পাল্টেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শত্রু। একসময়ের শত্রু বামেরা এখন আর বন্ধু না হলেও শত্রু নয়। প্রধান শত্রু এখন বিজেপি। আর তাই বাংলার মাটিতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হেলিকপ্টার নামার অনুমতি নেই। অথচ প্রাক্তণ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর গাড়িকে পাইলট কার দিয়ে সার্জেন্ট পাহারায় ব্রিগেডে আনল সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। একই বাংলায় মা মাটি মানুষ সরকারের দুই নীতি কেন? উঠেছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুনঃ পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআইকে ঢুকতে বাধা কলকাতা পুলিশের
মমতার প্রধান শত্রু কি পাল্টেছে? আগে প্রধান শত্রু ছিল বামেরাই। বামেদের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন মমতার প্ৰধান শত্রু। প্রতিদিন বুদ্ধের সমালোচনা না করে দিন শেষ করতেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই ছিল বামেদের অভিযোগ। আর এখন সেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যকে সার্জেন্ট, পাইলট কার, আগে পেছনে সিকিউরিটি ভেহিকেলের সুরক্ষা দিয়ে তাঁর বাড়ি থেকে বিনা বাধায় সোজা ব্রিগেডে অবধি নিয়ে আসার সৌজন্য দেখাল তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার। একই দিনে যোগী আদিত্যনাথের হেলিকপ্টারকে দু জায়গায় ল্যান্ডিং পারমিট দেওয়া হয়নি এই বাংলাতেই।
রাজনৈতিক সৌজন্য অবশ্যই মমতার ভাল উদ্যোগ, বলছে রাজনৈতিক মহল। তবে রবিবার মমতা যে সৌজন্য দেখালেন সেই রাজনৈতিক সৌজন্যতা কি শত্রু পরিবর্তন হয়েছে বলে? প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি শাসিত রাজ্যের কোনো মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে কেন এই রাজনৈতিক সৌজন্য দেখানো হয়না? কেন এখানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব দেবের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হেলিকপ্টারকে ল্যান্ডিং পারমিট দেওয়া হয়না? কেন এই বাংলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার ও হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দিতে এত টালবাহানা করে রাজ্য প্রশাসন? প্রশ্ন বিজেপি নেতৃত্বের।
রবিবারই বাংলার দু দুটি জায়গায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হেলিকপ্টারকে ল্যান্ডিং পারমিট দেয়নি এই মমতার সরকারই। অন্যদিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সৌজন্য দেখাল তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার। একই সরকারের দ্বিমুখী নীতি কেন? উঠেছে প্রশ্ন।
একসময় বিজেপি সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় রাজ্যে তাঁর প্রধান শত্রু ছিল বামেরাই। এই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এরই প্রতিদিন সমালোচনা করতেন মমতা। ২০১১ তে পরিবর্তনের সরকার আসার পরেও বাম এবং বুদ্ধই ছিলেন মমতার প্রধান টার্গেট।
এখন সময় পাল্টেছে। বাম বুদ্ধ এখন আর প্রধান শত্রু নয়। নিজের বক্তৃতায় সবসময় ৩৪ বছরের সমালোচনা করার পুরোনো অভ্যেস শেষ ৬ মাসে পাল্টেছে মমতার। এখন তীর মোদী-যোগীর দিকেই। কিন্তু রাজনৈতিক সৌজন্য তো সবার ক্ষেত্রেই এক থাকার কথা। তাহলে বামের জন্য সৌজন্য আর বিজেপির জন্য আলাদা কেন? রাজনৈতিক মহলেই উঠেছে প্রশ্ন।
তবে তৃণমূলের তরফ থেকে সব অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মমতা সবসময় রাজনৈতিক সৌজন্যে বিশ্বাসী বলেছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে এই নিয়ে মমতার সমালোচনা করতে ছাড়েন নি রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছেন, “বাংলার মানুষ সব দেখছে। কারা কার বন্ধু আর কারা কার শত্রু”। সব মিলিয়ে মমতার রাজনৈতিক সৌজন্যই এখন বাংলার রাজনীতি প্রিয় মানুষের প্রধান চর্চার বিষয়।