুলকর।
শুনলেন স্যার বলছেন, ‘কনগ্র্যাচুলেশনস ফর ভারতরত্ন’। একটু থেমেই বললেন, ‘ওয়েলডান ফর ইওর লং জার্নি, ‘ওয়েল প্লেইড মাই বয়।’
খেলোয়াড়ি জীবনে সারা পৃথিবীর প্রশংসার সাগরে ভাসলেও গুরুর কাছ থেকে কখনোই প্রশংসা পাননি তেন্ডুলকর। স্যার আচরেকার ভেবেচিন্তেই শিষ্যকে প্রশংসা থেকে দূরে রেখেছিলেন। পাছে, অহংবোধ জন্ম নেয় তাঁর মধ্যে! যদি তেন্ডুলকর আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, পরিশ্রম করা কমিয়ে দেয়।
বিদায়ী ভাষণে সে কথাই উল্লেখ করে তেন্ডুলকর বলেছিলেন, ‘আর যেহেতু মাঠেই নামব না, স্যার নিশ্চয়ই এখন আমাকে বলতে পারেন, ‘ওয়েল প্লেইড।’ ‘অর্জুনের’ সেই চাওয়া পূরণ করে দেন ‘দ্রোণাচার্য’।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তেন্ডুলকরের বিদায়ী বক্তৃতার সময় টেলিভিশনের সামনেই ছিলেন স্যার আচরেকার। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই প্রবীণ ক্রিকেট প্রশিক্ষক তখন বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসেই শিষ্যের আবেগময় ভাষণে ভেসেছিলেন।
নিজের সম্পর্কে ওই কথাটা শোনার পর থেকেই নাকি ছাত্রকে একটা ফোন করার জন্য ছটফট করছিলেন তিনি। গুরুর প্রশংসা পেয়ে তেন্ডুলকর বলেছেন, ‘আমার জীবন এত দিনে পূর্ণতা পেল। স্যারের কাছ থেকে প্রশংসা শুনেছি। আমার আর কী লাগে!’
তেন্ডুলকরের অবসর সিদ্ধান্তটি অবশ্য পছন্দ হয়নি আচরেকারের। মেয়ে কল্পনা জানিয়েছেন, ‘বাবা মনে করতেন তেন্ডুলকর আরও দুই-এক বছর খুব ভালোভাবেই খেলে যেতে পারতেন।’
তাঁর ‘সেরা ছাত্র’ হয়ে গেছেন অনেক বছর আগেই। কিন্তু আচরেকার বিশ্বাস করতেন, শচীন ক্রিকেটেরই এক বিরল প্রতিভা। নয়তো কোনো ক্রিকেটারের পক্ষেই ২৪ বছর ফিটনেস ধরে রেখে খেলে যাওয়া সম্ভব নয়।
আচরেকার চাইতেন না তাঁর ছাত্র খেলা ছেড়ে রাজনীতি করুক। প্রাক্তণ ভারতীয় অলিম্পিয়ান মিলখা সিং অনেক আগেই তেন্ডুলকরকে ভারতের ‘ক্রীড়ামন্ত্রী’ বানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু আচরেকার চাইতেন না তেন্ডুলকরকে এমন কোনো দায়িত্ব দেওয়া হোক।
তিনি চাইতেন, তাঁর ছাত্র ভবিষ্যতের ক্রিকেটারদের তৈরি করুক। ক্রিকেট প্রশাসনে নিজের ভূমিকা রাখুক। রাজনীতির নোংরা তাঁকে কখনো যেন ছুঁতে না পারে, বৃদ্ধ আচরেকার বাড়িতে বসে বরাবর সেই প্রার্থনাই করে যেতেন। তবে রাষ্ট্রপতির অনুরোধে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন শচীন।
২রা জানুয়ারীর পর থেকে অবশ্য তিনি অন্য কোথা থেকেও কড়া নজরে রাখবেন তাঁর প্রিয় ছাত্রকে। শচীন তেন্ডুলকর এর গোটা পরিবার ভেঙে পরেছে তাঁর গুরুর মৃত্যুতে। খবর পাবার পরেই মুম্বাইয়ের গোটা ক্রিকেট মহল এখন মুম্বাই ক্রিকেটের ‘সেরা গুরুর’ বাড়ির সামনে।